Trending
যতই বলুন বিশ্বগুরু, দুশ্চিন্তা এবার শুরু। ইন্দো-চিনি ভাই ভাই, সেই প্রবাদ বাই-বাই। ভারতের চক্ষুশূল চিন। আর সদাহাস্য শিংপিং-এর চক্ষুশূল হয়েছে ভারত। তাও ভারতের পাশে মেরুদণ্ড সোজা রেখে দাঁড়িয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু এবার যা দেখা গেল, তা সত্যিই যথেষ্ট দুশ্চিন্তার। কারণ আমি বলব না। শুনে নিন নিজের কানে।
(রুশ-পাকিস্তান জিন্দাবাদ)
পরিণতি কোন দিকে এগোচ্ছে বুঝতে পারছেন? ভারতের পাশ থেকে ধীরে ধীরে নিজের কাঁধ সরিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া! তাহলে কি এবার রাশিয়ার হাত পাকিস্তানের মাথায়? বিষয়টা কেমন ঘুরে যাচ্ছে না? ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করার পর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমি দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আর ফ্রন্টফুটে ইউরোপকে সাহায্য করেছে বিশ্বনেতা আমেরিকা। তখন ইউরোপের পাশে না-দাঁড়িয়ে, আমেরিকার কথা না-শুনে রাশিয়াকে ইকোনমিকালি সেই সময় রেড ভলান্টিয়ারদের মত সাহায্য করেছে ভারত। ব্যারেল ব্যারেল তেল কেনার জন্য ভারত চিরতরে উঠে পড়ে রাশিয়ার গুডবুকে। শুধু তাই নয়। ভারতের জন্য বিদেশনীতিতেও পরিবর্তন নিয়ে আসে ক্রেমলিন। কিন্তু এবার মনে হয় ভেবে দেখার সময় এসে গেছে। ভারতের বাজার গোটা পৃথিবীর কাছে অত্যন্ত লোভনীয়। কিন্তু তাই বলে, রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে ভারত পড়বে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে। কারণ ওপরে চিন-রাশিয়া আর নিচে পাকিস্তান। ভারতের অত্যধিক আমেরিকা প্রীতি এবং ইউরোপের সঙ্গে মাখামাখি- বিষয়টা নেক নজরে দেখছে না ক্রেমলিন এবং বেজিং। তাই নয়া দিল্লির ওপর হয়ত চটে আছে দুটো দিক।
আসলে বিষয়টা হচ্ছে, ভারত বিশ্বগুরু হবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তার জন্য বিদেশের মাটিতে মেরা ভারত মহান প্রমাণের প্রয়োজন। যদি এনআরআই-দের কথা ধরি, তাহলে দেখব, অধিকাংশ ভারতীয় চাকরি বা ব্যবসার জন্য আমেরিকা, ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়াতেই পাড়ি দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রয়োজন রয়েছে এই বিপুল সংখ্যক এনআরআই-দের সঙ্গে নিয়ে চলা। অবশ্যই ভোটব্যাঙ্ক। কিন্তু ভারত যদি নিজের বিদেশনীতির কথা না-ভেবে, অথবা অতি কনফিডেন্স নিয়ে যদি এভাবেই মাঠে নামে, তাহলে কে বলতে পারে যে অদূর ভবিষ্যতে হয়ত ভারতের জন্য বিপদ তৈরি করে দেবে খোদ রাশিয়া-চিন এবং পাকিস্তান! এই আশঙ্কা অমূলক নয়। ভারত আজ সাড়ে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেঞ্চমার্ক ক্রশ করেছে। বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি। তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। ভারত ইরানের সঙ্গে দোস্তি করছে। ইউএই-র সঙ্গে দোস্তি করছে। এদিকে রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে। রাশিয়ার থেকে যেভাবে কম দামে তেল পাচ্ছে, তার থেকেও কম দামে চিনকে তেল দিচ্ছে রাশিয়া। এবার পাকিস্তানের করাচি বন্দরে পৌঁছে গেল রাশিয়া থেকে যাওয়া প্রথম তেল ভর্তি জাহাজ। যার মানেটা সাফ। পাকিস্তানে যে দীর্ঘদিন ধরে তেলের ক্রাইসিস ছিল, তেলের দাম সাধারণ মানুষের গলার কাঁটা হয়ে গেছিল, সেই তেলের দাম অনেকটা কমতে পারে। আর যেভাবে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী লাভরভ পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাতটা বাড়িয়ে দিলেন তারপর ভারতের জন্য সেটা তো দুশ্চিন্তার বটেই।
মুশকিল হচ্ছে, বর্তমান মোদী সরকার যেন একটু বেশিই কনফিডেন্ট। ঐ ওভার কনফিডেন্সের কারণেই এবার আমেরিকা বা ইউরোপের ট্র্যাপে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছে না তো? এটা ঠিক যে এখন হচ্ছে মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড। ব্যবসা, বাণিজ্য সব দেশের সঙ্গে সব দেশ করবে। ভারতের পক্ষ থেকে সেই বার্তাও বহুবার বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যদি ভালো করে লক্ষ্য করা যায়, তাহলে দেখা যাবে, আমেরিকা এবং পশ্চিমি দেশগুলোতে কিন্তু মন্দার ছায়া পড়েছে। ডলার নির্ভরতা কমানোর জন্য চলছে ডি-ডলারাইজেশনের ধুম। চিনের ইউয়ান এখন সেই জায়গা দখল করতে চাইছে। আর চিনের এই সিদ্ধান্ত হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন পুতিন। ক্রেমলিন এবং বেজিং-এর মধ্যে ব্যবসা হচ্ছে ইউয়ানে। সেই ফান্ড রাশিয়াকে বিপুল অস্ত্র জোগানে সাহায্য করছে। ফলে ইউক্রেনের পাশে যতই পশ্চিমি অস্ত্র দাপট দেখানোর চেষ্টা করুক না কেন, আসলে রাশিয়া এবং চিনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজ ইউক্রেন ছাড়খাড়। এই প্রচেষ্টায় ভারত ডিপ্লমেটিক ওয়েতে নিজের অবস্থান দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু ঐ- দু-নৌকোয় পা দিয়ে কী চলা সম্ভব? ব্যবসার বিষয়টা অন্য। কিন্তু জিওপলিটিক্যাল মানচিত্রে চিন এবং রাশিয়ার না-পসন্দ ইউরোপ, আমেরিকা। ভারত নিজের ব্যবসা দুর্দান্ত গতিতে চালাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আমেরিকা এবং ইউরোপের অতি কাছে যাবার চেষ্টাও যে ভারত করছে, সেটা দেখতে পাচ্ছে ক্রেমলিং এবং বেজিং-এর দুই সর্বময় কর্তা। সুতরাং দিল্লির ডানা ছাঁটার জন্য কি তাহলে ঘুরিয়ে একটা থ্রেট পৌঁছে দিল না রাশিয়া? আমেরিকার কংগ্রেস অধিবেশনে মোদীর ডাক, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বুলেট ট্রেনের মত গতি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মুখে মোদী বন্দনায় বারবার ‘বস’- এগুলো কি আসলে ভারতের ভবিষ্যৎকে একটু বেশি চিন্তার মধ্যে ফেলছে না? সাময়িকভাবে মোদী বন্দনা বিশ্ব মানচিত্রে ভারতকে দুর্দান্ত একটা বুস্টআপ দিয়েছে। ইকোনমি তড়তড় করে এগোচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিদেশের নেতামন্ত্রীরা। কিন্তু ভারতের জন্য সেটা কোনমতেই সুখকর সময় হতে পারে না বলে মনে করছেন অনেকে। এশিয়ায় যদি দুই সুপারপাওয়ার থাকে তাহলে সেটা চিন এবং রাশিয়া। আর এদের ছাড়া তো বিশ্ব অর্থনীতি অচল। ভারতবর্ষের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টকে ক্র্যাশ করে দিতে পারে এই দুটো দেশ। সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে মোদী বন্দনা, ভারতের ইকোনমিক গ্রোথ – এগুলোকে অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, বিশ্বগুরু হবার জন্য একদিকে চিন এবং অন্যদিকে রাশিয়াকে প্রয়োজন রয়েছে। আর রইল পাকিস্তান।
ভারত-পাকিস্তান কনফ্লিক্টের কারণ কী, সবাই জানে। এক চরম প্রতিদ্বন্দ্বী। ভারতের এতো পশ্চিমিপ্রেম এবং আমেরিকার মোদী বন্দনা হয়ত রাশিয়াকেও কিছুটা ধন্ধে ফেলে দিচ্ছে। তাই পাকিস্তানকে পাশে আনতে চাইছে রাশিয়া। তাহলে ভারতের অবস্থা কী হবে আশা করি সবাই বুঝতে পারছেন। নিজের পাড়ায় ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত রাখা প্রয়োজন। সেখানে ভারতের দুই প্রতিবেশী আজ ভারতের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ। এক চিন আর দুই পাকিস্তান। এনিমি অফ মাই এনিমি ইজ মাই ফ্রেন্ড। এই সমীকরণ যদি রাশিয়া নেয়, তাহলে ভারতের অর্থনীতি নিয়ে সত্যিই আশঙ্কা তৈরি হবেই। আমেরিকা ন্যাটো প্লাসের মেম্বার ভারতকে করতে চেয়েছিল। ভারত যে ন্যাটো গ্রুপের সদস্য হবে না, সেটা বোঝাই গিয়েছিল। কিন্তু ঐ ভারত নিজের বিদেশনীতিতে এমন পরিবর্তন করল, যে পশ্চিমি দেশ এবং আমেরিকা ভারতকে পাশে চাইলেও চিন-রাশিয়া-পাকিস্তান এবার একসারিতে বসতে চলেছে। এই ত্রয়ীর শত্রু যদি ভারত হয়, তাহলে আমেরিকা-ইউরোপ কোনভাবেই ভারতের পাশে থাকবে না। আর থাকলেও তেমন কিছু হবে বলে মনে হয় না। তাহলে কি বিদেশনীতির চ্যাপ্টারগুলোয় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন? কমেন্ট বক্সে মতামত জানান। আর শেয়ার করুন। সঙ্গে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ