স্তম্ভ তাও আবার নাকি ঝুলন্ত। অবাক হচ্ছেন তো? হ্যাঁ, অবাক তো হবারই কথা। একটা পিলারের পক্ষে কি কোনো রকম support ছাড়া ঝুলে থাকা সম্ভব? সম্ভব। আর তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ হল অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরের লেপাক্ষী গ্রামের বীরভদ্র মন্দির। এই মন্দিরেই আছে ওই ঝুলন্ত পিলার। আসলে ঐ যে কথাতেই আছে, truth is stranger than fiction. এই বীরভদ্র মন্দির হল সেইরকমই এক বিস্ময়কর বহু প্রাচীন মন্দির। আর প্রাচীন মন্দির যখন তখন তাকে ঘিরে কোনো পৌরাণিক গল্প থাকবে না তা হতেই পারে না। চলুন তেমনি কিছু অজানা গল্প আজ আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব।

এই লেপাক্ষী কথাটির অর্থ জানেন? এর অর্থ হল উড়ন্ত পাখী। আচ্ছা, রামায়ণের জটায়ু পাখির কথা মনে আছে? ওই যে, রাবণ যখন সীতাকে হরণ করে পুষ্পক রথে করে লঙ্কায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন এই জটায়ু পক্ষীই রাবণকে বাধা দিতে এসেছিল। ভাবছেন তো মন্দিরের গল্প বলতে বলতে হঠাৎ করে রামায়ণে ফিরে গেলাম কেন? কারণ তো নিশ্চয়ই একটা আছে। শোনা যায় রাবণকে বাধা দিতে এসে জটায়ুর সঙ্গে আকাশপথেই রাবণের এক বিশাল যুদ্ধ হয়। আর আকাশপথের সেই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আহত জটায়ুর দেহ নাকি এই গ্রামেই পড়ে। আর সেই থেকেই নাকি এই নাম। তাছাড়া এও শোনা যায় যে এই মন্দিরে একটি গুহা আছে যেখানে নাকি ঋষি অগস্ত্য থাকতেন।

এ তো গেল পৌরাণিক দিক। চলুন এবার একটু ইতিহাসটাকে ঘেঁটে দেখি। ফিরে যাই ১৬০০ সালে। দক্ষিণ ভারতে তখন বিজয়নগর সাম্রাজ্য। মসনদে অত্যুচ দেবরায়। শোনা যায় তাঁর আমলেই তৈরি হয়েছিল এই বীরভদ্র মন্দির। এই মন্দিরটি হল শিবের মন্দির। মহাদেবের অন্যতম অবতার বীরভদ্র এখানে পূজিত হন।

মন্দিরে ঢুকে প্রথমেই আপনার চোখ আটকে যাবে মন্দিরের স্থাপত্য ও কারুকার্যে। কী অপূর্ব! মন্দিরের দেওয়ালে দেওয়ালে খোদাই করা মাতা পার্বতীর মূর্তি, গণেশের মূর্তি, মহাদেবের মূর্তি। মন্দিরের অত উঁচু উঁচু দেওয়াল,বড় বড় থাম সব মিলিয়ে কিরকম যেন একটা ঘোর লাগা পরিবেশ। মূল মন্দিরের বাইরে রয়েছে নাট মন্দির। আর এই নাট মন্দিরের এক কোণে রয়েছে একটা বিশাল স্তম্ভ। আর এই স্তম্ভকে ঘিরেই যত রহস্য। এই স্তম্ভের নীচে রয়েছে প্রায় দেড় ইঞ্চি ফাঁক। অর্থাৎ মাটির সঙ্গে এর কোনো যোগ নেই। এই ফাঁক দিয়ে অনায়াসেই গলে যাবে একটি রুমাল বা কাগজের টুকরো। কি অদ্ভুত! তাই না? কিন্তু এটাই সত্যি।

দেখলে মনে হবে যেন ৮ ফুট উঁচু স্তম্ভটি হাওয়ায় ভাসছে। তাই এই মন্দির ‘ঝুলন্ত স্তম্ভ মন্দির’ বা ‘আকাশ স্তম্ভ’ নামেও পরিচিত। একবার, ১৯২৪ সালে এক ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার এসেছিলেন এই রহস্যের সমাধানে। তিনি স্তম্ভের নিচের ফাঁক দিয়ে লোহার রড ঢোকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারপরেই ঘটেছিল সেই আশ্চর্য ঘটনা। দুলতে শুরু করেছিল গোটা মন্দির । মন্দিরের ৭০ টি থাম একসঙ্গে নড়ছিল। আর মন্দিরের ভেতর থেকে ভেসে আসছিল এক অদ্ভুত শব্দ। পাছে গোটা মন্দির ভেঙ্গে পড়ে সেই ভয়ে তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে, সেই ইঞ্জিনিয়ার নিজের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। এখনো বহু ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিকরা এই ঝুলন্ত স্তম্ভের রহস্য নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু না, উত্তর মেলেনি এখনও। আসলে সব উত্তর বোধহয় না পাওয়াই ভাল। তাহলে তো সেই আকর্ষণ আর থাকবে না।

কি ভাবছেন? যাবেন নাকি একবার? একবার নিজে গিয়ে স্তম্ভ রহস্য সমাধানের চেষ্টা করবেন? তাহলে আর দেরি কেন? বেরিয়ে পড়ুন। আর আপনাদের কথা মাথায় রেখেই তো spiritual tourism কে উন্নত করতে ভারত সরকার ‘প্রসাদ স্কিম’, স্বদেশ দর্শন স্কিম’ ইত্যাদি প্রকল্প নিয়ে এসেছে। আর এই স্পিরিচুয়াল ট্যুরিজম উন্নত হলেই একদিকে যেমন পর্যটক সংখ্যা বাড়বে অন্যদিকে দেশের কোষাগারও শক্তিশালী হবে। আর বাস্তবে হয়েছেও তাই। ২০২২ সালে এই স্পিরিচুয়াল ট্যুরিজিম ১৪৩৯ মিলিয়ন পর্যটক পেয়েছিল এবং আয় হয়েছিল ১.৩৪ লক্ষ কোটি। আশা করা যায় এই পর্যটন খাত ২০২৮ সালের মধ্যে ৫৯ বিলিয়ন রাজস্ব তৈরি করবে।

চেনা জায়গার এমনই আরও অজানা তথ্য জানতে সঙ্গে থাকুন, দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ।