Trending
ভারত আর চিন- আর যাই হোক দুটো বিষয়ে এই দুই দেশ এক নীতিতে চলে। প্রথম ঝগড়া যত হবে ঐ সীমান্তের বাইরে নয়, সেটা আঘাত ফেলবে ব্যবসা বাণিজ্যে। আর দুই সবাই উল্টো দিকে চলে যাক, রাশিয়ার সঙ্গে কোনভাবেই সখ্যতা খারাপ করা যাবে না। অনেকেই বলেন পুতিন একনায়কতন্ত্রের মত দেশটাকে চালাচ্ছেন। সেখানে নির্বাচন হলেই বা কি আর না-হলেই বা কি- বর্তমানে রাশিয়ার শেষ কথা পুতিন। আর ভারত যাই করুক না কেন, ইতিহাসে নজর রেখে চলতে জানে। তাই রাশিয়ার সখ্যতায় চিড় ধরাতে কোনভাবেই রাজি নয় ভারত। এবার সেই কারণেই কি ভারতের ওপর খাঁড়া নামতে শুরু করল? কোন নতুন চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হতে পারে মোদী সরকারকে? আসছে কত বড় বিপদ আর সেই বিপদ ভারতের অর্থনীতির জন্য কত বড় ফাঁড়া তৈরি করবে? এই সব নিয়ে আজ দু’চার কথা।
ভারত আর চিন একটা বিষয়ে একমত। রাশিয়া অনেক কিছু করতে পারে। যা করতে পারে সেটা পশ্চিমা দেশ এবং আমেরিকার বুকে কাঁপন ধরানর জন্য যথেষ্ট। অনেকেই বলেন, ভারত-রাশিয়া-আর চিন যদি এই ত্রয়ী একসঙ্গে কোন কাজে নামে তাহলে বাকি সব দেশের খেল মোটামুটি খতম। তাই কোন দেশই এই তিনটি দেশকে চটাতে চায় না। আরে বাবা, এই দুনিয়া বনবন করে ঘুরছে শুধুমাত্র অর্থনীতির উপরে। যে দেশ যত বড় কনজিউমার সেই দেশকে তেল দেয়া বাকিদের কাজ। মানে সেই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হলে বড়সড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে একটা দেশ। দু বছর অতিক্রান্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দোরে দোরে ঘুরে নিজের শর্ত পূরণের ভিক্ষা করছেন, এদিকে রাশিয়া- সে নির্বিঘ্নে বলে দিয়েছে ইউক্রেন যতদিন ইচ্ছে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে। রাশিয়ার কোন আপত্তি নেই। কেন আপত্তি নেই? রাশিয়া তো কার্যত একঘরে। না সেটা নয়।
পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, রাশিয়া এই বিপুল অস্ত্র ব্যবহার করতে পারছে তার অন্যতম কারণ চিন এবং ভারত। এই দুটো দেশ ইকোনমিকালি রাশিয়াকে দুর্দান্ত সাপোর্ট করছে। ভারতের কথাই ধরা যাক। আমরা বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে বহুবার এমন চাঁচাছোলা প্রশ্নের মুখে পড়তে দেখেছি। বিদেশে সেই সকল প্রশ্নের এমন উত্তর দিয়েছেন, যে রাতারাতি তাঁর জবাব ভাইরাল হয়ে যায় গোটা বিশ্বে। ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলার জন্য সম্ভ্রম, শ্রদ্ধা এবং সামান্য হলেও ভয় থাকবে- এই ইমেজটা ভারত তৈরি করে দিয়েছে। এদিকে চিন সে কোন কিছুই সবাইকে জানিয়ে করে না। ছুপারুস্তমের মত নিজের কাজটি সেরে ফেলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকা সহ আমেরিকাপন্থী কিছু দেশ এবং অবশ্যই ইউরোপ মনে করে ভারত আর চিন এই দুটো দেশ রাশিয়াকে নিরন্তর যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য ফুয়েলের জোগান দিয়ে চলেছে। আর সেটা হচ্ছে ব্যবসা। ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ব্যবসা বাণিজ্য রেকর্ড করেছে, চিনের সঙ্গেও সেই রেকর্ড করেছে ভারত। আর যে কারণে অনেকেই মনে করছেন যে ভারতের এই থোড়াই কেয়ার মনোভাব হয়ত ব্যবসা বাণিজ্যে ভালোরকম চাপ তৈরি করতে পারে। কিরকম?
কূটনৈতিক মহল বলছে, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার এই দুর্ভেদ্য বন্ধুত্ব দেখে ভারতের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে জাপান। জাপানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোনদিনই খারাপ নয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে জাপান অনেকটাই সাহায্য করেছিল ভারতকে। দুই দেশের অর্থনীতি স্ট্রং করার জন্য ভারত এবং জাপান ব্যবসা করছে সফলভাবে। ভারতে যেমন বহু জাপানি সংস্থা সুনামের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনই জাপানে বহু ভারতীয় সংস্থা ব্যবসা করছে চুটিয়ে। কিন্তু মনে করা হচ্ছে, অতি রাশিয়ার প্রেম জাপানের না-পসন্দ। তারা তো দিনের শেষে আমেরিকার কথাতেই হ্যাঁ হ্যাঁ বলতে পারে। ফলে জাপান ভারত বিদ্বেষী না-হয়েও শিক্ষা দেবার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে। সেটা কী? বন্ধ করতে পারে ভারতীয় সংস্থার দরজা। জাপানে চুটিয়ে ব্যবসা করছে এমন কয়েকটি ভারতীয় সংস্থাকে টাটা বাই জানাতে পারে জাপান। তবে খুব বেশি কিছু করবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ কূটনৈতিক স্তরে ভারত এবং জাপানের প্রয়োজন একে অপরের জন্য অগাধ। আর এটাও ঠিক যে, জাপানের এক বড় অংশ নির্ভর করে ভারতের ওপর। তাই ভারত যদি বেঁকে বসে তাহলে ক্ষতি হবে জাপানের। আর যাই হোক না কেন, দিন শেষে রাশিয়া প্রেম ভারতকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেও খুব যে সফল হবে এমনটা কিন্তু নয়। কারণটা তো বললামই- ভারত, চিন আর রাশিয়া এই ত্রয়ী যদি মাঠে নেমে তখন অনেক বড় প্লেয়ারের বেলুন ফুটো হয়ে যাবে আর সেটা জানে বিশ্বের প্রত্যেকটা দেশ।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ