Trending
ডলারে আর ভরসা নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য এবার রুপি-টাকাতে? চিনের মুদ্রা ইউয়ান যদি স্বস্তি দেয়, তাহলে ভারতীয় রুপি পারবে না কেন? কেন ডলার নির্ভরতা কমানোর প্রয়াস চালাচ্ছে বাংলাদেশ? বাংলাদেশের নাকি আখেরে ক্ষতিই হবে, এমনটাই মত আর্থিক বিশেষজ্ঞদের। কেন বলছেন তাঁরা? ভারত আখেরে ঠিক কতটা লাভবান হবে? রুপি-টাকায় বাণিজ্য লেনদেনের প্রসঙ্গ কাছে আসতেই, এই ধরণের বিষয়গুলোই এখন দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মুখে মুখে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, সত্যিই কি ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে রুপি-টাকাতেই বাণিজ্য হবে আগামীতে? আসুন এই সব ধোঁয়াশা কাটানোর চেষ্টা করা যাক আজকের প্রতিবেদনে।
বিশ্ব বাজারের আজ যা পরিস্থিতি, তাতে খুব একটা থিতু নয় মার্কিনী ডলার। দুই দেশের পক্ষেই ডলারকে ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে, ভাঁড়ার থেকে ডলার কমিয়ে আনার পক্ষপাতী দুই দেশের একটিও নয়। আর সেই কারণে আপাতত ডলার বাঁচিয়েই টাকা এবং রুপিতে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য চালাতে আগ্রহী হয়ে পড়ছে। কিন্তু সেখানে বড়সড় ফাঁড়া থাকছে বাংলাদেশের ভাগ্যে। উল্টো দিকে ভালোরকম লাভ হবে ভারতের। কেন, এবার সেটাই বলব এক এক করে।
আমরা সকলেই জানি ডলারের ওপর নির্ভর করে দুই মুদ্রার মানের ওঠাপড়া। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য হলে কিভাবে হবে? ভারতে যারা বাংলাদেশের পণ্য রফতানি করবেন, তাঁরা পাবেন বাংলাদেশী টাকা আর বাংলাদেশে যে সকল ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পণ্য রফতানি করবেন তাঁরা পাবেন রুপি। বিষয়টা খুব সহজ মনে হলেও, বিশ্লেষকদের আশঙ্কা এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি গোঁত্তা খেতে পারে টাইটানিকের মতন। অন্যদিকে ভারতীয়রা বরং একের পর এক লাভবান হবেন খুব সহজেই। তাহলে বাংলাদেশ কেন বিপদে পড়তে পারে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ভালোরকম বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। আবার অন্যদিকে ভারতীয় রুপি কোনদিক থেকেই বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি পায় নি। সেদিক থেকে বাংলাদেশকে অনেকটা স্বস্তি দিচ্ছে ইউয়ান। কিন্তু রুপির ক্ষেত্রে এখনো টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে। তাই ইউয়ান ভরসা জোগালেও পারছে না রুপি। একই সঙ্গে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত বিদেশ থেকে যে সকল পণ্য আমদানি করে সেটা ডলারেই। আর সেই সকল পণ্যই বাংলাদেশে রফতানি করতে গেলে, অনেকেই মনে করছেন, ভারতীয়রা ডলারের নিরিখেই বেশি রুপি চাইতে পারেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। সেক্ষেত্রে হয়ত বাংলাদেশের ভাঁড়ার থেকে বেশি টাকা খরচ হতে পারে। ফলে বাংলাদেশ অনেক বেশি ভারত নির্ভর হতে পারে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য। বাংলাদেশে রুপির চাহিদা ইউয়ানের থেকে কম। অর্থাৎ, ভারতের সঙ্গে ব্যবসা করতে গেলে প্রথমেই অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য কমিয়ে আনতে হবে। আর একটা বিষয় হতে পারে। বাংলাদেশকে ডলার রূপান্তরিত করতে হবে টাকায়। তারপর বাণিজ্য করা সম্ভব।
ডলার নির্ভরতা কমানোর জন্য ভারত এবং বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করতে চাইছে। তার জন্য দুই দেশের ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মধ্যে লেনদেন হবার জন্য চুক্তি হতে পারে। এই বিষয়ে কথা বলছে বাংলাদেশের সোনালি ব্যাঙ্ক, ইস্টার্ন ব্যাঙ্ক এবং ভারতের স্টেট ব্যাঙ্ক আর আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক। ভারতের ব্যাঙ্ক বাংলাদেশের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলবে। একইভাবে ভারতের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলবে বাংলাদেশ। তাহলে কি এবার খুব তাড়াতাড়ি রুপি-টাকার এই বাণিজ্য প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে? তাহলে উত্তর হচ্ছে না। এখনই ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে রুপি-টাকায় বাণিজ্য শুরু হবে না। মনে করা হচ্ছে, সময় লাগতে পারে অন্তত ছয় মাস মতন।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা কতটা সত্যি বলে মনে হচ্ছে? বাংলাদেশের চেম্বার অফ কমার্স বলছে, রুপি-টাকাতে বাণিজ্য হলে সেটা কখনোই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য চাপের হবে না। তার প্রধান কারণ, ব্যাঙ্কগুলো যদি নিজেদের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খোলে, তাহলে ডলার নয়। বরং সরাসরি রুপি থেকে টাকা বা টাকা থেকে রুপিতেই লেনদেন করা সম্ভব হবে। ফলে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে রুপি-টাকায় বাণিজ্য একটা দীর্ঘমেয়াদি সুবিধে দিতে পারে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের অঙ্ক ছিল ১৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অন্যদিকে ভারত আমদানি করেছে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ভারত থেকে যা আমদানি করবে তার পুরোটাই হয়ত ডলারে হবে না। বরং বাংলাদেশ যেটুকু পণ্য ভারতে রফতানি করবে, সেই অঙ্কটাই শোধ করা হবে ডলারে নয় বরং রুপিতে। আর বাকিটা হবে ডলারে। সবশেষে একটাই কথা। কয়েকদিন আগেই খবর এসেছিল, বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার থেকে যে বিপুল অঙ্ক ধার নিয়েছিল বাংলাদেশ, সেটাই কিস্তিতে শোধ করা হবে চিনা মুদ্রা ইউয়ানে। ইউয়ান বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে অনেকটাই স্বীকৃত। তাই ইউয়ানে তারা বাণিজ্যিক লেনদেন করলে সেক্ষেত্রে চাপ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, রুপি এবং টাকাতে যদি লেনদেন হয়, সেক্ষেত্রেও দীর্ঘমেয়াদি সুবিধে হবে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশের এক্ষেত্রে কোন ফাঁড়া থাকবে না। আর ভারতের আখেরে সবদিক থেকেই লাভ হবে। আপনার কী মনে হয়? ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য যদি হতে হয়, তাহলে কি রুপি এবং টাকাতেই হওয়া উচিৎ?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ