Trending
রীতিমত ধুঁকছে ভারতীয় রেল। আয় করতে গিয়ে বাড়ছে খরচের বহর। অবস্থা এমনই যে সংকট ক্রমশ চেপে বসছে রেলের আগা-মুড়ো সর্বত্র। কিন্তু এই যে আমরা দিনে-দুপুরে-রাতে সারাদিন ছোটাছুটি করতে দেখি এতো এতো ট্রেনকে, তারপরেও খরচের বহর কমছে না? তাহলে প্রশ্ন, ভারতীয় রেলের এই করুণ অবস্থার কারণ কী? আজকের প্রতিবেদন ছোট্ট হলেও হতে চলেছে খুব ইন্টারেস্টিং। যেখানে আমরা আলোচনা সারব কেন ভারতীয় রেলের ঘাড়ে দিনে দিনে বাড়ছে খরচের বহর?
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এমপ্লয়ার হচ্ছে ভারতীয় রেল। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি মানুষ যাতায়াত করেন রেলপথে। একইসঙ্গে ২০ লক্ষ টনের বেশি পণ্য প্রতিদিন নিয়ে আসা নিয়ে যাওয়া করা হয় ভারতীয় রেলের মাধ্যমে। বলা যেতে পারে, এটাই হচ্ছে পণ্য পরিবহনের অন্যতম লাইফ লাইন। এখন আপনাদের মনে হতে পারে, যেখানে ভারতীয় রেল প্রতিদিন এতো পণ্য এতো যাত্রী নিয়ে ছোটাছুটি করছে, সেখানে ভারতীয় রেলের ক্ষতি কি আদৌ হচ্ছে? নাকি পুরোটাই আই-ওয়াশ? সেক্ষেত্রে বলতে হবে একেবারেই না। ঐ যে কথায় বলে না, দূর থেকে চকচকে কোন বস্তু দেখলেই সেটাকে সোনা ঠাহর করা ঠিক নয়। এক্ষেত্রেও ব্যপারটা সেরকম।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মাত্র ৫ টাকায় এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যাতায়াত করতে পারেন। হুশ করে চলে যাওয়া বা চোখের নিমেষে ফিরে আসা। দূর থেকে দূর ডেস্টিনেশনের জন্য অনেকেই রয়েছেন যারা ফ্লাইটের কথা চিন্তা না করে বরং রেলপথকেই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রাখেন। ভারতীয় রেল আমাদের জন্য সত্যিই গর্বের। ৫ টাকা থেকে লাখ টাকা- লোকাল ট্রেন থেকে মহারাজা এক্সপ্রেস- এই সবই আজ ভারতীয় রেল আমাদের দিয়েছে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে। ভারতীয়রা এমনিই খুব হুজুগে। তাই রেলপথে যাতায়াত বছরভর করেই থাকেন পর্যটকরা। কখনো কখনো তো উৎসবের মরশুমে স্পেশ্যাল ট্রেন চালাতে হয় সরকারকে। তারপরেও কেন দুশ্চিন্তা? আসলে ভারতীয় রেলের আয় আপনারা শুনলে হয়ত অবাক হবেন। যাত্রী পরিবহন থেকে সেভাবে হয়ই না। ভারতীয় রেল যদি লাভের মুখ দেখতে চায় তাহলে সেটা হয়ে থাকে পণ্য পরিবহন করে। কিন্তু লাভের লাভ কি দিনের শেষে আদৌ হচ্ছে? ২০২১-২২ সালে রেলের আর্থিক অবস্থার একটা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল। যেখানে জানানো হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে রেলের আয়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৫ কোটি টাকা মতন। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না। গেল অর্থবর্ষে অপারেটিং রেশিও রেলের অন্যান্য বছরকে ভালোরকম ছাপিয়ে গিয়েছে। অপারেটিং রেশিও হল, রেলের আয়-ব্যয়ের হিসাব। ২০২১-২২ সালে রেলের অপারেটিং রেশিও দাঁড়িয়েছে ১০৭.৩৯ শতাংশ। তার মানে ভারতীয় রেলকে ১০০ টাকা আয় করার জন্য খরচ করতে হয় ১০৭ টাকা মতন। রিপোর্ট মোতাবেক, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে এই রেশিও ছিল ৯৭.৪৫ শতাংশ। অর্থাৎ সামান্য কিছু লাভের মুখ দেখলেও ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ক্ষতির বহর আরও বৃদ্ধি পায়। ২০২০-২১ সালে যেখানে ভারতীয় রেল লাভের মুখ দেখেছিল ২ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা মতন, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ঘাটতি দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২৫ কোটি টাকায়।
ভারতীয় রেলের মোট ১৭-টা জোন রয়েছে। তার মধ্যে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো রেল। মেট্রো রেলের অপারেটিং রেশিও দাঁড়িয়েছে ৪৩২.১৯%। অর্থাৎ মেট্রো রেলকে ১০০ টাকায় লাভ করতে খরচ করতে হয় ৪৩২ টাকা মতন। একইভাবে ক্ষতির বহর রয়েছে উত্তর রেলে। যেখানে অপারেটিং রেশিও ২৩২.৮৬%। মানে ১০০ টাকা কাভ করতে খরচ হয়ে যায় ২৩২ টাকা মতন। একইভাবে পূর্ব রেলের অপারেটিং রেশিও রয়েছে ১৯২.৮৮% আর দক্ষিণ পূর্ব রেলের অপারেটিং রেশিও দাঁড়িয়েছে ৭৫.১৯%। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেলের আর্থিক দুরবস্থার অন্যতম কারণ যাত্রী ভাড়া। কিন্তু পণ্য পরিবহন থেকে মোটামুটি একটা লাভের মুখ দেখতে পেলেও মিনিমাম যাত্রী ভাড়া, অন্যান্য খাত থেকে আশানুরূপ আয় না পাওয়ার কারণে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে ভারতীয় রেলকে। এছাড়াও রেল মন্ত্রকের অন্যতম একটা দাবি হল কর্মীদের স্যালারি এবং পেনশন খাতে খরচ বেড়েছে অনেকটা। রেল মন্ত্রক বলছে, ২০১৬-১৭ সালে পেনশন দিতে যেখানে বছরে খরচ হত ৪০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা সেখানে ২০২১-২২ সালে খরচ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকায়।
ভারতীয় রেল এখন নিজেকে আমূল বদলের একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি, নতুন লাইন তৈরি, ট্র্যাকে আধুনিকীকরণ এমনকি বন্দে ভারতের মতো সেমি হাই স্পীড ট্রেন নিয়ে আসা। এই সবই রেল মন্ত্রকের খরচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতীয় রেলের উচিৎ খুব তাড়াতাড়ি ফ্রেট করিডোর তৈরি করা। বা পণ্য পরিবহনের জন্য আলাদা লাইন। এখন যাত্রীবাহী ট্রেন যে ট্র্যাক দিয়ে যায়, মালগাড়ি যায় সেই ট্র্যাক দিয়ে। আলাদা একটা ট্র্যাক তৈরি করা হলে তখন পণ্য পরিবহন আরও গতি পাবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, রেলের আয় অনেকটা বাড়বে। এছাড়াও ভারতীয় রেল মোটা টাকা আয় করে বিজ্ঞাপন থেকে। কিন্তু এই কোন কিছুই রেল মন্ত্রকের ধুঁকতে থাকা আর্থিক স্বাস্থ্যে অক্সিজেন দিতে পারছে না। আর তাই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, ভারতীয় রেল নাকি যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর পথে হাঁটতে পারে। এতে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখতে পারে ভারতীয় রেল। কিন্তু যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর কারণে আবার অসন্তোষ তৈরি হবে না তো এই অগণিত যাত্রীদের মধ্যে? তারা কি যাত্রী ভাড়া বাড়ানোয় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন? দর্শকবন্ধুরা, আপনারাও কি যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর পক্ষপাতী? মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে নজর রাখুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজে। আর নতুন হলে ভুলবেন না সাবস্ক্রাইব করতে।
জীবন হোক অর্থবহ