Trending
২৩ কোটির দেশ পাকিস্তান। যে দেশটা পুরোটাই চলছে এখন ধারের টাকায়। আজ পাকিস্তান প্রায় সর্বস্বান্ত হবার মুখে। পাকিস্তানের টাকার ভ্যালু দিন দিন কমছে। গ্রোথ রেট কমছে। মানুষের আয় কমছে। আর অন্যদিক দেখলে বলতে হবে, পাকিস্তানের মানুষদের গরিবিয়ানা দিন দিন বাড়ছে। ইনফ্লেশন রেট বাড়ছে। পিঁয়াজ, আটা থেকে শুরু করে পাকিস্তানের প্রত্যেকটা পণ্যের দাম আজ ঊর্ধ্বমুখী। একইসঙ্গে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপও। পাকিস্তানের প্রায় সমগোত্রীয় দেশগুলোর কথা যদি ধরি, যেমন বাংলাদেশ বা ইন্দোনেশিয়া- তাহলে বলতে হবে এই দেশগুলোর অবস্থাও আজ পাকিস্তানের থেকে অনেকটাই ভালো। আজ পাকিস্তানকে শ্রীলঙ্কা, কঙ্গো বা আফ্রিকার কোন গরীব দেশের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। পাকিস্তান আজ প্রত্যেকটা জায়গা থেকে মোটা অঙ্কের ধার নিয়ে বসে রয়েছে। এমনকি ভারতের কাছ থেকেও ধার নিয়ে রেখেছে পাকিস্তান। অবাক হচ্ছেন? এটা কিন্তু একেবারে সত্যি কথা। আর সব মিলিয়ে পাকিস্তানের মাথায় ধারের অঙ্ক চেপে রয়েছে ৩০০ বিলিয়ন ডলার মতন। যা পরিশোধ করার মত অবস্থা পাকিস্তানের আর নেই। কিন্তু কোথা থেকে এতো এতো টাকা ধার নিয়েছে পাকিস্তান? ভারতের কাছেই বা পাকিস্তানের কত ধার রয়েছে? আসুন, আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা সারা যাক এই গোটা বিষয়টা নিয়ে।
আপনারা অনেকেই ভাবতে পারেন যে, একটা দেশের কেন ধার নেবার প্রয়োজন পড়ে? কোন দেশ ধার নেবার জন্য নিজের দেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বা ফিনানশিয়াল ইন্সটিটিউশনের পাশাপাশি বাইরের বিভিন্ন দেশ, ব্যাঙ্ক এবং ফিনানশিয়াল ইনস্টিটিউশন থেকে মোটা অঙ্ক ধার করে থাকে। যেমন কোন দেশ যদি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের কথা ভাবে, তাহলে সেই দেশ লোন নেয় ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক থেকে। একইভাবে কোন দেশের আর্থিক অবস্থা খুব একটা স্ট্রং না-থাকলে তখন সেই দেশ লোন নেয় আইএমএফ বা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড থেকে। এভাবেই অন্যান্য দেশ থেকে লোন নেওয়া হয় এবং ধীরে ধীরে সেই লোন মিটিয়েও দেওয়া হয়। প্রত্যেকটা দেশ নিজের ডেভেলপমেন্টের জন্য কম-বেশি লোন নিয়েই থাকে। আর যে কারণে অনেকেই বলে থাকেন, ডেট ইজ আ বেস অফ মডার্ন ইকোনমি। পাকিস্তানের কথা যদি ধরি তাহলে বলতে হবে, এই দেশের ইন্টারনাল ডেট এবং এক্সটারনাল ডেটের একটা বড় ফারাক রয়েছে। একটা ছোট উদাহরণ দিয়েই বলছি। ২০২২ সালে পাকিস্তানের রেভিনিউ ছিল ৪৫ বিলিয়ন ডলার মতন। কিন্তু এক্সপেন্স ছিল ৭৫ বিলিয়ন ডলার। তার মানে ডেফিসিট ভ্যালু ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার মতন। এর ফলে পরের বছর দেশ চালাবার মতন হাতে টাকা থাকে না। তাই আবারও লোন নেবার প্রয়োজন পড়ে পাকিস্তানের।
ধার মূলত দু’ভাবে নেওয়া হয়। একঃ এক্সটারনাল ডেট যা নেওয়া হয় আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক বা এডিবির মত আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে। আর হচ্ছে ইন্টারনাল ডেট, যা নেওয়া হয় নিজের দেশের ব্যাঙ্ক, ফিনানশিয়াল ইনস্টিটিউশন বা পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। পাকিস্তানের ধার কত, এদিকে যদি নজর দেওয়া হয়, তাহলে বলব, পাকিস্তানের ধারের অঙ্ক ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ছিল ৬৩ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি বা ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। যা পাকিস্তানের জিডিপির ৮৯ শতাংশের থেকে সামান্য বেশি। গত চার বছরে পাকিস্তানের ধারের অঙ্ক লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ২০১৮ সালে যেখানে পাকিস্তানের ধারের অঙ্ক ছিল ২৯ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি রুপিজ, সেখানে ২০২২ সালে ধারের অঙ্ক পৌঁছে যায় ৬৩ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি রুপিজে। অর্থাৎ চার বছরে পাকিস্তানের ধারের অঙ্ক দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর পাকিস্তানের প্রত্যেকটি মানুষের মাথায় ধার রয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ পাকিস্তানি রুপি। এখানেই বলি, পাকিস্তানের এক্সটারনাল ডেট বা বাইরে ধার রয়েছে ১৩৬ বিলিয়ন ডলার মতন। যা ঐ দেশের জিডিপির ৪০% মতন। ভেবে দেখুন, ২০১৮ সালে পাকিস্তানের এক্সটারনাল ডেট যেখানে ছিল ৯৫.২ বিলিয়ন ডলার, সেটাই ২০২১ সালে বেড়ে হয়েছিল ১২৭ বিলিয়ন ডলার এবং আর ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ১৩৬ বিলিয়ন ডলার মতন। এবার দেখা যাক, এক্সটারনাল ডেট হিসেবে পাকিস্তান কার থেকে কত টাকা ধার নিয়েছে?
ইউএই- ৩ বিলিয়ন ডলার
সৌদি- ৩ বিলিয়ন ডলার
আইএমএফ- ৭ বিলিয়ন ডলার
প্যারিস ক্লাব- ১১ বিলিয়ন ডলার
ইউরো বন্ডস এবং সুকুক- ১২ বিলিয়ন ডলার
সিপেক চায়না- ২০ বিলিয়ন ডলার
মাল্টিল্যাটারাল ডোনার্স- ৩৩ বিলিয়ন ডলার
ওআইসি, জি২০- ৪৪ বিলিয়ন ডলার
যার থেকে একটা কথা বোঝা যাচ্ছে যে, পাকিস্তান আজ পুরো বিশ্ব থেকেই ধার নিয়ে বসে রয়েছে। দেখুন, ইন্টারনাল ডেট নিলে সেটা পরিশোধ নিজের সময় মত করা যায়। কিন্তু বাইরে থেকে ধার নিলাম, এদিকে সময়মত টাকা ফেরত না-দিলে ভালো সমস্যা রয়েছে। কারণ বাইরে থেকে ধার নিলে ইন্টারেস্ট রেট অনেকটা বেশি থাকে, সঙ্গে ক্রেডিট রেটের ব্যপারটাও রয়েছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শোধ করা প্রয়োজন। যদি কোন দেশ বাইরের থেকে ধার নিয়ে তাড়াতাড়ি শোধ করতে না-পারে তাহলে বিভিন্ন ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ঐ দেশের ক্রেডিট রেটিং কমিয়ে আনে। এর ফলে, সেই দেশে বিনিয়োগ করা একেবারে কমে যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি তখন লোন দিতে গড়িমসি করতে শুরু করে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। কারণ এই দেশের ক্রেডিট রেটিং এখন নেগেটিভে চলে গিয়েছে। দেখুন, পাকিস্তানের থেকে অনেক বেশি ধারের বোঝা কাঁধে রয়েছে আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি বা জাপানের মত দেশগুলির। তারা সেই টাকা নিজেদের ডেভেলপমেন্টের কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান নিজের গ্রোথ, ডেভেলপমেন্টের তোয়াক্কা করেনি। বরং নিজের সামরিক ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যপারে মনযোগী হয়েছে। আর যে কারণে পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়া সত্ত্বেও আজ গরিবিয়ানার কবলে পড়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সেনা, আধিকারিকরা বড়লোক হয়েছেন, আর পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ আজ চরম দুর্দশায় পড়তে বাধ্য হয়েছে। কারণ, না তৈরি হয়েছে চাকরির বাজার। না এসেছে গ্রোথ, না হয়েছে ডেভেলপমেন্ট। এবার জানা যাক, পাকিস্তান ভারতের কাছ থেকে কত টাকা ধার নিয়ে বসে রয়েছে। আগেই বলেছি, আইএমএফের থেকে পাকিস্তান ৭ বিলিয়ন ধার নিয়ে বসে রয়েছে। আইএমএফ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। যাকে চালানো হয় বিভিন্ন দেশের ফান্ডিং দিয়ে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শেয়ার রয়েছে আমেরিকার, ১৭ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে ভারতের শেয়ার রয়েছে ২.৭৬% মতন। সেই হিসেবে দেখলে, ভারত পাকিস্তানের থেকে টাকা পায় ১৯০ মিলিয়ন ডলার মতন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বিজনেস টুডে’র একটি তথ্য বলছে, ব্রিটিশরা বিদায় নেবার সময় ভারতের ঘাড়ে চাপিয়েছিল ২৩৩২ কোটি টাকার ধার। যার মধ্যে পাকিস্তানকে দিতে হত ৩০০ কোটি টাকা আর বাকি ধার শোধ করতে হত ভারতকে। কিন্তু পাকিস্তান আজ পর্যন্ত ভারতকে সেই ৩০০ কোটি টাকা শোধ দেবার নামগন্ধ করেনি। এছাড়াও দেশভাগের সময় পাকিস্তান ৭৫ কোটি টাকা ধার করেছিল। আর এই তিনশো কোটি টাকা যদি এখনকার সময়ে ফেলা হয়, এবং ইনফ্লেশন অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট করা হয়, সঙ্গে ৭% ইন্টারেস্ট রেট যোগ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, ভারত পাকিস্তানের থেকে পাবে প্রায় ৫.৬ বিলিয়ন ডলার।
তার মানে বুঝতে পারছেন, পাকিস্তানের থেকে কত টাকা ভারত পাবে? আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তান যেভাবে ধার নেবার ট্র্যাডিশন ধরে রেখেছে, তারপর এই টাকা ফেরত পাবার আশা ভারত না-করলেও পারে। কারণ ভারতকে এই টাকা ফেরত দেবার মত ক্ষমতা পাকিস্তানের নেই। উল্টে যেদিকে যাচ্ছে, তাতে পাকিস্তানের অবস্থা না শ্রীলঙ্কার মতন হয়।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ