Trending
এদের কেউ হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। কেউ বা হারিয়েছেন শোনার ক্ষমতাটুকু। কেউ আবার হারিয়েছেন হাত দুটোকে। তবুও জীবন যুদ্ধে এরা কেউ হেরে যায়নি। পূর্ব মেদিনীপুরের নিমতৌড়ির প্রতিবন্ধী আবাসিকরা সেই প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে জীবন এবং জীবিকা দুই যুদ্ধেই এরা এগিয়ে এসেছেন একেবারে সমাজের ফ্রন্টপেজে।
দিনরাত এককরে পরিবেশ বান্ধব পাটকে কাজে লাগিয়ে প্রস্তুত করে চলেছেন নানান ডিজাইনের রাখী। করোনা থেকে পরিবেশ রক্ষা, জল সংরক্ষণ থেকে আসন্ন শারদীয়ার শুভেচ্ছা। সোশ্যাল মেসেজেই সমৃদ্ধ এখানকার রাখী। আর শুধু রাখীই নয়। এরা প্রত্যেকেই সিজন অনুযায়ী বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে থাকেন। এমনকি প্রতিমা পর্যন্ত তৈরি হয় এই আবাসিকে।
ইনি পার্বতী জানা। দুটি হাত হারিয়েও স্রেফ মনের জোড়ে তৈরি করে চলেছেন রাখী। উপার্জনের সঙ্গে আনন্দকেও ভাগ করে নিচ্ছেন তাঁর অন্যান্য সতীর্থদের সঙ্গে।
শুধু পার্বতী নয়। তাঁর মত সোনিয়া, পম্পা, মালেখা, মারিয়া, মর্জিনারা এখন রীতিমত ব্যস্ত। নেই দম ফেলবার ফুরসত। কে বলবে ওরা প্রতিবন্ধী? আক্ষরিক অর্থে প্রতিবন্ধী শব্দটা ওদের জীবনে চাঁদের কলঙ্কের মত। ওরা আসলে কেউ প্রতিবন্ধী নয়। প্রতিবন্ধকতা রয়েছে দেখার মানসিকতায়। আসন্ন রাখী উৎসবের জন্য ২৫ হাজার রাখী তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন এরা। ইতিমধ্যে ১৫ হাজার রাখী তৈরিও হয়ে গিয়েছে। বাকি আর মাত্র ১০ হাজার। আশা করা যায় সেটাও তৈরি হয়ে যাবে খুব শিগগিরই। আর এই সকল মানুষগুলোকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য দিনরাত এককরে খেটে চলেছেন চন্দনী সামন্ত। তাঁর শেখানো পথ ধরেই এরা এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে।
এই রাখী বিক্রির জন্য তিনটি কাউন্টার খোলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও পথ চলতি সাধারণ মানুষ, দোকানদার, কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি ও শুভানুধ্যায়ীদের করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাখী পরানো হবে বলে জানান হোমের সাধারন সম্পাদক যোগেশ সামন্ত। একইসঙ্গে বিক্রির উদ্বৃত্ত অর্থ ভাগ করে দেওয়া হবে আবাসিকের সকলের মধ্যেই।
পার্বতী, মর্জিনাদের তৈরি রাখী কলকাতায় যেমন আসে, তেমন ছড়িয়ে যায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে এই বছরে করোনার জন্য রাখীর চাহিদা বেশ কম। অন্যান্য বছরে যেখানে ৫০ হাজার পর্যন্ত রাখী বানানো হত এবারে সেই সংখ্যাটা অনেকটাই কমেছে। তবে রাখী বানানোর ব্যস্ততার মধ্যেও ছ’ফুটের দুর্গা প্রতিমা বানানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আর সেই প্রতিমা বানানো হবে পুরোটাই পাট দিয়ে। মৃন্ময়ী যে এবার এখানে এদের হাতে পটীয়সী হবেন তা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। বর্তমানে ৩০-৩২ জন আবাসিকের মহিলা ব্যস্ত আছেন এই কাজে। রাখী তৈরি করে আর্থিক বিকাশ ঘটছে তাঁদের। সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে তাঁরাও অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। ছড়িয়ে দিচ্ছেন সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার বার্তা।
প্রসূণ ব্যানর্জী, পূর্ব মেদিনীপুর