Daily

দেশ আর বিদেশের বেশ কয়েকটি সাংবাদ মাধ্যমের দাবি ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থার তৈরি পেগাসাস সফটওয়ার ব্যবহার করে এদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সমাজকর্মী এমনকি আইনজীবী আর সাংবাদিকদের ফোনের মাধ্যমে নজরদারী চালান হচ্ছিল। সংবাদ সংস্থায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮-২০১৯ সালের মধ্যেই মূলত নজরদারি চালান হয়েছিল। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে কী এই পেগাসাস সফটওয়ার? তারই ব্যাখ্যা দিলেন সাইবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ আর কেরল পুলিশের উপদেষ্টা বিনোর ভট্টাথিরীপাদ।
ইজরায়েলি অ্যাপে ভারত-সহ ১০টি দেশে চলছিল গোপন নজরদারি। বিশ্বমিডিয়ায় অন্তর্তদন্ত নাড়িয়ে দেয় সবাইকে।
তাঁর কথায় পেগাসাস একটি অ্যাপ। এই অ্যাপটি যেকোনও ফোনে বা কম্পিউটারে ইনস্টল করা যায়। আবার এটি অটোমেটিক ইনস্টল হয়ে যেতে পারে। সাধারণের ফোনে একটি বেনামি লিঙ্কের মাধ্যমে সেটি আসতে পারে। সেই লিঙ্কে ক্লিক করতেই ব্যবহারকারীর অজান্তেই ইনস্টল হয়ে যায় পেগাসাস। এসএমএস আর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এই লিঙ্ক আসতে পারে।
পেগাসাস ফোনে ইনস্টল হলে কথাবার্তা শোনা যায় ফোনের অন্যপ্রান্তে বসে, ম্যাসেজ বা হোয়াসঅ্যাপ চ্যাটের মাধ্যমে বলা কথাও অন্যপ্রান্ত থেকে জানা যায়। পেগাসাসের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া যায় বলে সাবধান করেছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
কি কি বিধিনিষেধ রয়েছে জেনে নিন:
1.হোয়াটসঅ্যাপ বা টেক্সট ম্যাসেজের মাধ্যমে আসা যেকনোও লিঙ্ক ক্লিক করতেই নিষেধ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
2.বেনামী লিস্ক বা ভয়েস কল এড়িয়ে চলতেই পরামর্শ দিয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞ। কারন ভয়েসকলের মাধ্যমেই অন্যের ফোনে পেগাসাস সফটওয়ার ইনস্টল করা যায়।
3. তুলনামূলকভাবে আইফোন কিছুটা হলেও নিরাপদ পেগাসাস থেকে।
বলা হচ্ছে পুরাণের পক্ষীরাজ ঘোড়াই আধুনিক বিশ্বের পেগাসাস, জানুন কীভাবে এটি আপনার ফোনেও প্রবেশ করতে পারে
পেগাসাসের মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার ফোনে থাকা ফোটো রেকর্ডিং, পাসওয়ার্ড, কললগ, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার পোস্টগুলিও অ্যাক্সেস করতে পারে। কিন্তু এটা পুরোপুরি হবে আপনার অজান্তেই। তাই সাবধানেই ফোন ব্যবহার করতেই পরামর্শ দিচ্ছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা ।
এছাড়াও অচেনা মেসেজ বা ইমেল আজকাল এড়িয়ে চলেন অনেকেই। কারণ ওই সব লিঙ্কে ক্লিক করা মাত্রই কোনও স্পাইওয়্যার ইন্সটল হয়ে যেতে পারে আপনার ফোন বা কম্পিউটারে। তাই অচেনা ইমেল পেলেই ডিলিট করারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে । কিন্তু একটা অচেনা নম্বর থেকে আসা ভয়েস কল বা হোয়াটসঅ্যাপ অডিয়ো কি সব সময়েই না দেখে ছেড়ে দেওয়া যায়? সাবধান হওয়ার জন্য আপনি না দেখতেই পারেন। তবে তাতে স্পাইওয়্যারটির কিছু এসে যায় না। ভয়েস মেসেজ বা হোয়াটসঅ্যাপ কল আপনার ফোনে ঢুকলেই তার কাজ শুরু করে দেবে। সমানে দেখে চলেছে আপনার মেসেজ, কন্ট্যাক্ট, ছবি, ভিডিয়ো থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছু।
এমনই ক্ষমতা রাখে পেগ্যাসাস। শুধু তাই নয় এই স্পাইওয়্যার দখল করে নিতে পারে ফোনের ইয়ারফোন বা ক্যামেরার অ্যাক্সেসও। অর্থাৎ আপনি কী করছেন আর কী বলছেন তার ভিডিয়ো হ্যাকারদের হাতে চলে যাওয়া শুধু কয়েকটা ক্লিকের অপেক্ষা, এবং অবশ্যই আপনার অজান্তে। এই সব আপনার ফোনে দিনের পর দিন চলতে থাকলেও ঘুণাক্ষরেও বোঝার উপায় নেই কারওর। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ তো ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড’ তা হলে সে সব কিছুও দেখতে পায় পেগ্যাসাস? আসলে যিনি মেসেজটি পাঠাচ্ছেন, আর যিনি পড়ছেন তার মাঝে যাতে আর কেউ পড়তে না পারে, তার ব্যবস্থা করে হোয়াটসঅ্যাপ। কিন্তু স্পাইওয়্যার যে আপনার মোবাইলেই ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাই এনক্রিপশনের থেকে উদ্ধার করার পরে যখন তা আসল তথ্য তুলে ধরছে মোবাইলের স্ক্রিনে, তখনই আপনার সাথে সাথেই তথ্যটি পড়ে ফেলছে পেগাসাস।
ফ্রান্সের একটি সংস্থার থেকে শুরু করে মোট ১৭টি সংস্থা নিয়ে ‘পেগ্যাসাস প্রোজেক্ট’ নামে একটি প্রকল্পে তদন্ত করতে শুরু করেছিল, যার রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে রীতিমতো চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
ব্যুরো রিপোর্ট