Story
নেশা থেকে পেশা। প্যাশান থেকে প্রফেশন। হার না মানার গল্পের নায়ক বিভাস পাল। স্থানীয়দের কাছে জিরো থেকে হিরো হয়ে ওঠা আইকনের অপর নাম অশোকনগরের গোকুল ফার্মের রূপকার মধ্য চল্লিশের এই বিভাস পাল।
জীবনে নিজের মত কিছু করার তাগিদটাই আর দশজনের থেকে আলাদা করে রেখেছে এই যুবককে। নিরাপদ চাকরির অফারকে ইচ্ছাশক্তির ব্যাটে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে শুরু করলেন কোম্পানির প্রোডাক্ট নিয়ে ডিস্ট্রিবিউটরের ব্যবসা। লাভ, লোকসান, ভালো, মন্দ সবই তো কোম্পানির। নিজের কী?
কোম্পানির ব্যবসায় আয় হলেও মন কিছুতেই ভরছিল না ৮৯ সালে স্নাতক পাশ করা এই যুবকের। অন্যের গোলামি না করার জিদে ভর দিয়েই এদিক ওদিক ঘুরছিলেন আর ভাবছিলেন কী করা যায়, কী করা যায়…
যেমনি ভাবা, অমনি শুরু। বরাবরই বাড়িতে পশু পালনের নেশাকেই পেশায় পরিণত করলেন আজকের গোকুল ফার্মের কর্ণধার। চার বিঘা জমির ওপর গোটা দশেক গরু নিয়ে যাত্রা শুরু হল এই মডেল খামারের।
এক, দুই, তিন থেকে বাড়তে বাড়তে আজ বিভাস বাবুর ফার্মে গরুর সংখ্যা প্রায় ৬০-৬২টা। সকাল থেকে সন্ধ্যা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলে এখানে গো পালন। কেউ গরুগুলিকে খাওয়াচ্ছেন, তো কেউ গোশালা পরিষ্কারে ব্যস্ত। কেউ আবার নিয়ম করে ব্যস্ত রয়েছেন দুধ দোয়াতে। নিয়মিত ব্রিডিংয়ের পাশাপাশি গরু, বাছুরগুলির গলায় দড়ি না পরিয়ে ফার্মের খোলা জমিতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এভাবে খামারের মধ্যে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে গোপালন করে উত্তর ২৪ পরগনা জেলাই শুধু নয় রাজ্যের মধ্যেও নজির গড়লেন বিভাসবাবু। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে গো-পালনের সমর্থন মিলল জেলার কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের কথায়।
গোকুল ফার্ম আজ মডেল ফার্মের তকমা পেয়েছে। এই কাজে নতুন পদ্ধতি যে কতটা সহায়ক হয়েছে তাও বেরিয়ে আসল এই বিজ্ঞানীর কথায়।
ফার্মে তৈরি হওয়া দুধ নিজের মিষ্টির দোকানে দিয়ে তা থেকেও আয়ের পথ বার করে নিয়েছেন বিভাসবাবু। শুধু যে নিজেই স্বনির্ভর হয়েছেন তাই নয়। আজ প্রায় ১১টা পরিবার নির্ভর করে ওনার উপর।
আজ এই ফার্মে ভিজিটরদের ভিড় লেগেই থাকে। বিভিন্ন মানুষজন এখানে এসে বিভাসবাবুর ফার্ম ঘুরে ওনার থেকে পরামর্শও নিয়ে যান। দেখে যান গো পালনের মূল খাদ্য ঘাস থেকে ম্যাস সবই এখানে মজুত থাকে। মজুত থাকে খড়ের গোলা থেকে খড় কাটার মেশিনও।
জীবন যুদ্ধের নিরলস সৈনিক বিভাস পাল আজ শুধু স্বনির্ভর হয়ে জেলার মুখই উজ্জ্বল করেন নি উজ্জ্বল করেছেন রাজ্যের মুখও।
দেবস্মিতা মণ্ডল, উত্তর ২৪ পরগনা