Trending
অবশেষে কেটে গেল জটিলতা, ধোঁয়াশা। বিশ্ব জুড়ে যে ডলার নির্ভরতা কমানোর ট্রেন্ড শুরু হয়েছে, সেটারই রিসেন্ট এগজ্যাম্পল সেট করল ভারত এবং বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আর ডলারে নয়। বরং হতে চলেছে রুপিতে। এর ফলে একদিকে যেমন ডলারের সঞ্চয় বাড়বে, তেমনই আবার রুপির গ্রহণযোগ্যতাও বিশ্ববাজারে ভালো ছাপ তৈরি করবে। কিভাবে সেটাই এবার আলোচনা করব ছোট্ট এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ। রাইজিং ইকোনমি, বিশ্ববাণিজ্যের ভবিষ্যৎ খেলোয়াড়। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ আমেরিকা এবং বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ চিন যাদের সম্পূর্ণ নেকনজর রয়েছে এই দেশের ওপর। চিন বাংলাদেশে মোটা মোটা অঙ্ক বিনিয়োগ করে যেমন নিজের দেশের অধিকার কায়েম রাখতে চায়, তেমনই আমেরিকাও ডলারকে হাতিয়ার করে ছড়ি ঘোরাতে চায় বাংলাদেশে। অর্থাৎ একদিকে ডলার এবং অন্যদিকে ইউয়ান। সম্প্রতি ভিসা ইস্যুতে বাংলাদেশের মানুষের মনে আমেরিকা নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। হাসিনা সরকার মনে করেছিল, আমেরিকা অহেতুক নাক গলানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে। এটা অবশ্য আমেরিকার নতুন কিছু নয়। এঁরা যেখানেই পারে সেখানেই নাক গলায়। একইসঙ্গে তৈলমর্দনেও জুড়ি মেলা ভার। দেখলেন না কিভাবে মোদীকে নিজের ঘরে বসিয়ে, সম্মান দেখিয়ে আরও পাশে পেতে চাইছে ভারতকে। তার কারণ একটাই চিনকে সবক শেখানো। যাই হোক, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক কিন্তু আগের মতন অত মজবুত নয়। তবু আপনাদের একটা ইনফরমেশন দেওয়া প্রয়োজন।
আপনারা সকলেই জানেন, বাংলাদেশ ইকোনমির মেরুদণ্ড কিন্তু গারমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি। পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ একটা মেজর অংশ নিজেদের কোষাগারে ঢোকায়। সেই রফতানির অনেকটাই হয়ে থাকে সোজা মার্কিন মুলুকে। আর তাতেই আমেরিকা মনে করেছিল, বাংলাদেশ হয়ত আমেরিকার ওপর সত্যিই ডিপেন্ডেন্ট। কিন্তু দিনের শেষে এই ভাবনার সত্যতা কতটা? কারণ আমেরিকার নাকের তলা দিয়েই যে এবার ডলারকে থোরাই কেয়ার করে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চলেছে রুপিতে। একদিকে চিনের সঙ্গে ইউয়ানে বাণিজ্য, আবার অন্যদিকে রুপির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য। আর্থিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ রুপির মাধ্যমে বাণিজ্য করতে আগ্রহী হওয়ায় সেটা দুই দেশের ইকোনমিতে বড় প্রভাব তো ফেলবেই। একইসঙ্গে রুপির প্রতি নির্ভরযোগ্যতাও তৈরি হবে বিশ্ব বাজারে। এটার জন্য ইন্ডিয়ান ডিপ্লোম্যাসিকে সাধুবাদ দিতেই হয়। কেন, সেটা বলছি আরেকটু পরে।
রুপিতে বাণিজ্য চালানোর মধ্যে কিছু ফায়দা দেখতে পেয়েছে দুটো দেশ। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে মোটা অঙ্কের আমদানি, রফতানি হয়ে থাকে। সেটা পৌঁছে যায় প্রায় ১৬০০ কোটি ডলারে। যার মধ্যে বাংলাদেশে ভারত পণ্য রফতানি করে ১৪০০ কোটি ডলার মতন। আর ভারত বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে ২০০ কোটি ডলার মতন। এই ১৬০০ কোটি ডলারের ব্যবসা পুরোটাই হত…অবশ্যই, ডলারে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে লেনদেনের সময় অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে ডলার নির্ভরতা যেমন কমবে তেমনই রিজার্ভ শক্তিশালী হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই গোটা আর্থিক কর্মকাণ্ড চালাবে ভারতের দুটি ব্যাঙ্ক এবং বাংলাদেশের দুটি ব্যাঙ্ক। বাংলাদেশের তরফে রয়েছে সোনালি ব্যাঙ্ক, ইস্টার্ন ব্যাঙ্ক। আর ভারতের তরফ থেকে রয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক।
ভারতের হাতে ডলার মজুদ রয়েছে যথেষ্ট। এদিকে বাংলাদেশের হাতে ডলারের পরিমাণ দিনদিন কমছে। সুতরাং বাংলাদেশ চাইবেই এখন যেভাবে ডলারকে নিজের হাতে মজুদ রাখুক। অন্যদিকে ভারত বুঝেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য চালানোর জন্য এটাই হচ্ছে মোক্ষম সময়। বাংলাদেশের হাত-পা বাঁধা। ভারতের সোনায় সোহাগা। ডলার মজুদ করা বাংলাদেশের প্রয়োজন। আর সেটাকেই হাতিয়ার করল ভারত। দেখুন, রাশিয়ার সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য চালানোর জন্য ভারত দীর্ঘমেয়াদী আলোচনা চালিয়েছিল। কিন্তু চিঁড়ে ভেজেনি। রাশিয়া পাশ কাটিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে ড্যামেজ কন্ট্রোল করাটা একটু চাপের হয়ে যাচ্ছিল ভারতের পক্ষে। কিন্তু বাংলাদেশ ‘হ্যাঁ’ করতেই অনেকটা হারানো জমি ফিরে পেল ভারত। রুপিতেই বাণিজ্য আর সেটাই সমৃদ্ধ করবে দুই দেশের অর্থনীতিকে। রুপিতে বাণিজ্য হলে সেটা দুই দেশের ব্যবসায়ীদের কতটা সুবিধে করে দেবে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ