Trending
রাশিয়া থেকে খনিজ তেল আমদানি করে তাকে শোধন করে ইউরোপের বাজারে বিক্রির ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বাধিক তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরবকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে ভারত। সৌদি আরব বহুদিন ধরেই বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতেই রয়েছে। বিশ্বের তেল ব্যবসায় সৌদি আরবের রমরমা মারাত্মক। উৎপাদনের দিক থেকে সৌদি আরব নিজের অবস্থান বজায় রাখলেও তেল রপ্তানির ক্ষেত্রে সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে ভারত। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন এর পেছনে রয়েছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলির অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। ব্যাপারটা একটু বিস্তৃত ভাবে আলোচনা করা যাক।
মস্কোর অপরিশোধিত তেলের ওপর সম্প্রতি আবার নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরপের বেশিরভাগ দেশ। এই নিষেধাজ্ঞা জারি পর্ব শুরু হয়েছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ঠিক পর থেকেই। আসলে ইউরোপের বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল রাশিয়ার তেলের। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। এর ফলে ওই বাজার থেকে সরে যেতে বাধ্য হয় রাশিয়া। তখন থেকেই জ্বালানি কেনার জন্য বিকল্প জায়গার সন্ধান করতে শুরু করে পশ্চিম ইউরোপ। আর এই সুজোগটা হাতছাড়া করতে চায় নি ভারত। ইউরোপের বাজারে তেলের চাহিদা বুঝতে পেরে সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নেমে পড়ে ভারত।। আর এর ফলেই বিশের জ্বালানি বাজারের ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। নিজের দেশে পেট্রোপণ্যের চাহিদা মেটাতে ইউরোপীয় দেশগুলি রাশিয়ার বদলে এখন অনেকটাই ভারতের ওপর নির্ভরশীল। রাশিয়ার থেকে কম দামে তেল কিনে সেই তেল পরিশোধন করে ইউরোপের বাজারে রপ্তানি করে মুনাফা অর্জন করছে ভারতের রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থাগুলো। ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল শোধনকারী দেশ। এখানকার শোধনাগারে, তেল পরিশোধনের যে ব্যবস্থা আছে তা যথেষ্ট উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন ও দক্ষ। কম দামে রাশিয়া থেকে তেল কিনে তাকে ইউরোপের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত করে বিক্রি করা খুব একটা সহজ নয়। কিন্তু ভারতীয় তেল শোধনাগারের উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষতার কারণেই এই কঠিন কাজটি খুব সহজেই করতে সফল হয়েছে ভারত। সারা বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের চাপ ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভারত এই পরিস্থিতিকে তার ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করছে। সূত্রের খবর অনুসারে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইউরোপীয় দেশগুলি ভারত থেকে তেল আমদানি করত ১.৫৪ ব্যারেল। কিন্তু এই বছর ফেব্রুয়ারিতে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল দু লক্ষ ব্যারেল। ইউরোপের জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেলের আমদানি আরো বাড়াবে ভারত। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫-এ এপ্রিলের মধ্যে মস্কো থেকে দিনে ২০ লক্ষ ব্যারেল তেল কেনার পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লীর। এই পরিসংখ্যান যদি পূরণ হয় তাহলে তা ভারতের মোট তেল আমদানির ৪৪%-এ পৌঁছবে।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার ওপর চাপানো ইউরোপীয় দেশগুলির নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনার ব্যাপারটাকে মোটেই সুনজরে দেখেনি ইউরোপ। কিন্তু পরবর্তী কালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মস্কো সফরে গিয়ে এর জবাব দিয়ে বুঝিয়ে আসেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনেছে বলেই ইউরোপের জ্বালানির বাজারের সচল থাকা সম্ভব হয়েছে। আবার অপর দিকে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনায় বেশ মোটা অঙ্কের টাকার সাশ্রয় হয়েছে কেন্দ্রের। সূত্রের খবর অনুসারে ২০২২ থেকে ২০২৪ এর মধ্যে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার বাচাতে সক্ষম হয়েছে ভারত। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইরাণ ও ভেনেজুয়েলা-র ওপরেও তেল বিক্রির ক্ষেত্রে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা এড়িয়ে কিভাবে এই দুই দেশ থেকেও তেল আমদানি করা যায় সেই ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। ইউরোপীয় দেশগুলির নিষেধাজ্ঞাকে সফলভাবে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব বাজারে ভারত তার নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে সক্ষম হয়েছে।