Trending
গেল বছর জি-২০তে তিনি কড়া বকুনি খেয়েছিলেন জিনপিং-এর কাছে। এই জি-২০তে কড়া ধমক শুনলেন মোদীর কাছ থেকে। এমনিতেই তাঁর পলিটিক্যাল স্ট্যান্ডপয়েন্ট নিজের দেশে টালমাটাল। ট্রোলড হচ্ছেন খোদ নিজের দেশেই। কানাডার প্রথম সারির একটি সংবাদপত্রে ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেনসিতে জি-২০ বৈঠকে প্রিন্ট হল এই লাইন- দিস ওয়ে আউট। অর্থাৎ এটাই বাইরে যাবার রাস্তা। জাস্টিন ট্রুডো- কানাডার প্রধানমন্ত্রী এখন ঘরে-বাইরে চর্চিত এবং খানিকটা বিভ্রান্তও বলে মনে হয়। তারপরেও ভারতের সঙ্গে অযাচিত আক্রমণে নেমে আসা। স্বাভাবিকভাবেই উঠছে প্রশ্নঃ তাহলে কি ভারত-কানাডার অবাধ বাণিজ্য চুক্তি এবার বিশ বাঁও জলে? আসুন আজকের প্রতিবেদন শুরু করা যাক এই নিয়েই।
জাস্টিন ট্রুডো- কম বয়সী কানাডার এই প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অনেক আশা আকাঙ্খা তৈরি হয়েছিল কানাডাবাসীর। তবে ধীরে ধীরে সেটাই আশা পাল্টে যাচ্ছে হতাশায়। এমনিতেই কানাডার ইকোনমি যে দুর্দান্ত রকমের পোক্ত- সেরকমটা একেবারেই নয়। কারণ কানাডার ইকোনমিতে বড় অঙ্ক কন্ট্রিবিউট করে সেই দেশের রিয়েল এস্টেট সেক্টর। যা ক্রমশই তলানিতে চলে যাচ্ছে। এসবের মধ্যেই কানাডা আমেরিকার সঙ্গে বিজনেস অ্যাঙ্গেলে সবথেকে বেশি আমেরিকার ওপরে ভরসা করলেও তারা এখন বিশ্বের প্রগতিশীল এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে রিলেশন বেটার করার জন্য মরিয়া। মানে আমেরিকা যে পথে চলবে, কানাডাও খানিক সেই পথেই চলবে। সেই হিসেবে কানাডা এখন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার চিন্তাভাবনা করেছিল। পলিসিতে সেই রকম চেঞ্জ এনেছিল। কিন্তু কানাডা কোনদিনই নিজের স্ট্যান্ডপয়েন্টে মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারেনি। সেটা একবার নয়। পরপর দু’বার। আর যে কারণে প্রথম কড়া ধমক এসেছিল জিনপিং-এর কাছ থেকে। শুনে নিন একবার কী সংলাপ চলেছিল দুজনের মধ্যে।
এবার কড়া ধমক খেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছ থেকে। কারণ? কানাডায় বাড়তে থাকা খালিস্তানীদের প্রভাব। এবং তাদের চুপ করাতে কানাডা সরকারের চরম উদাসীনতা। এই নিয়ে ভারত এবং কানাডার মধ্যে সম্পর্কে শীতলতা আরও বাড়ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই নেমে এলো দুই দেশের মধ্যে চরম মতবিরোধের জায়গা। ট্রুডো অকস্মাৎ বলে বসলেন, খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের মৃত্যু নিয়ে এক উৎপটাং কথা। সেটা কী? কানাডার তদন্তকারীরা নাকি এই হত্যার সঙ্গে ভারতের এক যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। তারপরেই কার্যত ফুঁসে ওঠে ভারত। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কানাডা সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী এবং চরমপন্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং তাদের বাড়বাড়ন্তকে আটকে রাখার কোন প্রয়াস দেখাচ্ছে না। কানাডা প্রথম ভারতের দূতাবাস কর্মীকে বহিষ্কার করে। পাল্টা ভারত কানাডার দূতাবাস কর্মীকে বহিষ্কার করে দেয়। অর্থাৎ তাদের সম্পর্ক ধীরে ধীরে আরও জটিল হতে থাকে। আর এসবের মধ্যেই নতুন করে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে ভারত-কানাডার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে। রফতানি বাণিজ্য মহল কার্যত আশঙ্কায় ডুবেছেন। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তারপর অবাধ বাণিজ্য চুক্তি কোনভাবে আটকে যাবে না তো? খেয়াল করলে দেখবেন, কানাডায় যখন খালিস্তানি নেতা হরদিপ সিং নিজ্জারের মৃত্যু হয় তারপরেই কানাডা ভারতে সঙ্গে এই বাণিজ্যিক এগ্রিমেন্ট নিয়ে সকল কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়। সেটা গত জুন মাসে। তারপর জি-২০ বৈঠক হল। মনে করা হয়েছিল, এরপর হয়ত ভারত-কানাডার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মসৃণ হবে। কিন্তু খালিস্তানিদের নিয়ে কানাডার একপেশে মনোভাব ভারতের বিরোধীতাকেই সবথেকে বেশি তুলে ধরে। তারপরেই বাণিজ্যিক মহলে প্রশ্ন তাহলে কি আমদানি, রফতানি সব গোঁত্তা খেতে চলেছে?
এখানেই একটা তথ্য দিয়ে রাখি। ২০২২ সালের একটা বাইল্যাটারাল তথ্য। সেই বছরে ভারত এবং কানাডার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয় প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকার। মনে করা হচ্ছিল, কানাডা এবং ভারতের মধ্যে এই বাণিজ্য ধীরে ধীরে দুই দেশের মধ্যে অবাধ বিজনেস এগ্রিমেন্টের রাস্তা অনেকটাই খুলে দিচ্ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তারপর কি দুই দেশের মধ্যে ট্রেড এগ্রিমেন্ট আরও জটিলতার মধ্যে পড়বে না তো? গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত এবং কানাডার মধ্যে বর্তমান যে সম্পর্ক সেটা মোটেই সুবিধাজনক জায়গায় নেই। কিন্তু তার মানে এটাও নয় যে, সম্পর্ক ভালো নেই বলে বাণিজ্যে নেগেটিভ প্রভাব পড়বে। উঠে এসেছে নয়া দিল্লি-বেজিং-এর সম্পর্কের উদাহরণ। বিশেষজ্ঞমহলের একাংশ বলছেন, ভারত এবং চিন সীমান্ত নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। তাদের মধ্যেও সম্পর্ক ঠাণ্ডা। কিন্তু দুটো দেশ নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যকে বন্ধ করে নি। ফলে ভবিষ্যতে এই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে তেমন একটা প্রভাব না পড়ারই কথা।
এই আশা বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকেই দেখিয়েছেন। কিন্তু দিনের শেষে কিন্তু পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হচ্ছে। কারণ খালিস্তানি চরমপন্থী এবং সন্ত্রাসবাদীদের কার্যকলাপ কানাডার মাটিতে প্রকাশ্যে করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের তীব্র ভারত বিদ্বেষী মনোভাব যে কোনভাবেই কানাডার সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলছে না। আর এটাই ভারত সরকারের রোষের কারণ। একদিকে কানাডা গভর্নমেন্ট ভারত সরকারের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্যে ভরসা রাখছে আর অন্যদিকে এই ধরণের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ওপেনলি মদত দিচ্ছে? পরিস্থিতি ঘোরাল হয় কখন সে তো আগেই বললাম। ট্রুডো মনে করছেন, কানাডার মাটিতে নিজ্জরের যে মৃত্যু হয়েছিল তার পিছনে ভারতের হাত রয়েছে। আর যে সূত্র প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর কাছে এসেছে সেটা যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য। এরপরেই ভারতের তরফ থেকে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ভারত দূতাবাসের কর্মীকে বহিষ্কার করে। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়।
২০২১ সালের নিরিখে কানাডায় বসবাস করেন প্রায় সাড়ে ১৮ লক্ষ ভারতীয়। যাদের মধ্যে প্রচুর পরিবার রয়েছেন শিখ। তাঁরা আজ ভারত-কানাডার শীতল সম্পর্ক নিয়ে বেশ আতঙ্কে। দেখুন ভারত বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আদায় করে বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবর্ষের তথ্য হাতে নিলে দেখতে পাব, কানাডায় উপস্থিত এনআরআইদের কন্ট্রিবিউশন ছিল ০.৬ শতাংশ মতন। অঙ্কটা এক্ষেত্রে একটু কম মনে হলেও বাণিজ্যিক খাতিরে সেটা অনেক। আর বিপুল সংখ্যার ভারতীয় সেখানে থাকার কারণে কোষাগারে ডলার বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ভারতে আসছিল মোটা টাকা। ভারতীয় শিখ পরিবারগুলো এখন যথেষ্ট দোলাচলে। তাঁরা মনে করছেন, এখন যদি ভারত-কানাডার সম্পর্ক যদি তিক্ততার জায়গায় পৌঁছয়, তাহলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে দুই দেশের বাণিজ্যিক ভবিষ্যৎ? আপাতত সেই উত্তর এখনো অধরা। আপনাদের কি মনে হয়, সেটা জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন, শেয়ার করুন। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ