Daily
করোনাকালে ভারতীয় অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছিল কৃষিক্ষেত্র। দেশের পাশাপাশি রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রেও কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে ধরা পড়ল করুণ ছবি। দেশের কৃষকদের আয় কমার পাশাপাশি দেশের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের হাল সবথেকে খারাপ। এমনটাই দেখা গেল কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের অধীন, ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশনের রিপোর্টে।
২০১৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে দাবি করেছিলেন রাজ্যের কৃষকদের আয় ২০১০ সালের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। ২০১৮ সালে রাজ্যের কৃষকদের বাৎসরিক আয় বেড়ে হয় ২.৩৯ লক্ষ টাকা। কিন্তু কেন্দ্রের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে রাজ্যের কৃষকদের বাৎসরিক আয় ৮১,১৪৪ টাকা।
কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, রাজ্যের কৃষকদের দৈনিক গড় আয় সাড়ে ২২ টাকার মতো। সেই হিসেবে রাজ্যের কৃষকদের মাসিক আয় গিয়ে দাঁড়ায় ৬,৭৬২ টাকা। বাৎসরিক পরিমাণটা হয় ৮১,১৪৪ টাকা।
রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের পরিসংখ্যানের বিস্তর ফারাক প্রসঙ্গে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। কেন এরকম ফারাক হলো।
রাজ্যের কৃষকদের মোট সামান্য অংশই আসে ফসল উৎপাদন করে। বেশির ভাগটাই আসে অন্যের জমিতে চাষ করে। কিংবা একশো দিনের কাজ করে। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের রিপোর্টে এই চিত্র ধরা পড়ল। ৬,৭৬২ টাকার মধ্যে ২২.৮ শতাংশ আসে শস্য উৎপাদন থেকে। ৫৫ শতাংশ আসে অন্য কাজ করে। আর ১৩.৮ শতাংশ আসে অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য করে।
কৃষকের হাতে জমির পরিমাণের মালিকানার নিরিখেও পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। পাঞ্জাব, হরিয়ানার মত রাজ্যগুলিতে কৃষকদের হাতে যে পরিমাণ জমির মালিকানা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের হাতে তার চেয়ে অনেক কম পরিমাণ জমির মালিকানা রয়েছে। তাই এই রাজ্যের কৃষকদের আয় অনেকটা কম বলেই মনে করছেন পরিসংখ্যান মন্ত্রক।
দেশের কৃষকদের অধিকাংশই যখন ঋণগ্রস্ত। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা অনেকটাই ভালো। দেশের কৃষকদের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ যেখানে ৭৪,১২১ টাকা সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ৬৬.৯ শতাংশ কৃষকের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ অনেকটাই কম। মাত্র ২৬,৪৫২ টাকা।
অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশ মনে করছেন কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন এই সমীক্ষা চালিয়ে ছিল ২০১৮ ও ২০১৯ সালে। তখন করোনা এবং লকডাউনের জোড়া ফলায় থমকে গিয়েছিল দেশের অর্থনীতি ঠিকই কিন্তু এখন পরিস্থিতি অতটা খারাপ নয়।
কেন্দ্রের রিপোর্টে সামগ্রিকভাবে দেশের কৃষিক্ষেত্রের বেহাল দশায় বেরিয়ে পড়েছে ঝুলি থেকে। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের মত কোন কোন রাজ্য পিছিয়ে গেল সেটা চিহ্নিত করার পরিবর্তে সামগ্রিকভাবে দেশে কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য আরো কি কি পদক্ষেপ সরকারের গ্রহণ করা উচিত সেটাই আলোচ্য বিষয় বলে অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন।
ব্যুরো রিপোর্ট