Trending
বাংলা এগিয়ে। আচ্ছা, সত্যিই কি এগিয়ে?
বাংলায় ব্যবসা হচ্ছে। আচ্ছা, সত্যিই কি হচ্ছে?
বাংলা অনেক বেশি এমপ্লয়মেন্ট জেনারেট করছে, আচ্ছা সত্যিই কি করছে?
বাংলা ইকোনমি জেনারেট করার দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে, সত্যিই কি তাই?
এই প্রশ্নগুলো কেন করলাম জানেন? বাংলার জন্য। আমাদের জন্য। আমরা মানে আমরা যারা এই বাংলার গান গাই সারাক্ষণ তাঁরা আজ সত্যিই কি বাংলার বর্তমান অবস্থা দেখেও আগের মতনই পজেসিভ? মনে হয় না। বাংলা থেকে এখনো অনেক মানুষ রুজিরুটির টানে পরিযায়ী শ্রমিক হচ্ছেন। বাংলার অনেক ইয়ুথ ভালো আয়ের জন্য পাড়ি দিচ্ছেন ভিন রাজ্যে। তারপর কি সেই প্রশ্নটা উঠছে না যে তাহলে ঘটা করে বছর বছর বিজিবিএস কী দিচ্ছে আমাদের?
কোন স্পেসিফিক পলিটিক্যাল পার্টিকে উদ্দ্যেশ্য করে এই প্রতিবেদন নয়। কিন্তু মানতে তো হবেই যে, আজ বাংলায় কাজের পরিবেশ তেমন তৈরি হচ্ছে না। কেন? একটু এদিক ওদিক ঘেঁটে যেটা দেখা যাচ্ছে, বাংলার খুব বড় সংখ্যায় ইয়ুথরা পাড়ি দিচ্ছেন ভিন রাজ্যে। তাঁদের চোখে কি এখনো তাহলে বাংলা কর্মনাশা? আমরা যদি দেশের অন্যান্য রাজ্য বা মেজর সিটিগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব এখনো বড় বড় অফিস এবং স্পেশ্যালি আইটির জন্য বাংলার ইয়ুথরা ভরসা রাখছেন ব্যাঙ্গালোর, গুরগাও, পুনে, নয়ডা বা হায়দ্রাবাদের মত শহর। তাদের কাছে কলকাতা এখন শুধুই হাতেখড়ির জায়গা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অর্থাৎ, কর্ম জীবনের একেবারে শুরুটা এখান থেকে করেই তারপর উচ্চবেতনের মাইনের জন্য তাঁরা ভিন শহরে চলে যাচ্ছেন। কারণ একটাই। স্কোপ। ইয়ুথদের হাতে যে পরিমাণ স্কোপ অন্যান্য মেজর শহরগুলো ছড়িয়ে রেখেছে, সেখানে মুঠো বন্ধ করে রেখেছে কলকাতা। আর যে কারণে কলকাতা বা বাংলা এখনও কোন সুবিশাল কর্মক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে নি। ইয়ুথরা মনে করছেন, রাজ্যের বাইরে গিয়ে ব্যাঙ্গালোর নয়ডা পুনের মত জায়গায় কাজ করলে তাঁদের ভবিষ্যৎ অনেকটাই উজ্জ্বল হবে। যা আবারও আমাদের কাছে একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে দিচ্ছে তাহলে কি সত্যিই কলকাতায় ইয়ুথদের কোন ভবিষ্যৎ নেই? সেটা নেই কেন? তার জন্য দায় বর্তায় কার উপরে? টাটার চলে যাওয়া?
বাংলা থেকে টাটার বিদায় অন্য ইন্ডাস্ট্রিইয়াল জায়ান্ট কোম্পানিগুলোকে ভয়ে ফেলে দিয়েছিল। তার কারণটা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। সেটা হল, যখন কোন বড় সংস্থা কোন শহরে বা কোন জায়গায় নিজের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে আসে, তখন সেই জায়ান্ট সংস্থাকে দেখে অন্যান্য জায়ান্ট সংস্থারাও আসে। আর এই সকল জায়ান্ট সংস্থাগুলোকে কেন্দ্র করে ছোট, মাঝারি এমন আরও সংস্থা তৈরি হয়। সবমিলিয়ে প্রচুর এমপ্লয়মেন্ট জেনারেট হয়। বাংলার ভাবমূর্তি এবং বাংলার কাজের পরিবেশ সেই মুহূর্তে দেশের কাছে ফিকে হয়ে গেছিল যখন ন্যানোকে অগস্ত্যযাত্রা করতে হয়েছিল। খুব চোখ কান খোলা রাখলে দেখা যাবে, তারপর কিন্তু বাংলা সেইভাবে কোনরকম সংস্থাকে নিয়ে আসতে পারেনি। আর এটা ক্রমশই বাংলার শিক্ষিত ইয়ুথদের কাছে ক্রমশই হতাশার জায়গা তৈরি করছে। কারণ একটা শহরে বা একটা রাজ্যে বিপুল পরিমাণ এমপ্লয়মেন্ট জেনারেট করার জন্য যে দুর্দান্ত প্ল্যানিং এবং অবশ্যই একটা অ্যাসিওরেন্সের প্রয়োজন হয়, মনে হয় দিনের শেষে তার বড় অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই বাংলার মাটিতে। আপনারা দেখবেন, কলকাতায় মাথা উঁচু করা আবাসনের সংখ্যা তো কম নয়। কিন্তু সেই আবাসনের যা দাম, সেটা ছা-পোষা বাঙালির পকেট ফ্রেন্ডলি নয়। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্যই আকাশচুম্বী আবাসন। তাছাড়া এখন যদি খেয়াল করেন, অন্তত কলকাতা শহরে, তাহলে আপনি তেমন সুবিশাল আবাসন দেখতেও পাবেন না। আর যেটুকু আছে সেটাও জনসংখ্যার নিরিখে বেশ কম। তার কারণ? কারণ একটাই। কিছু মানুষের হাতে যথেষ্ট টাকা, আর বাকিদের হাত ফক্কা। কোন দেশের ইকোনমি মজবুত করার জন্য তার পিছনে কাজ করে সেই দেশের ইয়ং পিপল। দেখা যাচ্ছে, বাংলায় তার অভাব সর্বত্র। কিরকম? আমাদের বাংলায় শিক্ষিত ইয়ুথের অভাব নেই। কিন্তু কলকাতা এখন কর্মজীবনের পাঠশালা হয়েই থেকে যাচ্ছে। তারপর অধিকাংশ ইয়ুথ ভবিষ্যৎ মজবুত করার জন্য এই সকল রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। সেখানেই সেটলড হচ্ছেন আর আবাসনে ইনভেস্ট করছেন। অর্থাৎ এই সকল শহরে স্কাই টাচিং আবাসনের ডিম্যান্ড সবসময় থাকছে ওপরের দিকে। ফলে এই সকল শহরে আমরা অনেক বেশি আবাসন দেখতে পাব, র্যাদার দ্যান বাংলা। কিন্তু এভাবে চলবে কত দিন? এর ফলে তো দিনে দিনে বাংলা আরও পিছিয়ে যেতে থাকবে।
এছাড়াও আরেকটা বড় ইস্যু হতে পারে দুর্নীতি। হ্যাঁ, এই বাংলার বুকে প্রতিদিন যেভাবে ইডি, সিবিআই খোলা মাঠে ছুটে বেরাচ্ছে এবং একের পর এক রাজ্য সরকারের মাথাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুঁড়ছে, সেটাও হয়ত কোনভাবে কপালে ভাঁজ ফেলে দিচ্ছে বাংলার ইয়ুথদের। কারণ তাঁরা মনে করছেন, যে শহরে এতো এতো টাকার দুর্নীতি, সেই শহরে আর কতটুকুই বা ব্যবসা হবে? আর সবথেকে বড় কথা, ব্যবসা করার মত কিভাবে এনভায়রনমেন্ট তৈরি হবে? আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বাংলার ভাবমূর্তি যেন দিনে দিনে আরও অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে। আর সেখান থেকেই উঠছে এই সব প্রশ্ন। তাহলে? উত্তর জানা নেই। তবে মনের একটা কথা বলা যেতে পারে। আজ যে বাংলার বুকে ব্যবসা হচ্ছে না বলেই মনে করছেন অনেকে, সেই বাংলায় ব্যবসা কিন্তু হওয়া কোনভাবেই অসম্ভব নয়। খেয়াল রাখবেন, চাঁদ সদাগর থেকে ঠাকুর পরিবার। এই বাংলা বহু জাত ব্যবসায়ীদের এই দেশে দিয়েছে। কিন্তু আজ সেই বাংলার ভাঁড়ারের কী করুন পরিণতি! তাই সবার আগে বাংলার ভাবমূর্তি স্পষ্ট করতে হবে, স্বচ্ছ করতে হবে। বাংলায় দুর্দান্ত কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। গোটা বাংলা জুড়ে এমন সেই কাজের পরিবেশ তৈরি হবে, যে বাংলার ইয়ুথ তো বাংলা ছেড়ে যাবেই না, বরং অন্য রাজ্য থেকেও ইয়ুথরা আসবেন। আর তবেই না ইকোনমি আরও বেশি জেনারেট হবে। খেয়াল রাখতে হবে, বাংলা এখনো দেশের অন্য প্রান্তে পরিচিত শুধু কম পারিশ্রমিকে লেবার পাবার জন্য। সেই দিন কিন্তু শেষ করতেই হবে। বাংলার ইয়ুথদের বোঝাতেই হবে, বাংলা ছেড়ে কোথাও যাবার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তার জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে যিনি থাকবেন, তাঁকে তো এগিয়ে আসতেই হবে। আর তিনি যদি সদর্থক স্টেপ নেন, তাহলেই বাংলা এগোবে। আর শেষে যদি প্রশ্ন করেন, তাহলে কতদিন সময় লাগতে পারে? সেই উত্তর বিজনেস প্রাইম নিউজ দিতে পারবে না। বিজনেস প্রাইম নিউজ শুধু কর্মব্যস্ত বাংলার ছবিটাই দেখতে চায়। তার জন্য কোন আলাদা রং দেখার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ দিনের শেষে যে বিজনেস প্রাইম নিউজ বাংলাকে ভালোবাসে, বাংলার ইয়ুথদের ভালোবাসে। আপনাদের মতামত জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে লাইক করুন শেয়ার করুন। আর নতুন হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ