Trending
ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত। একের পর এক নাটক। নাটকের পর নাটক। এদেশে আজকাল শুধু ফগ নয় জনাব- নাটক চলছে নাটক। এবারের নাটক- নাম পরিবর্তন। স্বাধীনতার ৭৬ বছর পর নাম বদলানোর নতুন হিড়িক! কেয়া বাত! আর সেই নিয়েই ব্যস্ত সক্কলে- ডিবেট চলছে। কেউ পক্ষে- কেউ বিপক্ষে। এক দেশ এক ডিবেট। সবাই শুধু বলতে চায়, কেউ আর যাচাই করে না।
খবরের শিরোনামে বড় বড় অক্ষরে লেখা হচ্ছে নাম পরিবর্তনের ইস্যু। যেন কী ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। বুদ্ধিজীবীদের প্যানেল বসছে। রক্ত-গরম করা তর্কসভা চলছে। বিনা কনক্লুশনে শেষ হচ্ছে ডিবেট। টিআরপি ছাড়া ঐ তর্কসভার উদ্দেশ্য আর কিচ্ছু হতে পারে না। বিজেপি এমপি হরনাথ সিং যাদব তো তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে এই ইস্যুকে একটা অন্য মাত্রা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন ইন্ডিয়া শব্দকে নাকি অ্যাবিউসিভ হিসেবে ব্যবহার করত ইংরেজরা। তাই ভারত নাম হওয়াটাই সমীচীন। সুর মিলিয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার ভিরেন্দ্র শেহওয়াগও। মিঃ মন্ত্রীমশাই এবং ভিরু পাজি- আপনাদের দুজনেরই সংবিধানটা ঝালিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। আর ইংরেজদের ব্যবহার করা জিনিস যদি আজ ব্যবহার করাটা অপমানজনক হয়- তাহলে সবার আগে ভারতে ক্রিকেট খেলাটা নিষিদ্ধ করতে হয়। আর ক্রিকেট বন্ধ হলে কিন্তু ক্রিকেটের দৌলতে রাজকোষ ভরাট হওয়ার অঙ্কেও আঘাত আসবে।
বেসিক্যালি ডিবেট কালচারের নারিশ্মেন্ট চলছে ভারতে। তাও যদি কোন সলিড ইস্যু হত! যেখানে ভারতের সংবিধানের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা আছে, ‘ইন্ডিয়া, দ্যাট ইজ ভারত…।’ সেখানে নাম পরিবর্তন করতে চাইলাম আর হয়ে গেল- বিষয়টা একেবারেই এরকম নয়। সেক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। রিব্র্যান্ডিং করতে হবে দেশের। আর এতে খরচ কত হতে পারে জানেন? প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এমন তথ্যই সামনে এনেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনজীবী ও ব্লগার ড্যারেন অলিভিয়ের মডেল। যার মূল্য ভারতের এক মাসের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত অর্থের থেকেও বেশি। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী গরিবিয়ানা ঢাকতে সবুজ পর্দা ব্যবহার করেন, বস্তি, ঝুপড়ি বা ফুতপাথই যে দেশের কিছু সংখ্যক মানুষের আশ্রয়, যে দেশের মানুষকে অনাহারে, অপুষ্টিতে মরতে হয়- সেই দেশের রাষ্ট্রনেতার এমন বিলাসিতা মানায় না।
আর তাছাড়া মেক ইন ইন্ডিয়া, খেলো ইন্ডিয়া এসব লঞ্চ করার সময় ইংরেজদের অপমানের বিষয়টা ক্লিক করেনি? নাম বদলাতে গেলে তো রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকেও বদলাতে হবে। নতুন নট ছাপাতে হবে। আবারও ডিমনিটাইজেশন হবে। মানুষকে এইভাবে নাজেহাল করার নাটক আর কতদিন চলবে? কেন আসল ইস্যুকে সামনে আনা হচ্ছে না? কেন মানুষকে কিছু ফেক ইস্যুতে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে? একটা ইস্যুর রেষ কাটিয়ে ওঠা যায় না, নতুন ইস্যু চলে আসে। রাষ্ট্রনেতার তৈরি করা এই ইস্যুইজম দেশকেই ফোঁপরা করে দিচ্ছে। বুঝতে পারছেন সেটা? বুঝতে পারলে প্রশ্ন করুন। কারোর জন্য না হোক, নিজের অধিকারের জন্যই প্রশ্ন তুলুন।
কেন অজথা কিছু ইস্যু নিয়ে দেশে বড় ইস্যু তৈরি করা হয়, তার তো সঠিক কোন উত্তর জানা নেই, কিন্তু জি-২০-র আগেই আদানিকে নিয়ে বেশ তোলপাড় শুরু হয়েছিল দেশজুড়ে। দ্বিতীয়বারের জন্য কর কারচুপির কেসে ফেঁসেছিল আদানি। ঘুরপথে নিজস্ব শেয়ার কিনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অপরাধে নাম জড়িয়েছিল আদানি গোষ্ঠীর। সেই ঘটনার মীমাংসা হয়ে গেছে? আদানির ফার্ম যদি বন্ধ হয়, তাহলে যারা ইনভেস্টররা ছিল তারাও তো ভুগবে- এই ইস্যুগুলো তুলে আনা হচ্ছে না কেন? হঠাৎ-ই খবরের শিরনাম থেকে উধাও হয়ে গেল মণিপুর। এত সেনসিটিভ একটা ইস্যু নিয়ে যে মণিপুর উত্তাল হয়েছিল- সেই মণিপুর এত সহজে শান্ত হয়ে গেল? তাও আবার জি-২০-র আগে আগে দিয়েই? কোথায়- এসব নিয়ে তো বুদ্ধিজীবীরা প্যানেলে বসলেন না?
জি-২০-র ঠিক আগে খবরের শিরনাম থেকে উধাও হয়ে গেল আদানি, ললিত মোদী এবং মণিপুরের মত গুরুত্বপূর্ণ খবর। জি-২০-র এলাহি আয়োজনই দখল করল সেই জায়গা। রাজকীয় আয়োজন, বিলাসিতা দেখিয়ে দেশকে জাহির করাই সার। মানুষ ইস্যু চায়। সুতরাং ইস্যু চাপিয়ে দেওয়া হোক। এইভাবে জোড় করে মানুষের ভাবনাচিন্তায় বেড়ি পড়ানো হচ্ছে। আবারও বলছি, জোড় করে মানুষের ভাবনা-চিন্তায় বেড়ি পড়ানো হচ্ছে। ফেক ইস্যুর আড়ালে মানুষ আসল ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলছে না। দেশের নাম বদলানোর ঘটনা তো প্রথম নয়। আগেও অনেক দেশেরই নাম বদলেছে। সেটা নিয়ে এত জলঘোলা হয়নি। তাহলে আজ কেন? ইন্ডিয়ার পরিবর্তে ভারত বললে কি দেশভক্তির পরিমাণ বেশি হয়?
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ