Trending

চিনের থেকে যতই মুখ ঘুরিয়ে থাকার কথা ভাবুক না কেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে ইন্দো-চিনি ভাই ভাই । আহ, এটা আমার কথা নয়। বলছে কে জানেন? স্বয়ং আইএমএফ বা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড। যারা এই দুঃসময়েও ভারত এবং চিনকে অন্ধকূপ থেকে বেরিয়ে আসার দুটো রাস্তা হিসেবে দেখছে। মানেটা কঠিন লাগছে তো? তাহলে আগে এক কথায় বলি, তারপর পুরো বিষয়টা ক্লিয়ার করব ধাপে ধাপে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে আইএমএফ বা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। আর সেখানেই বলা হয়েছে যে আগামী অর্থবর্ষে বিশ্ব মন্দা তৈরি হলেও গ্লোবাল ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের ৫০% অবদান থাকবে ভারত এবং চিনের। এবার পুরো বিষয়টা খোলসা করছি এই প্রতিবেদনে।
গুগল, ফিলিপ্স, মাইক্রোসফট, স্পটিফাই, অ্যামাজন বা আইবিএম- গ্লোবাল মার্কেটে এই সব বড় বড় সংস্থাগুলো একের পর এক কর্মী ছাঁটাই করছে। তার জন্য এই সব জায়ান্ট কোম্পানিগুলো ভয় পাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাকে। অনেকেই মনে করছেন, আমেরিকা বা ইউরোপের অর্থনীতির যা হাল, সেটা থেকে আইএমএফের অনুমান স্পষ্ট যে, তাবড় কোম্পানিগুলো এখন থেকেই আসছে-মন্দার ভয়ে কার্যত থরহরি কম্পমান। আর যে কারণে সংস্থাগুলোর অবস্থা যাতে পাকিস্তানের বন্যার মত না-হয়, তাই আগে থাকতেই নিজেদের বাঁচানোর জন্য ছাঁটাই করার পথ খুঁজে নিচ্ছে। সেই ইমপ্যাক্ট পড়ছে গ্লোবালি। বহু ভারতীয় যারা বিদেশে এই ধরণের বড় বড় কোম্পানিতে কাজ করছেন, তাঁরাও আজ দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। হে…হে…এমনি এমনি ভারত সরকার মেক ইন ইন্ডিয়া আত্মনির্ভর ভারত করে গলা ফাটাচ্ছে? এখন এতগুলো মানুষের মুখ থেকে চাকরি কেড়ে নেওয়া মানে সটান তাদের ভাতটাই তো মারা হল। এত এত কর্মীকে চাকরি দেবে কিভাবে সরকার? ভারত তো আর চিন নয়। চিনকে টেক্কা দেবার জন্য ভারত এখন চিনের পথ অনুসরণ করছে। মানে নিজের দেশে প্রোডাক্টিভিটি যদি বাড়ানো যায়, তাহলে এক্সপোর্ট অনেকটাই বাড়বে। এক্সপোর্ট বাড়লে সেটা দেশের ইকোনমিকে আরও স্ট্রং করবে। যাই হোক, এই পথে কাজ শুরু হয়েছে অনেকদিন। স্টার্ট আপ থেকে শুরু করে বড় বড় কোম্পানিদের ভারতে টেনে আনার কাজটা কিছুটা হলেও আগের থেকে মসৃণ হয়েছে। ফলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন যে, ভারতের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। শুধু এটুকু বলা যেতে পারে যে, আর্থিক মন্দার কারণে ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের দৌড়ে যখন বিশ্বের প্রথম সারির নেতা টাইপ দেশ যেমন আমেরিকা বা ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলি গোঁত্তা খাবে, তখন বিশ্ব অর্থনীতির চালিকা শক্তি হতে পারে ভারত এবং চিন!
চিন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানুফ্যাকচারিং হাব। ফলে গোটা বিশ্ব এই দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং-এর ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। মানে চিন যদি কোন কারণে নিজে ধাক্কা খায় তাহলে সেটা ওয়ার্ল্ড গ্রোথকেও ধাক্কা দিতে পারে কিছুটা। সেই আশঙ্কা অবশ্য গত চল্লিশ বছরে চিনের জন্য কেউ করেনি। কারণ চিন তখন বিরাশি সিক্কার চর মেরে বুঝিয়ে দিয়েছিল, যব তক হ্যায় চিন তো সব কুছ মুমকিন। এছাড়া চিনের কিছু দুষ্টুমিষ্টি নৈতিক ব্লু-প্রিন্ট রয়েছে- সেটাকে ট্যাকটিস বলা যেতে পারে। তার মধ্যে একটা হল, একে-ওকে ধার দিয়ে বেরানো। ডুবে যাওয়া দেশের কাছে চিনের ‘ম্যান দ্য সেভিয়র’ গোছের ভাবমূর্তিটা বেশ খটোমটো। অর্থাৎ, চিন এমন দেশগুলোকে ধারের অঙ্কে ডুবিয়ে দেয়, যারা শোধ করতে না-পারলে তাদের একেকটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার সুন্দর করে নিজেদের মুঠোর মধ্যে নিয়ে নেয়। যাই হোক, ভেতরে-বাইরে সবদিক থেকে চিনের ইকোনমি এশিয়ান কান্ট্রিজগুলোর মধ্যে দারুণ একটা জায়গায় রয়েছে দীর্ঘ চল্লিশ বছর। তবে ২০২২ সালে অর্থাৎ গত বছর এই প্রথমবারের মতন বিশ্বের যে গড় আর্থিক বৃদ্ধি ছিল তার তুলনায় চিনের একটু কম। চল্লিশ বছরে প্রথমবারের মতন অর্থাৎ, এতগুলো বছর তাদের ইকোনমিক স্টেবিলিটি ছিল চোখে পড়ার মতন। হ্যাঁ, বিষয়টা হল যে, একটা দেশের পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি যত মজবুত হবে সেই দেশের ইকোনমিক স্টেবিলিটি ততটাই মজবুত হবে। চিনের ধারাবাহিকতা সেভাবেই বজায় থেকেছে। আর সেই সুতো ধরেই এখন আইএমএফ জানিয়েছে, হয়ত ২০২২-এ চিনের আর্থিক স্টেবিলিটি একটু নড়বড়ে হয়ে গেছিল, কিন্তু তার মানে তো এটা নয় যে, চিনের চোখে জল দেখা দেবে! বরং ঘুরে দাঁড়াবে চিন সামনের অর্থবর্ষে। চিনের গড় আর্থিক বৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ৫.২ শতাংশের কাছাকাছি। যেটা অন্যান্য দেশের থেকে চিনকে অনেকটাই বেটার পজিশনে রাখবে। আর এবার চিনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে ভারত।
বিবিসির রিলিজ করা মোদীর ডকুমেন্টারি, আদানির সাম্রাজ্য বৃদ্ধিতে কারচুপি – এই সবকিছু যতই মোদী সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করুক না-কেন- ওসব কোন কিছুই হবার নয়। তার কারণ, ভারতের সলিড পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি এবং বিশ্ববাজারে মেরা ভারত মহান হবার মত লারজার দ্যান লাইফ ফিগার। হ্যাঁ, এখন পিএম মোদী বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মানুষদের মধ্যে একজন। আর পপুলারিটি…ধুস, বাইডেন (সব ঝুট হ্যায়), পুতিন (সব ঝুট হ্যায়)…তাহলে আসলটা কী? আসলটা হচ্ছে এই যে, পপুলারিটির দিক থেকে মোদী এখন এক নম্বরে। একইসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী এস.জয়শঙ্করের একেকটা বাক্যবাণ (কিছু ভাইরাল বক্তব্য)। জয়শঙ্করকে মিনিস্টার বলা ঠিক হবে নাকি সোশ্যাল মিডিয়া সুপারস্টার- সেটাও মাঝেমধ্যে গুলিয়ে যায়। যেভাবে অন্যান্য দেশের সাংবাদিক, মন্ত্রীদের তিনি কথার যাদুতে এবং অবশ্যই ‘যাহা বলি, তাহাই করি’ গোছের মনোভাব দিয়ে জিতে নেন, সেভাবে আর কে পারে? আমেরিকার সেনেটর হোক বা আন্তর্জাতিক সমাবেশ- ভারত এখন কলার উঁচিয়ে হাঁটে। তার কারণ, ভারত নিজেও বুঝতে পারছে যে দেশের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট বিশ্ব দরবারে ভালোরকম ম্যাজিক ক্রিয়েট করছে। আর সেদিকেই ইঙ্গিত আইএমএফের। এই বছরেও ভারতের ইকোনমিক গ্রোথ অন্যান্য দেশের থেকে অনেকটাই স্থিতিশীল থাকবে। তাই আইএমএফের পূর্বাভাস, ভারতে ইকোনমিক গ্রোথ ৬.৮% থেকে সামান্য কমে আগামী অর্থবর্ষে দাঁড়াতে পারে ৬.১ শতাংশে। কিন্তু ঐটুকু ভারতের পক্ষে ম্যানেজ করে নেওয়া কোন চাপের বিষয় হবে না। বরং ভারতের ইকোনমিক গ্রোথ আবার বেড়ে পৌঁছে যেতে পারে ৬.৮ শতাংশে। যেখানে বিশ্ব অর্থনীতির গ্রোথ ৩.৪ শতাংশ থেকে কমে ২.৯ শতাংশে দাঁড়াতে পারে, সেখানে ভারত এবং চিনের মত এই দুটি এশিয়ান কান্ট্রি কার্যত দিশা দেখাবে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড। এই সংস্থার বক্তব্য, চলতি বছরে আমেরিকার ইকোনমিক গ্রোথ বাড়তে পারে ১.৪%। আর ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর অবস্থা বরং বেশ কঠিন হবে এই মন্দার সঙ্গে লড়াই করতে। তবে সেখানে অবশ্য রাশিয়ার নাম নেই। তারা মনে করছে, রাশিয়ার আর্থিক বৃদ্ধি ব্যহত হবার সম্ভাবনা বেশ কম। তবে আইএমএফ বিশ্বের সকল দেশকে অন্ধকারে ফেলে দেয় নি। সংস্থার বক্তব্য বিশ্বের এমন বেশ কিছু ছোট অর্থনীতির দেশ রয়েছে যারা তুলনামূলক বেটার পজিশনে থাকবে। কিন্তু এই বছরটা বিশ্ব অর্থনীতিতে দিশা দেখাতে চলেছে ভারত এবং চিন
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ