Agriculture news
এই ছবিটা দেখছেন? ১৯৬৩ সালে আমেরিকার একটি নিউজপেপারে ছবিটা পাবলিশ হয়। ফোন ইন পকেট ইন ফিউচার। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে বিষয়টা খানিক কল্পবিজ্ঞানের গল্প মনে হয়েছিল। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই ছবিটা দেখলে একটু হাসিই পায়। মনে হয়, বিজ্ঞান থেকে অন্তত মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ‘কল্প’ কথাটা বাদ দিলেই হয়ে যেত। কিন্তু বিজ্ঞানের সঙ্গে যেমন কল্পনা মেশে, তেমনই আবার প্রযুক্তির হাত ধরে সেই কল্পনাই চরম বাস্তব হয়ে ওঠে। ধরুন, আপনি হাঁটছেন। হঠাৎ আপনার শরীর খারাপ করছে। জ্বর এসেছে, নাকি বুকে ব্যথা? ইসিজি করতে হবে? নাকি টেম্পারেচার দেখতে হবে? আসলে আপনার শরীরে হলটা কী? এদিকে আশেপাশে ডাক্তার নেই। তখন? সেই সব উত্তর দেবে আপনার জামা। মানে জামা বলে দেবে আপনার জ্বর এসেছে কিনা। জামাই বলে দেবে ইসিজি রিপোর্ট। ভবিষ্যৎ যেভাবে প্রযুক্তির কম্বলে মুড়ছে, তাতে এখন আর কল্পবিজ্ঞান শব্দটা সাহিত্য বা সিনেমার ক্ষেত্রেই খাটে। কিন্তু তাই বলে জামা? বিশ্বাস না-হলেও এদিকেই এগোচ্ছে আমাদের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি। আর বিজ্ঞানের পাশ থেকে কল্পনাকে একেবারে সরিয়ে দিয়ে আপাতত পোশাক খাতে আমূল বদল আনছে নিনফেট। কিভাবে? জানতে হলে প্রতিবেদনটি দেখতে হবে একেবারে শেষ পর্যন্ত- অবশ্যই স্কিপ না করে।
টেক্সটাইল অর্থাৎ জামা কাপড় হচ্ছে আমাদের দ্বিতীয় স্কিন। আর এই টেক্সটাইলে ব্যবহার করা হবে স্মার্ট টেকনোলজি। ঠিক যেমন ল্যান্ড ফোন সরিয়ে এখন পকেটে পকেটে মোবাইল। তেমনই ভবিষ্যতে জামাই বাতলে দেবে আপনার শারীরিক সকল তথ্য। আপনাকে করবে সচেতন। তার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার যে জোরালো হচ্ছে, সেটা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু জামা কিভাবে স্মার্ট হয়ে উঠবে? অবশ্যই তার পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদদের সম্মিলিত মাথা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে হঠিয়ে এই জামাই হয়ে উঠছে স্মার্ট। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই জোর কদমে কাজ করছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট সেন্টার, ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স (ইন্ডিয়া) এবং আইসিএআর—নিনফেট। গত ২৪ জুলাই নিনফেট এর নিজস্ব অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয় “প্রেসিশন এন্ড স্মার্ট টেকনোলজিস ইন টেক্স টাইলস” শীর্ষক ওয়ানডে টেকনিক্যাল সেমিনার। যেখানে তুলে ধরা হয়, টেক্সটাইল খাতে কি আমূল পরিবর্তন হতে চলেছে গোটা বিশ্বে। পিছিয়ে নেই আমাদের ভারত। তাই টেক্সটাইল খাতে এই নবতম প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ। এই বিষয়টা আরও পরিষ্কার করা যাক বরং।
ভাবতে পারছেন, প্রযুক্তির দৌড় কেমন? যেন উসেইন বোল্ট! একটা সময় ছিল যখন কটন, লিনেন বা উল পরা হত। তারপর এলো সিন্থেটিক। এখন আবার আমাদের খোঁজ থাকে কোথায় ১০০% কটনের জামা পাওয়া যায়। এটা বলার কারণ একটাই। পরিবর্তন পৃথিবীর নিয়ম। টেক্সটাইল দুনিয়া সেই পরিবর্তনের হাত থেকে রেহাই পায় নি। এখন আবার আরেকটা বড়সড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে টেক্সটাইল দুনিয়ায়। এবার বিষয়টা হচ্ছে যে, এই যে স্মার্ট পোশাক-আশাকের কথা বলা হচ্ছে তার মানে তো জামার সঙ্গে থাকবে সেন্সর…
এখানেই শেষ নয়। বৃষ্টি পড়লে যাতে ঠাণ্ডা না লাগে আবার গরমেও যেন ভীষণ গরম না লাগে। অর্থাৎ গায়ে যদি স্মার্ট জামা ওঠাতে পারেন তাহলে বডি টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টাও খেয়াল রাখবে এই স্মার্ট জামা। এমনকি আপনার যাতে স্লিপ ডিসঅর্ডার না-হয় সেদিকেও খেয়াল রাখবে এই স্মার্ট জামা! এমনকি ব্লাড প্রেশার কত? সেটাও বলে দেবে এই জামা। মূলত এই স্মার্ট জামার হাত ধরেই মেডিক্যালি একজন কতটা বেনিফিটেড মানে লাভবান হতে পারেন আশা করছি আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। একইসঙ্গে বিশ্ব জুড়ে যে গ্লোবাল ওয়ারমিং–এর বেজায় দাপট চলছে, তার পিছনেও তো কাজ করছে যথেচ্ছ এসির ব্যবহার। মনে করা হচ্ছে, এই স্মার্ট জামা হয়ত ভবিষ্যতে এসির বিকল্প হতে পারে। মানে জামা পরলে বৈশাখী গরমে আর এসির প্রয়োজন পড়বে না? সত্যি হ্যাটস অফ জানাতে হয় প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিকে সুদক্ষভাবে ব্যবহার করা এই সকল মানুষদের। কিন্তু একটা ব্যপার। স্মার্ট জামা না-হয় ধরলাম এতো কিছু করে ফেলতে পারবে। কিন্তু জামা তৈরিতে? মানে আমার বক্তব্য হচ্ছে, স্মার্ট জামা তৈরির পিছনে ঠিক কোন কোন পয়েন্টসগুলো তারা মাথায় রেখেছেন?
আচ্ছা এবার বলি, এই যে স্মার্ট টেক্সটাইল নিয়ে এতো কথা হচ্ছে, সেটা কি পুরোটাই ভবিষ্যতের গর্ভে নাকি এখন থেকেই তার কাজ কিছুটা শুরু হয়ে গেছে? মানে এই স্মার্ট টেক্সটাইল অ্যাপ্লিকেবল কি আদৌ হচ্ছে কোথাও? এই বিষয়ে বিজনেস প্রাইম নিউজের প্রতিনিধিকে সাফ জবাব দিলেন নিনফেটের ডাইরেক্টর ডঃ দীনেশ বাবু শাক্যয়ার। কী বললেন, এবার সেটা শুনে নেওয়া যাক তাহলে।
ভারতের অন্যতম বৃহৎ ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে টেক্সটাইল। লক্ষ লক্ষ মানুষের রুজিরুটি নির্ভর করে টেক্সটাইল খাতে কাজ করার জন্য। ভারতে টেক্সটাইল বহুমুখী কাজে ব্যবহার হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়েও প্রচুর জামাকাপড় বিদেশে রপ্তানি হয়। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয় এই ক্ষেত্রটি থেকে। একটা সময় ভরসা ছিল হ্যান্ডলুম। আজ তাতে যুক্ত হয়েছে কম্পিউটার, ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন রকম প্রযুক্তি। সব মিলিয়ে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে যে জামা কাপড় বা বস্ত্র তৈরি হবে তা যেন জীবন যাত্রার মানকে উন্নত করে এবং সর্বসাধারণের পক্ষে সহজসাধ্য হয়। সর্বোপরি পলিউশন কমাতে পারে। আশা করি বুঝতেই পারছেন যে টেক্সটাইল খাতে অদূর ভবিষ্যতে কি ম্যাসিভ পরিবর্তন আসতে চলেছে। প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে নিনফেট যেভাবে বাকিদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তারপর দিনের শেষে তাকে কুর্নিশ না জানালেই নয়। প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার কি মতামত? জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন।
সুব্রত সরকার
বিজনেস প্রাইম নিউজ