Market
গুরুত্ব কমাতে চাইছে ইউরোর। একইভাবে লক্ষ্য করা গেল ডলারের গুরুত্ব কমানোর তাগিদ। আপাতত ভারত এবং রাশিয়া এই সমীকরণের পথে হাঁটতে চাইছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করতে চাইছে ভারতীয় মুদ্রা এবং রুবেলের মাধ্যমে। আর এই লক্ষ্যপূরণ যদি হয়েই থাকে, তাহলে ভারত এবং রাশিয়ার অর্থনীতির জন্য সেটা যথেষ্ট আশার আলো দেখাবে। আর অন্যদিকে ইউরোপ এবং আমেরিকার জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এই সমীকরণ।
রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রক এবং ভারতের বিদেশমন্ত্রক আপাতত দুই দেশের নিজস্ব মুদ্রার মাধ্যমে লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সারছে। সম্প্রতি রাশিয়া সফর করে এসেছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর কথা অনুযায়ী, যদি সব ঠিক থাকে তাহলে ভারতীয় টাকা এবং রুবেল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য লেনদেনের জন্য বড়সড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে কোন কোন শীর্ষকর্তা এই বিষয়ে একটা অসাম্য খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ভারত যে পরিমাণ পণ্য রাশিয়ায় রফতানি করে তার চেয়ে ৫ গুণ বেশি পণ্য আমদানি করে রাশিয়ার থেকে। সুতরাং আমদানি এবং রফতানির মধ্যে যদি ন্যূনতম সমতা বজায় না-থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে ভারতের অর্থনীতির জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। উল্লেখ্য, এই আশঙ্কা প্রকাশ ভারতের কোন শীর্ষ কর্তা করেননি। বরং রাশিয়ার এক উচ্চপদস্থ কর্তাই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার জন্য ভারতকে আরও বেশি পরিমাণ রফতানি বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এখন দেখতে হবে রাশিয়া থেকে ভারত কী কী পণ্য আমদানি করে থাকে।
জ্বালানি, গ্যাস, মিনারেল ফুয়েল, মেটাল, অস্ত্র, গাড়ি তৈরির সরঞ্জাম, ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট, ফার্টিলাইজার, আইসোটোপ, রবার, পেপার, বোর্ড, উড চারকোলের মত এমন বেশ কিছু পণ্য। উল্টোদিকে ভারত রফতানি করে সবজি, চা, কফি, আয়রন বা স্টিল প্রোডাক্টের মতন বেশ কিছু পণ্য। চলতি বছরে ভারত বিভিন্ন পণ্য রাশিয়ায় রফতানি করে কোষাগারে ঢুকিয়েছিল ৩.৩৩ বিলিয়ন ডলার মতন। অন্যদিকে রাশিয়া ভারতে রফতানি করেছে প্রায় ২১.৪ বিলিয়ন ডলার মতন। রাশিয়া এবং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও ক্ষুরধার করার জন্য টাকা এবং রুবেলের আদানপ্রদান তো হতেই পারে। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য আমদানি-রফতানির মধ্যে এই ভারসাম্য থাকা উচিৎ। এমনটাই জানাচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এখন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে উন্নতি আনার জন্য জ্বালানি, সার এবং কয়লার মত বিভিন্ন পণ্যের লেনদেনের পরিসর আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এমনিতেই আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দুই দেশের বাণিজ্য প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করেছে। বাণিজ্যের এই অঙ্কটাই এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়াতে চাইছে তারা।
উল্লেখ্য, ভারত এবং রাশিয়া এই দুটি দেশ বাইল্যাটারাল ট্রেডের মাধ্যমে যে সম্পর্কের দিকে এগোতে চাইছে, তার জন্য আমেরিকা বা ইউরোপের রক্তচক্ষুকে থোরাই কেয়ার দেখাচ্ছে দুটি দেশ। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের মুখোমুখি সংঘাতের কারণে যখন প্রতিটি দেশ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার কথা বলে, সেই সময়ে দাঁড়িয়েও তার কঠোর জবাব দেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ইউরোপের দেশগুলো কিভাবে তখনো রাশিয়ার থেকে জ্বালানি কিনতে ব্যস্ত ছিল। তবে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক আজকের নয়। ইতিহাস বলছে, অতীতেও ভারতের পাশে রাশিয়া সবসময় দাঁড়িয়েছে। যদিও বিদেশমন্ত্রী বিশ্বরাজনীতির এই পরিচিত ছবিকে তুলে ধরে নতুন কোন প্রসঙ্গ টেনে আনেন নি। তার বদলে স্পষ্ট জানিয়েছেন, দেশের স্বার্থ ছাড়া ভারত এখন কিছুই ভাবছে না। আর যে কারণে ভারত রাশিয়ার থেকে কম দামে জ্বালানি কিনেছে একচেটিয়া। এবার সেই পুরনো বন্ধুত্বের সম্পর্কই যেন আরও গাঢ় হতে চলেছে। রাশিয়া এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের জন্য ইউরো বা ডলারের গুরুত্বকে কাটছাঁট করে। তবে ঐ, তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সমতাকে বজায় রাখা। প্রতিবেদন শেষ করছি এখানেই।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ