Story
শুনলে মনে হবে গল্প। তবে গল্প যে কখন সত্যি হয় সেটা বোঝা যেমন যায়না, তেমনই এনার কথা শুনলে কেউ বলতেই পারেন গল্পের গরুকে গাছে তোলা হচ্ছে।
দেশে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সূচক ৫.৫% এর কাছাকাছি। আর ভোজ্য তেলের দামের কথা যতটা কম বলা যায়, ততটাই ভালো। এ যেন অনেকটা হীরক রাজার দেশের হিরক পসারির গল্প। না, ওনার নাম হীরক নয়।
ইনি পূর্ব বর্ধমানের হিমাংশু সেন। গত ২৫ বছর ধরে বিক্রি করছেন ‘যা চাইবেন তাই পাবেন’ মাত্র ১ টাকায় এই চপের দোকানে। অবশ্য হিমাংশুর কিছু স্পেশালিটিও আছে। আলুর চপ, ভেজিটেবল চপ, সিঙ্গারা, ফুলুরি সবই পাওয়া যায় ১ টাকায়। দুপুর দুপুর দোকান খুলে যায়। তারপর আর ফুরসৎ পান না হিমাংশু বাবু। সপরিবারে তেলেভাজা বিক্রি শুরু হয়। দোকান বন্ধ হতে হতে বেজে যায় রাত ৯টা, ১০টা।
তেলের দাম বেড়েছে। তাই চপ, সিঙ্গারার সাইজ একটু কমেছে। কিন্তু বিক্রিতে একটুও ভাটা পড়েনি। মূলত গরীব মানুষের বসবাস এই এলাকায়। তাই মূল্যবৃদ্ধি সর্বত্র হলেও তেলেভাজার স্বাদ থেকে বঞ্চিত করেননি গরীব মানুষদের। আট থেকে আশি যেই আসুন না কেন, হাতে ১০টি টাকা থাকলেই ঠোঙার মধ্যে ঢুকে যায় ১০টি গরম তেলেভাজা। পরিবারের সকলে ভাগ করে খায়।
শুধু তেলেভাজাই নয়। ঘুগনি, রসগোল্লা, পান্তুয়া, ল্যাংচার মত মিষ্টিও তৈরি করেন হিমাংশুবাবু। প্রতিদিন ১০ কেজি বেসনের তেলেভাজা যেমন বিক্রি হয় তেমনই ১ বস্তা আলু লাগে প্রতিদিন। একসময় হিমাংশু সেনের পরিবারকে যেতে হয় চরম আর্থিক কষ্টের মধ্য দিয়ে। আজ ব্যবসা বৃদ্ধির দৌলতে ভালো লাভের মুখ দেখতে পেয়েছে হিমাংশুবাবুর পরিবার। তেলেভাজা বিক্রি করেই মাটির ঘর হয়ে উঠেছে ঝাঁ-চকচকে দোতলা বাড়ি। মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করেছেন। তিন বছরে আগে বিয়েও দিয়েছেন ধুমধাম করে। তেলেভাজা বিক্রি করেও যে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় সেই নজির তৈরি করেছেন পূর্ব বর্ধমানের হিমাংশু সেন।
পত্রলেখা বসু চন্দ্র
পূর্ব বর্ধমান