Story
বিপিএনডেস্কঃ
সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য। ছড়িয়ে আছে ভারত ও বাংলাদেশ জুড়ে। ছোট বড় অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে। বেশিরভাগটা বাংলাদেশে পড়লেও এদেশের দুই ২৪ পরগণা জুড়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বিপুল জীব বৈচিত্র্যের এই ম্যানগ্রোভ রাজত্ব। যে রাজত্বের অধিকাংশ জায়গায় এখনও মানুষের পা পড়েনি। জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত বহু তথ্য। আন এক্সপ্লোর নেচারে নতুন এক্সপ্লোরেবল থিংস গোলের গুড়।
সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে লতা পাতার মত ছড়িয়ে আছে গোলের বন। এখানকার বনজীবিদের কাছে যা মামুলি গোলের জঙ্গল। কিন্তু এই মামুলি জঙ্গলেই ছড়িয়ে আছে জীবনের রসদ। যা জানে না এখানকার বেশিরভাগ বনজীবি থেকে সরকার পক্ষ কেউই। তাই, তাদের কাছে এটা নিছকই গোলের জঙ্গল। এই জঙ্গলেই ছড়িয়ে আছে সোনার খাজানা।
পশ্চিমবঙ্গে ৪২৬০ স্কোয়ার কিলোমিটার জুড়ে এই ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে মোট ১০২ টো দ্বীপ থাকলেও এখনও পর্যন্ত ৫৪টি দ্বীপেই রয়েছে জনবসতির অস্তিত্ব। যেখানে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করেন। এই জনবসতির বেশিরভাগ মানুষ এখনও কোন না কোনভাবে নির্ভর করে জঙ্গলের ওপর। যা অনেক সময়েই গ্রামের নিরীহ শান্ত জীবনে নিয়ে আসে শোকের ছায়া। বাঘ বিধবার তকমা আর সুন্দরবন যেন কোথায় এসে মিলেমিশে গিয়েছে।
শত প্রতিকুলতার মধ্যেও এখানে আশার আলো দেখাচ্ছে এই গোল গাছ। শীতকালে বিশেষত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত গোলের ডাল কাটলেই বেরিয়ে আসে গোলের রস। রস সংগ্রহ করে জাল দিলেই পাওয়া যায় গোলের গুড়। নদীর পাড়ে নোনা জলে আগাছার মত জন্মানো এই গোলের জঙ্গলকে ব্যবহার করে পড়শি বাংলাদেশ নিয়ে এসেছে বনজীবিদের জীবনে আমুল পরিবর্তন। সেখানকার ধানচাষিরা আজ ধান ফেলে মেতেছেন গুড় তৈরিতে।
পরীক্ষায় জানা গিয়েছে এই গুড়ের গ্লাসিমিক ইনডেক্স অনেক কম। সোডিয়াম বেশি থাকে নোনা জলে জন্মানোর কারণে। এছাড়াও পটাশিয়াম, মিনারেলস সবই আছে এর মধ্যে। একাধারে সাধারণের খাদ্য থেকে রোগীর পথ্য হয়ে উঠেছে এই গুড়। এদেশের চিকিৎসকরাও একটু একটু করে সচেতন হচ্ছেন গোলের গুড় নিয়ে।
এই গুড়ের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা অনেকটাই কম থাকে। বরং ফ্রুকটোজের মাত্রা বেশি থাকে। ডায়াবেটিস রুগিদের কাছে এটা মিষ্টির বিকল্প হতে পারে। চিকিৎসকরা বাংলার নতুন সম্ভাবনাকে ঘিরে যতটা উৎসাহী ততটাই হেলদোল নেই বনদপ্তরের।
প্রতিবছরই বনে কাঠ কিংবা মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে মারা যান অনেকেই। সেখানে যদি সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে গোলের গুড়কে শিল্পের দরজা দেওয়া যায় তাহলে তো জীবন বাঁচে, তৈরি হয় জীবিকাও। পরিবেশ বাঁচানোর প্রশ্নেও এই শিল্প জলে জঙ্গলে ঘেরা সুন্দরবনে তৈরি বদলে যাবে এলাকার অর্থনৈতিক গতিধারা।
রায়মঙ্গল মাতলার পাড়ে প্রতিদিন সূর্য ওঠে আবার অস্তও যায়। জীবন বয়ে যায় একইভাবে ম্যানগ্রোভের রাজত্বে। আশায় রয়েছেন বনবাসিরা। শুরু হবে এবার গোলের গুড়। নতুন খেলা হবে বনবাসীদের জীবনে।।
অঙ্কিত মুখার্জীর রিপোর্ট, বিজনেস প্রাইম নিউজ