Daily
কৃষিজাত পণ্য রফতানিতে আবারও দাদাগিরি ভারতের। একদিকে যখন বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যখন কৃষিজাত পণ্য রফতানিতেও পড়েছে ভাটা তখন ত্রাতা হয়ে এগিয়ে এলো ভারত। রেকর্ড পরিমাণ কৃষিজাত পণ্য রফতানি করা হল। অনেকেই বলছেন, এটা সর্বকালীন রেকর্ড তৈরি করেছে। মার্কেট এক্সপেকটেশন বলতে যা বোঝায়, তার থেকে অনেকটাই বেশি।
২০২১-২২ অর্থবর্ষে ভারত যে পরিমাণ কৃষিজাত পণ্য বিদেশে রফতানি করেছিল, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে রফতানির সেই অঙ্ক বেড়েছে অনেকটাই। জানা গিয়েছে, রফতানি শতাংশের বিচারে ৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। তার দরুন কোষাগারে এসেছে প্রায় ২৬.৩ বিলিয়ন ডলার। মূলত চাল, ফল, শাকসব্জি এবং ডেয়ারি প্রোডাক্ট রফতানি করেই ভারত নজির তৈরি করেছে। এই বিষয়ে একটা তথ্য দিয়েছে Apeda বা এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড প্রসেসড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি। তাদের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমান ছিল যে, কৃষিজাত পণ্য রফতানি করে আয় পৌঁছে যেতে পারে ২৩.৫৬ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু অনুমানের সেই অঙ্কটা অনেকটাই পিছনে ফেলে এগিয়ে এলো ভারত।
ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ কমার্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স বলছে, ভারতে এবারে ধানের ফলন অত্যন্ত ভালো হয়েছে। আর ফলন ভালো হয়েছে বলেই তো রফতানিতে উল্লেখযোগ্য ছাপ রেখেছে ভারত। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে চালের রফতানি এক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫% মতন। এক বছরে স্রেফ চাল রফতানি করে আয়ের অঙ্কটা পৌঁছে গিয়েছে ৯.৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ১১.১ বিলিয়ন ডলারে। রাইস শিপমেন্টের নিরিখে ৫% বৃদ্ধি পেয়ে রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২.৩৪ মিলিয়ন টন মতন।
খেয়াল রাখতে হবে যে, কেন্দ্রীয় সরকার গত বছর ব্রোকেন রাইস শিপমেন্টের উপর নিষেধাজ্ঞা জানিয়েছিল। আর হোয়াইট রাইস রফতানির জন্য এক্সপোর্ট ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয়েছিল ২০ শতাংশ মতন। বিশ্বব্যাপী কৃষিজাত পণ্যের চাহিদা এখন ঊর্ধ্বমুখী। স্পেশ্যালি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলিতে ভালোরকম কৃষিজাত পণ্যের টানাটানি দেখা যায়। এই সুযোগ কাজে লাগাল কেন্দ্রীয় সরকার। মূলত পশ্চিমি এশিয়ার দেশগুলি সহ আফ্রিকা এবং ইউরোপে ভারতের কৃষিজাত পণ্যের চাহিদায় এসেছে জোয়ার। শস্য রফতানিতে পাকিস্তান নিজেও এক বড়সড় খেলোয়াড়। কিন্তু ভয়াবহ বন্যার কারণে পাকিস্তানের কৃষিকাজ গোঁত্তা খেয়েছে। একইসঙ্গে পাকিস্তানের অর্থনীতির হালহকিকত আমাদের সকলেরই জানা। ঠিক এই সময়ে দাঁড়িয়ে ভারত হয়ে উঠল গ্লোবাল এগ্রিকালচারাল সেক্টরের এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রফতানিকারক হিসেবে উঠে এসেছে সামনের সারিতে। বিশ্বব্যাপী শস্য বাণিজ্যের ৪৫ শতাংশ এখন নিজেদের হাতে ধরে রেখেছে ভারত।
জানা গিয়েছে, বিশ্ববাজারে বর্তমানে যে দেশগুলি শস্য রফতানি করছে তার মধ্যে সবচেয়ে সুবিধেজনক জায়গায় রয়েছে ভারত। কারণ ভারতের নির্ধারিত দাম সবদিক থেকে পিছনে ফেলে দিয়েছে অন্যান্য দেশগুলিকে। আর এটাই রেকর্ড পরিমাণ রফতানিতে ফুয়েল জুগিয়েছে আলাদাভাবে। চাহিদার সঙ্গে সামাল দিতে পেরেছে ভারত। তাই বিশ্বের ৭৫-টি দেশে ইন্ডিয়ান রাইস এক্সপোর্ট হয়েছে মসৃণভাবে। একইসঙ্গে ফল এবং আনাজের রফতানি ১৮.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছে গিয়েছে ৩.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। তাই সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, এগ্রিকালচারাল সেক্টরে ছড়ি ঘোরানোর ব্যাপারে ভারতকে পিছনে ফেলতে পারছে না কেউ। এমনকি প্রতিবেশী দেশ চিন নিজেও। প্রিয় দর্শক, এই প্রতিবেদন শেষ করার আগে তাই আপনাদের কাছে একটা প্রশ্ন। কৃষিজাত পণ্যের বিপুল পরিমাণ রফতানি মানেই ফলনে জোয়ার। তারপরেও কেন দেশবাসিকে মূল্যবৃদ্ধির কোপে পড়তে হচ্ছে বারবার? মতামত জানাবেন কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন আর সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ