Story

আচ্ছা, ১৯৫৮ সালে ১ কেজি মটনের দাম শুনে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমার, আপনার কাছে সেটা খুবই হাস্যকর ঠেকে তো? কিংবা ধরুন, আজ ১০০ টাকায় আপনি যে জিনিস কিনতে পারছেন ১৯৫৮ সালে সেটাই কত টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব বলে আপনার মনে হয়? ১ টাকা ২০ পয়সার কাছাকাছি। হ্যাঁ। আর এর জন্য দায়ী কে জানেন? ইনফ্লেশন বা মুদ্রাস্ফীতি। মানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি। আজকের জমানায় দাঁড়িয়ে যে শব্দটার সঙ্গে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। আমেরিকা থেকে আফ্রিকা। এই ইনফ্লেশনের প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। এই ইনফ্লেশন কখনও কখনও গোটা দেশের অর্থনীতিকে একেবারে টলিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এই যে আমরা এতো ইনফ্লেশন, ইনফ্লেশন বলি- এই ইনফ্লেশন শব্দটার মানে কি? ইনফ্লেশন একটা দেশের অর্থনীতির প্রেক্ষাপট থেকে ভালো না খারাপ? ইনফ্লেশনের সঙ্গে বেকারত্ব বা আনএমপ্লয়মেন্টের কি সম্পর্ক?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইনফ্লেশন কেন হয়? এটা কি সরকার নিজের ইচ্ছেমত করতে পারে? একেবারেই না। ইনফ্লেশন পলিটিক্স থেকে দেশের বর্তমান ইকোনমিক স্ট্যাটাস- সব কিছুর উপরেই নির্ভর করে। কিন্তু ইনফ্লেশন হওয়ার বেসিক চারটে কারণ রয়েছে। তার মধ্যে,
১। ইকোনমিক বুম
মানে কোন দেশের ইকোনমিক গ্রোথ যদি ভালো হয় তাহলে দেশের মানুষের হাতে টাকা বেশি থাকবে। আর টাকা বেশি থাকা মানেই চাহিদা তৈরি হবে। আর চাহিদা তৈরি মানেই দাম বাড়বে সব জিনিসের।
২। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি
কোন কারণে যদি প্রোডাক্টের কাঁচামালের দাম অনেকটা বেড়ে যায়, তাহলে প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং করার খরচও বাড়বে অনেকটা। আর খরচ বাড়লেই কোম্পানিও চাইবে তাদের প্রোডাক্ট থেকে লাভের পরিমাণ কিছুটা বাড়াতে। যে কারণে দাম বাড়বে জিনিসের।
৩। এমপ্লয়ির স্যালারি বৃদ্ধি
শুনতে একটু অবাক লাগলেও এটা ঠিক যে কোম্পানি এবং সরকারকে যদি স্যালারি বাড়াতে হয় সেক্ষেত্রে প্রফিট করার জন্য ইনফ্লেশনের প্রয়োজন পড়ে। একটু বুঝিয়ে বলা যাক। কোন দেশের বেকারত্বের হার একেবারে নিচে থাকা মানে পুরনো এমপ্লয়িদের রিপ্লেস করে নতুন এমপ্লয়ি নেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কারণ স্যালারি কমানো যায় না। শুধু বাড়াতে হয়। আর তখনই প্রয়োজন পড়ে ইনফ্লেশনের।
৪। কারেন্সি ডেপ্রিশিয়েশন
মানে সরকার যদি প্রয়োজনের বেশি টাকা ছাপাতে শুরু করে দেয় তাহলে টাকার ভ্যালুয়েশন কমতে শুরু করে। এই বিষয়টা এতটাই বিপজ্জনক যে এর কারণে হাইপার ইনফ্লেশন তৈরি হতে পারে। এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে ভেনেজুয়েলা এবং জিম্বাবোয়ে। ২০০৮ সালে জিম্বাবোয়ের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, সরকার সেই সময় ১ মিলিয়ন, ১ বিলিয়ন এমনকি ১ ট্রিলিয়নের নোটও ছাপতে শুরু করে। যার ভ্যালুয়েশন আমেরিকান ডলারে ছিল মাত্র ১ মার্কিন ডলার।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি ইনফ্লেশন খারাপ? এখানে একটা বিষয় তুলে ধরা যাক। দেশে যদি ইনফ্লেশন রেট ০% হয়ে যায়, তার মানে হল স্যালারি একই রয়ে গিয়েছে। আর স্যালারি যেহেতু কমে যায় না তাই ইনফ্লেশনও নেগেটিভে যায় না। আর যদি ডিফ্লেশন হয়, তাহলে মানুষের হাতে টাকা থাকলেও তাঁরা খরচ করতে চাইবেন না। কারণ টাকার ভ্যালু সেইসময় বাড়বে। ফলে আমি, আপনি সবাই চাইব আজ যে জিনিস কিনতে আমার ১০০ টাকা খরচ হচ্ছে, আজ থেকে কয়েক মাস পরে কিনলে হয়ত সেটাই অনেক কম দামে মানুষ পেয়ে যাবে। মানে ব্যবসা-ট্যাবসা সব উঠবে লাটে। কারণ বাজারে চাহিদা তৈরি না হলে কিভাবে ব্যবসার চাকা ঘুরবে? তখন সবদিক থেকেই বাজার জুড়ে তৈরি হবে অস্থিরতা। বাড়বে বেকারত্ব। তার মানে দাঁড়াল, ইনফ্লেশন রেট কম হলে বেকারত্ব বাড়বে। আর ইনফ্লেশন রেট বাড়লে বেকারত্ব কমবে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির চাপে নাকানি চোবানি খেতে হয় সাধারণ মানুষের। তাই ভারতে ইনফ্লেশন রেট রাখা হয় ৪% মতন। এর ফলে ইনফ্লেশনের উপরেও থাকবে একটা নিয়ন্ত্রণ।
বিজনেস প্রাইম নিউজে
জীবন হোক অর্থবহ