Trending
Screen appears with the quote:
“All labor that uplifts humanity has dignity and importance and should be undertaken with painstaking excellence”
Martin Luther King Jr.
আজকের দিন মেহনতি মানুষের দিন। আজকের দিন জন হেনরির দিন। আজকের দিন দিনবদলের কারিগরের দিন।
প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,
চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য
কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া
চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ
গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে,
তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য,
জীবনকে চায় ভালোবাসতে
ওরা কাজ করে। পথে-ঘাটে, নগরে, বন্দরে, প্রান্তরে। ওরা কাজ করে…
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কেউ মনে করেন ক্যাপিটালিজম রকস। কেউ বলেন পুঁজিবাদ নিপাত যাক।
এক রক্তাক্ত ইতিহাস। যার হাত ধরে নতুন ভোর দেখেছিলেন বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি শ্রমিক। যে শুনেছিল কান পেতে আকাশে জন হেনরির হাতুড়ির শব্দ। যে দিন আমেরিকার শ্রমজীবী মানুষ শাসক শ্রেণিকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, এই বিশ্বের চালিকা শক্তি কারা? মেহনতি মানুষের দল। যাদের ছাড়া এই পৃথিবীর পুঁজিবাদও অচল।
আমেরিকা বিশ্বকে অনেক কিছু দিয়েছে। পুঁজিবাদ কারে কয়, সেটা দেখিয়েছে আমেরিকা। সেই আমেরিকাই বিশ্বশক্তিকে চিনিয়েছে শ্রমশক্তির বিশালতা আসলে কী। আজ ঐতিহাসিক মে দিবস। আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস। আসুন, আজ সব মেহনতি মানুষদের কুর্নিশ জানিয়ে শুরু করি আজকের মে দিবসের ইতিহাসের কথা।
আমেরিকায় তখন গরীব শ্রমজীবী মানুষের উপর চলছে ভয়ানক শোষণ। নামমাত্র পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দিনে ১২ ঘণ্টা, ১৬ ঘণ্টা কাজ করাচ্ছে মালিকপক্ষ। দুর্দশা এবং দুরবস্থার কারণে শ্রমজীবী মানুষের মনে ধীর ধীরে তৈরি হচ্ছে অসন্তোষ। শ্রমিকরা হয়ে পড়েন দাস। রোষ ক্রমশই জমতে শুরু করে। বিদ্যুৎগতিতে মালিকশ্রেণীর বিপক্ষে গর্জে ওঠার সাহস ছড়িয়ে পড়ে।
১৮৬৪ সাল। আমেরিকার শিকাগো শহরে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন একদল শ্রমিক। যা ইতিহাসের পাতায় খোদিত হয়ে যায় ‘এইট আওয়ারস মুভমেন্ট’ নামে। এই মুভমেন্ট-টা ছড়িয়ে পড়ে গোটা আমেরিকায় ভালোরকম। আমেরিকার ন্যাশনাল লেবার ডে-র প্রতিষ্ঠা দিবসেও ৮ ঘণ্টার কাজের দাবি জানানো হয়। এরপর শুরু হয় একের পর এক মিটিং, মিছিল। শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন ১৮৬৮ সালে একটি আইন-ও পাশ করিয়ে নেয়।
কিন্তু আইন পাশ করিয়ে লাভ কিছুই হল না। যেভাবে মালিকপক্ষ শোষণ চালিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেভাবেই চলতে থাকল শ্রমজীবী মানুষদের উপর সেই শোষণ। এরপর কাট টু ১৮৮৫ সাল। ৮ ঘণ্টার কাজের দাবি তারা কখনোই ফেলে দিতে পারল না। শ্রমজীবী মানুষদের এই দাবি যেন গনদাবির রূপ নিতে থাকল। সংঘবদ্ধ জোরালো ডাক যেন আবারও কিছুটা টলিয়ে দিল আমেরিকার পুঁজিপতিদের। এরপর এলো সেই দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে- ফেডারেশন অফ অরগানাইজড ট্রেডস অ্যান্ড লেবার ইউনিয়নস সাফ জানিয়ে দিল তারা ৮ ঘন্টার দাবি থেকে আর পিছু হটবে না। সেদিন জমা হয়েছিলেন আমেরিকার সকল শ্রমিক। জানা যায়, সেদিনের এই ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিলেন ৫ লক্ষ শ্রমিক। ভয় পেল মালিকপক্ষ। তারপর ২ মে, তারপর ৩ মে। এভাবেই আমেরিকার শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলন পুলিশি রক্তচক্ষু, মালিকশ্রেণির শোষক মানসিকতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠছিল। আন্দোলন মানবে না কোন ব্যারিকেড, মানবে কোন বাধা। এই সমীকরণ তারা বুঝে গেছিলেন সকলেই। সহ্য করতে না পেরে গুলি চালালো পুলিশ। মারা গেলেন ৬ জন নিরস্ত্র নিরপরাধ শ্রমিক। ৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু যেন আন্দোলনে ঘৃতাহুতির কাজটাই করে দিল। তারপর দিন হে মার্কেটে ঘটে গেল এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
হে মার্কেটে তখন শ্রমিকদের ভিড় জমেছে। চারিদিকে পুলিশি ছয়লাপ। এমন সময় পড়ল একটা বোম। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল বেশ কিছু শ্রমিক এবং পুলিশের দেহ। অনেকেই বলে থাকেন, সেদিন এই বোমা ছোঁড়া হয়েছিল মালিক পক্ষের তরফ থেকেই। যাতে শ্রমিক শ্রেণিদের বিরুদ্ধে বদনাম আনা যায়। শুরু হল দাঙ্গা। যার নাম হে মার্কেট রায়ট।
শুরু হয় বিচার। ৭ জন শ্রমিক মৃত্যুদণ্ডের সাজা পান। এর মধ্যে একজন শ্রমিক সেদিনই আত্মহত্যা করেন আর বাকি ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ১৮৮৭ সালে। যার মধ্যে একজন ছিলেন অগাস্ট স্পাইস
১৮৭৭ সালে তিনি যোগদান করেছিলেন সোশ্যালিস্ট লেবার পার্টি-তে। তাঁর জোরালো উপস্থিতি ছিল ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে। মাত্র ৩১ বছর বয়সে তাঁকে যখন ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়েছিল, তার আগে তিনি একটা উক্তি করেছিলেন, যা আজও প্রত্যেক শ্রমজীবী মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি বলেছিলেন, “The day will come when our silence will be more powerful than the voices you strangle today”
হে মার্কেট মনুমেন্টে এই বক্তব্য এখনো খোদাই করা আছে। সত্যি হল তাঁর কথা। ১৮৮৯ সালে ১৪ জুলাই ফরাসি বিপ্লবের সেণ্টেনারিতে ফ্রান্সের প্যারিসে বসল দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠান। সেদিনই ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সালে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং আমেরিকায় মে দিবস পালিত হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে ১৮৯৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন, ১৯২৪ সালে চিন, ছাড়া কিউবা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ১ মে-কে ইন্টারন্যাশনাল লেবার ডে হিসেবে সম্মতি জানায়। কিন্তু জানেন কি ভারতে কবে থেকে এই মে দিবস পালন শুরু হল?
১৯২৩ সাল থেকে। মে দিবস পালন করেছিলেন এক দক্ষিণভারতীয় শ্রমিক নেতা যার নাম সিঙ্গারাভেল্লু ছেত্তিয়ার। তিনি ছিলেন মাদ্রাজের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। তিনি পূর্ণ স্বাধীনতা এবং সমাজতন্ত্রের দাবি তুলেছিলেন। সেই থেকে ১৯২৩ সালে ১ মে থেকে ভারতে চালু হল ঐতিহাসিক মে দিবস পালন। যারা আজ বড় বড় বাড়ি তৈরি করছেন, গোটা শহর, দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা ঠিক করে খেতে পান তো? তাঁদের মুখে খাবার সময়ে সময়ে কি ওঠে? তাঁরা কি সত্যিই প্রতিদিনের মজুরিটা পান?
শ্রমিক শ্রেণি ছাড়া ইমারত দাঁড় করানো অসম্ভব। এই নগর, এই বন্দর, এই পথ-প্রান্তরে যারা রোদে-বৃষ্টিতে, ঘাম ঝড়িয়ে কাজ করছেন, সেই মেহনতি মানুষদের ভালো থাকতেই হবে। তাদের ভালো রাখতে পারি আমরা। তাই আসুন, প্রত্যেক মেহনতি মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে স্মরণ করি মে দিবসকে। প্রতিবেদন যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করুন।
আর অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ