Story

একে দু’বছর যাবত করোনাজনিত লকডাউন। দুয়ে অকালবৃষ্টি। সবমিলিয়ে নদীয়ার কুটিয়ালী গ্রামগুলো একটা সময় ব্যপক আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে। এক বিশাল আর্থিক কর্মকাণ্ডে কার্যত তালা পড়ে যায়। কয়েক হাজার মানুষের পেট জড়িয়ে থাকে এই কুটিয়ালি ব্যবসায়। তবে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করায় সেই দুর্দশা ক্রমশ ঘুচতে চলেছে ঠিকই। কিন্তু সমস্যা রয়েছে অন্য জায়গায়।
নদীয়ার হরিণঘাটা নগরউখড়ার বেশ কয়েকটি গ্রাম কুটিয়ালী ব্যবসা অর্থাৎ ধান কিনে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে চাল করে এবং তা জেলা এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করার সঙ্গে যুক্ত। এই গোটা কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে থাকেন হাজার তিনেক মানুষ। ব্যবসায়ীরা এই স্থানীয় অঞ্চল থেকে যেমন ধান সংগ্রহ করেন তেমনি বড় অংশের ধান আসে মেদিনীপুর এবং বর্ধমান থেকে। এদিকে লকডাউনে রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে চালও তুলে দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে সামগ্রিক চালের চাহিদা ঠেকে তলানিতে। আর সেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। মোটা লোকসানের শিকার হতে হয় এই মানুষগুলিকে। আর বড়সড় লোকসানের মধ্যে পড়তে হয় সেই মানুষগুলিকে যারা পুঁজি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব। তবু বেঁচে থাকার দায় নিয়েই তাঁরা এখন বড় ব্যবসায়ীর ধান সেদ্ধ শুকনো করে কোনরকমে চালাচ্ছেন। বস্তাপ্রতি মজুরি মিলছে ৫০ টাকা। তাই এলাকা ব্যবসার খাতিরে জমজমাট হয়ে উঠলেও কোথাও যেন না পাওয়ার রেশ থেকেই গিয়েছে।
তবে শুধু নদীয়া বলেই নয়। এখানে কাজ করতে আসেন বিভিন্ন জেলার মানুষ। সুন্দরবনের মিনাখাঁ এবং হাড়োয়া ব্লকের সাতশোর বেশি মানুষ এখানে কাজের সন্ধান পেয়েছেন। যাদের মজুরি ৩৫০ টাকা মত। বছরে ৮-৯ মাস কাজ চলে। লকডাউন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য এই কাজে তালা পড়ে গেলেও এখন আবার স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় ফের নিজের ছন্দে ফিরছে নগরউখড়া এবং কাস্ট ডাঙ্গা এলাকা। ধান-চালকে কেন্দ্র করে চলছে এক বিরাট কর্মকাণ্ড। গড়ে উঠেছে ধান ভাঙার মিল, চাল বাছাই মিল এবং রাইস মিল। চাল যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত সহ ভিন রাজ্যেও। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষের রুজিরুটি রয়েছে এখানেই। বলছেন হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গৌতম কীর্তনীয়া।
এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে রয়েছে ৩০টি ধান ভাঙার মিল, দশটি শর্টেজ মিল এবং দুটি রাইসমিল। এখানেও যুক্ত রয়েছেন পাঁচশোর বেশি মানুষ। মোটর ভ্যান, পায়ে টানা ভ্যান, এমনকি ছোট বড় ট্রাকগুলো নিয়মিত ব্যস্ত থাকছে ধান নিয়ে আসা এবং চাল নিয়ে যাওয়ার কাজে। তাই প্রকৃতির রোষে পড়ে এবং করোনার আবহে যে কর্মব্যস্ততার ছবিটা ক্রমশই উধাও হয়ে যাচ্ছিল, এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই কর্মকাণ্ডের চেনা ছবিটাই আবার ফিরতে শুরু করেছে। সবমিলিয়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে নদীয়ার হরিণঘাটার এই কুটিয়ালী ব্যবসা।
সুব্রত সরকার
নদীয়া