Market
সত্যিই, ভারতের জন্য এ এক প্রশস্ত সময়। একদিকে যেমন জাপানের মত মজবুত অর্থনীতির দেশ আগামী পাঁচ বছরে ভারতে ৩.২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তেমনই অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও ভারতে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শিক্ষা, খনিজ পদার্থ, উন্নত প্রযুক্তির মত একাধিক খাতে অস্ট্রেলিয়ার এই বিনিয়োগ থাকবে। কিন্তু এই সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেল রফতানির লক্ষ্যমাত্রা। একইসঙ্গে কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হল আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন!
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, এই অর্থবর্ষের শেষেই ভারত রফতানিতে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে। কিন্তু সেই রেকর্ড তৈরি হয়ে গেল অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগেই। ভারত রফতানিতে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলল। জানা গিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে যেখানে ভারতে রফতানির অঙ্কটা ছিল প্রায় ২৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থবর্ষে সেই রফতানি বাণিজ্যে ভারত পেরিয়ে এলো ৪০০ বিলিয়ন ডলারের গণ্ডি। হিসেব বলছে, ভারত প্রতি ঘণ্টায় রফতানি করেছে ৪৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। প্রতিদিন রফতানি করা হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে ভারত। যার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পেট্রোলিয়াম পণ্য, জৈব এবং অজৈব রাসায়নিক, ফার্মাসিউটিকালস পণ্য, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য এবং জেমস সহ গয়না। কিন্তু ভারতের কাছে এই অ্যাচিভমেন্ট সম্ভব হল?
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কমে আসার পরে ভারত নিজের শিল্পক্ষেত্রগুলিকে আবারও জোর কদমে চালু করে দেয়। কিন্তু বিশ্ববাজারে অতিমারির প্রভাব ছিল অব্যাহত। সাপ্লাই চেন ব্যহত হওয়ায় ভারত নিজেই চাইছিল বিশ্ববাজারে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। সেইমত ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্যদিকে চিনের সঙ্গে ভারতের মনোমালিন্য আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করে। প্রধানমন্ত্রী চিনের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমানোর ব্যপারে জোরদার হন। ফলে রফতানিতে রেকর্ড তৈরির জন্য ভারত কিছুটা মুখিয়ে ছিল। খুঁজছিল সুযোগ। অতিমারির ধাক্কা সামলে বিশ্ব বাজার যখন ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে, পণ্য আমদানি-রফতানির পথ অনেকটা মসৃণ হয়ে যায়, ঠিক তখনই সেই সুযোগ কাজে লাগায় ভারত।
ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প তো বটেই। এমনকি স্টার্ট আপ সংস্থাগুলিকেও এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়। রফতানি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, ভারত রফতানির জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। যার মধ্যে অন্যতম হল সব বিভাগগুলির একসঙ্গে এগিয়ে আসা। বলা হচ্ছে, ভারত ২০০টি দেশে পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নেয়। দেশের রাজ্য সহ জেলা স্তর থেকেও পণ্য বিদেশে রফতানির জন্য পাঠানো শুরু হয়। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে এই সাফল্যের ছবিটা সবার সঙ্গে শেয়ার করেন নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে। তার জন্য কৃষক, তাঁতি, এমএসএমই সেক্টর সহ সকল রফতানিকারকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
এখানেই বলে নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্বমঞ্চে রফতানি বাণিজ্যে এগিয়ে রয়েছে আরও কয়েকটি দেশ। আমেরিকা, চিন, নেদারল্যান্ড, বাংলাদেশ এবং আরব এমিরেটস। সেই তালিকায় যে ভারতের নাম একেবারে সামনের সারিতে বসল সেই নিয়ে তেমন আর দ্বিধা থাকার কথাই নয়।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ