Trending
২১ শে জুলাই, ২০২৩। একদিকে হাজার কথার প্রতিশ্রুতিতে কাঁপছে ২১-এর মঞ্চ। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে পুড়ে ছাই হচ্ছে হাজার হাজার গরীব মানুষের স্বপ্ন। দাউদাউ করে জ্বলছে হাওড়ার মঙ্গলা হাট। কালো ধোঁয়ায় ঢাকছে আকাশ। রাতভর দমকল ইঞ্জিনের আওয়াজ। থেকে ধুন্ধুমার শব্দ আগুনের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তুলছে। টিভিতে সেই দৃশ্য দেখে যতবার আপনি কান চাপা দিচ্ছেন, ততবার সেই শব্দগুলোই ওই গরীব ব্যবসায়ীগুলোর বুকে পেরেক গেঁথে দিচ্ছে। যন্ত্রণায় বুক ফেটে যাচ্ছে। মুখ খুললে শুধু একটাই কথা। সবটা শেষ! আর কিছু বাকী নেই।
এশিয়ার বৃহত্তম কাপড়ের হাট এই মঙ্গলা হাট। প্রায় ৩০০ বছর ধরে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের সাক্ষী। হাওড়া, হুগলী ও মেদিনীপুরের তাঁতিদের অনুরোধে তৎকালীন হাওড়ার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র চড়কডাঙ্গায় শুরু হয় মঙ্গলা হাটের জয়যাত্রা। হাওড়া আন্দুলের মল্লিক পরিবারের ভূমিকা এ বিষয়ে অস্বীকার করা যায় না। আর আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই হাটকে ঘিরেই হাওড়ার এত এত ইন্ডাস্ট্রি ডেভলপড হয়েছে। রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কাছে তো বটেই ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কাছেও এই হাট হচ্ছে মা অন্নপূর্ণা। আজ এই হাটের জন্যই তাদের মোটা ভাত কাপড়ের অভাব হয় না। প্রত্যক্ষ ভাবেই শুধু কয়েকশ ব্যবসায়ী এর সঙ্গে যুক্ত। আর এশিয়ার বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের হাট হওয়ায় এর সঙ্গে পরোক্ষভাবে কতজন মানুষ অন্ন-বস্ত্রের জোগাড় করেন, সেটুকু হিসেব তো আশা করি রাখেন। আজ এতগুলো মানুষের অন্নদাতা বিপন্ন। মাটির সঙ্গে মিশে গেছে দোকানগুলো। ধূসর ছাই ছাড়া কিছু নেই। আগুনের লেলিহান শিখা এখনও নিভে যায়নি।
মূলত বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে দোকানগুলো তৈরি। সঙ্গে প্রচুর কাপড় থাকায় আগুন ছড়াতে দেরী হয়নি। তবে, বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর অভিযোগ আগুন লাগানো হয়েছে। এবং সেটা সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে। নাম উঠে আসছে শান্তিরঞ্জন বাবুর। এই মঙ্গলা হাটের মালিকানা এখন যার কব্জায়। ভদ্রলোক পেশায় প্রমোটার। হাট সরিয়ে উঁচু কমপ্লেক্স হবে। তাই ব্যবসায়ীদের উঠে যাওয়ার কথা বলে আসা হচ্ছিল। এছাড়াও এছাড়াও তাদের চাপ দিয়ে টাকা আদায় চলতই। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে চলে আসছে এই ঘটনা। আর আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় এর তীব্র প্রতিবাদও করি। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে- মুখে কুলুপ এঁটেই রাখি। তবে সরকারকে জবাব দিতেই হয়। হয় কী? কারণ ভোটযুদ্ধের শেষে আবিরের রং বদলালেও, সাধারণ মানুষের দিন বদলায় না।
জানি। যারা এর সঙ্গে ডিরেক্টলি কানেক্টেড নন , তাদের কাছে এসব খবরের রেষ খুব সাময়িক। দু’চার দিনের আহা-উহু। তারপর সবটা থিতু। কিন্তু মঙ্গলা হাট অগ্নিকাণ্ড নিয়ে ভাবুন। দেশের নয়। এশিয়ার সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের হাট। তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে কয়েক হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা। ক্ষয়ক্ষতিটা বুঝতে পারছেন? ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা নিয়ে যতই আপনি কথা বলুন না কেন, ৩০০ বছর পরেও মঙ্গলা হাটের যে জনপ্রিয়তা রয়েছে- তা কিন্তু নিমেষে মাত দিতে পারে আপনার সেই কথাকে। কাজেই, মঙ্গলা হাট অগ্নিকাণ্ড নিয়ে ভাবুন। নিজের ঘরে আগুন লাগলে ঠিক যতটা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন, ততটাই অ্যাক্টিভ হোন। প্রয়োজনে প্রশ্ন তুলুন।
যদি এই আগুন সত্যি সত্যিই ইচ্ছাকৃত লাগানো হয়ে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রীমশাই। ঘটনার পূর্ণ তদন্তের আশ্বাসও মিলেছে তাঁর তরফে। তবে তাদের কাছে শুধু একটাই অনুরোধ। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে যে ভবিষ্যৎবাণী মানুষ পেল। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন খবরও যেন মানুষ পায়। যেন, ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হয়। গরীব মানুষগুলো আজ সর্বহারা। বাংলার অন্যতম প্রধান পুঁজিক্ষেত্র আজ ভস্মীভূত। এর যেন সঠিক বিচার হয়। বাংলার ব্যবসার এই প্রাণকেন্দ্রের মানুষগুলোর জন্য যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয় সরকার।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ