Trending
গলায় গলায় দোস্তি, বাড়িয়ে তুলছে অস্বস্তি। ঠিক ধরেছেন চিন-রাশিয়ার দোস্তি নিয়েই কথা বলছি। চিন-রাশিয়ার বন্ধুত্ব ইতিমধ্যেই চাপে ফেলেছে বিশ্বের ধনী দেশের জোট জি-৭ কে। কিন্তু ওই যে, কথায় আছে না… বাপেরও বাপ থাকে। চিন রাশিয়াকে পাল্টা সবক শেখাতে সোচ্চার হল জি-৭।
বৈশ্বিক নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সমৃদ্ধি, কিংবা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি- যেকোনো ক্ষেত্রেই চিনের বিরুদ্ধে কথা উঠলেই সেই দেশকে বয়কট ঘোষণা করা হচ্ছে। ছিঁড়ে যাচ্ছে যাবতীয় ব্যবসায়িক বন্ধন। বিশ্ব বাণিজ্যের ভারসাম্য নষ্ট করছে চিন। দিনে দিনে কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছে দেশটি। অর্থনীতিকে হাতিয়ার করে বলপ্রয়োগের যে নীতি নিয়েছে চিন তা জি৭ জোটের সমৃদ্ধির পথে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে। জি-৭ নেতারাও যে এসব নিয়ে বিরক্ত হবেন, তাতে অবাক হবার কিছু নেই। চিনের এই জবরদস্তিমূলক আচরন দেশ-বিদেশে জি-৭ এর অবস্থানকে ক্ষুণ্ণ করবে, আর গ্রুপ অফ সেভেন চুপটি করে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? কক্ষনও না। তাই এবার চিনকে সবক শেখাতে মোক্ষম ফন্দী আঁটল জি-৭। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নীতির জবাব দিতে কোমর বেঁধে প্রস্তুত গ্রুপ অফ সেভেন। ‘বিল্ট ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড’ নামের এই পরিকল্পনা চীনা প্রেসিডেন্টের লক্ষ কোটি ডলারের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে, নিজেদের লক্ষ্যপুরনে জি-৭ আদৌ কি সফল হবে?
নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে উন্নত অবকাঠামো গড়ে তুলতে নতুন পরিকল্পনা করেছেন জি ৭ ভুক্ত দেশগুলোর নেতারা। গঠন করা হয়েছে ৬০ হাজার কোটির তহবিল। এই অর্থ দিয়ে কম আয়ের দেশগুলিতে এমন পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে, যা যে কোনো আবহাওয়া সহ্য করে টিকে থাকতে পারবে। নতুন জি-৭ তহবিল থেকে অ্যাঙ্গোলায় ২০০ কোটি ডলার দিয়ে সোলার ফার্ম গড়ে তোলা হবে, ৩২ কোটি ডলার দিয়ে আইভরি কোস্টে হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় চার কোটি ডলার দিয়ে আঞ্চলিক স্তরে বিকল্প শক্তি বাণিজ্যকে উৎসাহ দেয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই। চিন বাবাজিকে বুঝিয়ে দিতে হবে জি-৭ এর জোড় ঠিক কতটা। আর তারা চাইলে কী করতে পারে। চিনের বাড়বাড়ন্ত সামলাতে ইতিমধ্যেই উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করার উদ্দেশ্যে সমন্বয় প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে জি-৭। তবে এই প্ল্যাটফর্মটি কীভাবে কাজ করবে, সে বিষয়ে এখনই কিছু স্পষ্ট নয়।
জি-৭ নেতারা খনিজ সম্পদ ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সরবরাহ এবং অনলাইন হ্যাকিং প্রতিরোধে ডিজিটাল পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করছে। তবে এসব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়েও তারা সবচেয়ে বড় চাল যেটা চেলেছে, সেটা হচ্ছে বহুপক্ষীয় রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করা। অর্থাৎ সামরিক খাতে ও বুদ্ধিমত্তাক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলো যাতে দুষ্টু লোকের হাতে ধ্বংস হয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে এক জোট হয়ে কাজ করা। প্রত্যক্ষভাবে চিনের নাম না করা হলেও, এটা যে আলত করে চিনকেই খোঁচা দেওয়া হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চীনকে শায়েস্তা করতে এবং ইউক্রেনের প্রতি অমানবিক হওয়ার জবাব দিতে ইতিমধ্যেই চিনের বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়ার থেকে সোনা আমদানি স্থগিত করেছে গ্রুপ অফ সেভেন। এর ফলে রাশিয়ার উপর চাপ বাড়বে এবং পুতিন সরকার ধাক্কা খাবে বলে মনে করেছিল ইউনাইটেড স্টেট। তারা ভেবেছিল রাশিয়ার উপর চাপ তৈরি করা গেলে চিন শুধরে যেতে পারে। এত কিছু শোনার পরেও চিন কী করে চুপ করে বসে থাকতে পারে বলুন? ছিলও না। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে চিন। জি-৭ জোট ও নাছোড়বান্দা। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ ধরণের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো হবে। তবে এত কিছুর মধ্যেও যে বিষয়টা আমাদের চোখ এরিয়ে যাচ্ছে সেটা হচ্ছে, চীন অন্যান্য দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি নিজস্ব জোট তৈরির লাগাতার চেষ্টা করে চলেছে। গত সপ্তাহে জাপানে জি-৭ সম্মেলন শুরুর হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেছে চীন। তবে কি, জি-৭ এর বিরুদ্ধে অন্য কোন চক্রান্ত চলছে? আর তাই এই ঘুঁটি সাজানো?
চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসন ঠেকাতে জি-৭ নেতাদের এসব পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কাজ করবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। জি-৭ নেতাদের এসব বার্তা চীন কীভাবে গ্রহণ করবে, তাও বিতর্ক তৈরি করেছে। তবে ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে, উভয়েই পারস্পরিক সমালোচনার পাশাপাশি অংশীদারত্ব উপভোগ করেছে। কিন্তু এইবারের প্রতিদ্বন্দ্বীতায় শেষ হাসি কে হাসবে, তা তো সময়ই বলবে। আপনাদের কী মনে হয়, জি-৭ এর পদক্ষেপ কী চীনকে শায়েস্তা করতে পারবে? বিশ্বের অর্থনৈতিক হয়রানি কমাতে পারবে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ।