Trending
গুজরাটকে ঢেলে সাজাতে এবার আরও তৎপর নরেন্দ্র মোদী
ভাইব্র্যান্ট গুজরাট নিয়ে জম্পেশ তোড়জোড়
মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ব্যবসায়ীমহল
নির্বাচনী প্রচার ছেড়ে নমো এখন ব্যবসামুখী। স্বপ্নের রাজ্য গুজরাটকে ইতিমধ্যেই উজার করে দিয়েছেন তিনি। যার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ ভাইব্র্যান্ট গুজরাট।
বাণিজ্য-বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানকে পাখির চোখ করে ১০ -১২ জানুয়ারি আয়োজন করা হয়েছে মেগা বাণিজ্য মেলা। ডেসটিনেশন? গিফট সিটি গুজরাট। মেনুতে- ভেন্যুতে সে এক এলাহী ব্যপার। ঝাঁ-চকচকে রাস্তাঘাট, আলোকসজ্জা এবং আদানি-আম্বানির মতো বিজনেস আইকনদের উপস্থিতি। এছাড়াও রয়েছেন ৩৪ টি দেশের প্রতিনিধিরা। সবমিলিয়ে ২০২৪-এর মেগা বাণিজ্য সম্মেলন একেবারে অন্যরকম। লক্ষ্য- দেশীয় স্টার্ট আপ, এমএসএমই, গ্রিন এনার্জি, সাস্টেনেবল ম্যানুফ্যাকচারিং, স্মার্ট ইনফাস্ট্রাকচার ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রকে বিশ্বমানের পরিচিতি দেওয়া। আর তাই বিদেশী মদত প্রয়োজন।
নিজের রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রতিটা রাজ্যই বিজনেস সামিট অরগানাইজ করছে। এ রাজ্যেও যেমন বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এসেছিল। তবে তার কতটা কী বাস্তবায়িত হয়েছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে- তার গভীরে না যাওয়াই ভালো। তবে হ্যাঁ! ভাইব্র্যান্ট গুজরাটে, ধনকুবের আদানি জানিয়েছেন যে, আগামী পাঁচ বছরে ২ লক্ষ কোটি টাকা গুজরাটে বিনিয়োগ করবেন তিনি। যার বেশিরভাগটাই হবে গ্রিন এনার্জি খাতে। বলে রাখা ভালো, কচ্ছের রানে সেই প্রোজেক্টের কাজ কিন্তু ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
তবে এসব কিছুর ঊর্ধ্বে, ভাইব্র্যান্ট গুজরাটের এবছরের মেগা চমক, ভারত-মধ্য প্রাচ্যের নয়া সমীকরণ। মোদীর উত্তরোত্তর আরব আমিরশাহী ভ্রমণ যে বিফলে যাবে না, সে আন্দাজ বোধ হয় আগেই করা গিয়েছিল। কিছুদিন আগেই ডলার ছেড়ে টাকায় ব্যবসা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। কাজেই দুই দেশের পারস্পারিক নির্ভরতা যে বাড়ছে, সেটা একেবারে স্পষ্ট। অন্যদিকে, তেল নির্ভর অর্থনীতিতে রাশ টানতে চায় সৌদি আরব। সেই কারণেই নতুন বিনিয়োগের জায়গা খুঁজছে দেশটি। আর তাই ভারতের বাজারে ঢালাও বিনিয়োগ করতে উদ্যোগী তারা। আর ইউএই-এর ভারতমুখী উদ্যোগ যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ পদক্ষেপের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
গুজরাট, যা দেশের মোট জিডিপি-র ৯ শতাংশ ভরপাই করে। যেখানে প্রচুর শিল্প গড়ে উঠেছে। যে রাজ্য সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। সেই রাজ্য নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী যে বিশেষ ভাবে ভাববেন বা বিশেষ কদর করবেন, সেটা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের ব্যবসায়ীমহল জানাচ্ছে যে এই মেগা বাণিজ্য মেলা সে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটা ট্রাম্প কার্ড। বিদেশী বিনিয়োগ আসলে, বিদেশী সংস্থা আসলে এবং বিদেশী উদ্যোগপতিরা আসলে গুজরাট অর্থনৈতিকভাবে আরও মজবুত হবে। হয়তো আগামী কয়েক বছরে ৯ শতাংশের কন্ট্রিবিউশন বাড়বে দ্বিগুন হারে। যা গোটা ভারতের অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলবে। যে রাজ্য, সমগ্র ভারতের ইকোনমির ক্ষেত্রে এতটা প্রভাবশালী, আটকে গিফট সিটি ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়।
আর এই গিফট সিটিকে আরও বড়ো কিছু উপহার দিতে ৫টি প্রমিস করেছেন মিঃ আম্বানি। আগামী ১০ বছরে গুজরাটের অর্থনৈতিক চালচিত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে আম্বানির প্ল্যানের ব্লু-প্রিন্ট প্রকাশ করেছেন মুকেশ আম্বানি। এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি জানান, প্রথমত, ভারতের প্রথম কার্বন ফাইবার ফেসিলিটি ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট তৈরি হবে গুজরাটে। দ্বিতীয়ত, ২০৩০ সাল পর্যন্ত গুজরাটের মোট ব্যবহারযোগ্য এনার্জির ৫০ শতাংশ যেন রিনিউয়েবল সোর্স থেকে আসে, সেটা এনশিওর করবে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। আর তাই ধীরুভাই আম্বানি গ্রিন এনার্জি গিগা কমপ্লেক্স ইতিমধ্যেই তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। তৃতীয়ত, গুজরাটের কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে রিলায়েন্স রিটেলের মাধ্যমে কোয়ালিটি প্রোডাক্ট গুজরাটে নিয়ে আসবেন আম্বানি। চতুর্থত, এআই টেকনোলজির মাধ্যমে গুজরাটের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ কাজ করবে আম্বানির সংস্থা। এবং ভবিষ্যতে ভারত অলিম্পিক হোস্ট করতে চলেছে। আর সেখানে বিপুল বিনিয়োগের কথাও জানিয়েছেন তিনি।
ভাইব্র্যান্ট গুজরাটের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই ধরণের ঘোষণা এবং নিজেকে গর্বিত গুজরাটি বলে ঘোষণা করা- সবটাই একটা আশ্বাস জুগিয়েছে সমগ্র গুজরাটবাসীর মুখে। উল্টোদিকে বাংলার ছবিটা যদি দেখেন তাহলে দেখবেন- এখানে ঢ্যারা পিটিয়ে বাণিজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ঠিকই। কিন্তু বিনিয়োগের নামে মেলে প্রতিশ্রুতি। তার বাস্তবায়ন আর স্বচক্ষে দেখা যায় না। বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মঞ্চ মানে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনায়াসে বাংলার মাটি, বাংলার জলের লিরিক্স বদলে ফেলা হয়। আর কারি কারি টাকার দুর্নীতির হিসেব পাওয়া যায়। একে উন্নয়নের নামে মশকরা বলা যায় কি না, সে প্রশ্ন বরং আপনাদের কাছেই রাখলাম। উত্তর জানান কমেন্টবক্সে। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস পারিম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।