Trending
তিনদিনে ১৫-টি বাইল্যাটারাল মিটিং
নরেন্দ্র মোদীর বিজিয়েস্ট শিডিউল
লক্ষ্য কি একটাই?
একুশ শতক কি সত্যিই এশিয়ার?
ASEAN থেকে কার উদ্দ্যেশ্যে মোদীর গর্জন
কেনই বা জি-২০ বৈঠকের পর রুদ্ধদ্বার মিটিং
বাংলাদেশকে গুরুত্ব আলাদা করে, কেন?
সবকিছুর পিছনে কি একটাই লক্ষ্য
বন্ধ করতে হবে চিনের বাড়াবাড়ি?
আজকের প্রতিবেদন এই নিয়ে, তাই দেখতে হবে স্কিপ না করে একেবারে শেষ পর্যন্ত।
নরেন্দ্র মোদী এতো বিদেশ সফর করেন কেন? বিগত এক বছরে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের ধুম অনেকের মনে এই প্রশ্নটা তুলে ধরেছে। এমনকি যে সকল দেশে ইতিপূর্বে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পা পড়ে নি, সেসব দেশেও ঝটিকা সফর সেরেছেন তিনি। এরই মধ্যে নতুন করে মোদীর গর্জন শুনতে পাওয়া গেল আসিয়ান থেকে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যেভাবে ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’-তে জোর দিয়েছিলেন, সেই পলিসিকে জোর দিতেই শোনা গেল মোদীর কথায়। আসিয়ানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দশটা দেশ। সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন, মায়ানমার। এই জোট ভারতের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই আবার চিনের জন্য। কিন্তু ভারত এবং চিনের লক্ষ্য আলাদা। চিন কোন না কোনভাবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য ছড়াতে চেয়েছে। আর ভারত প্রথম থেকেই চিনের বাড়াবাড়ি আটকাতে দশে মিলি করি কাজ গোছের মনোভাব দৃঢ় করেছে। অপেক্ষাকৃত আয়তনে এবং অর্থনীতিতে ছোট এই দেশগুলোর মধ্যে একটা উত্তেজনা রয়েছেই। আর সেটা হল কিভাবে আমেরিকা এবং চিন উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য হাত বাড়িয়ে রেখেছে। তাই নতুন করে সংঘাত নয়, নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টির প্রয়াস নয়। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভারতের পাশে থাকাটা তাদের জরুরি বলেই মনে করেছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো। ভারত সেখান থেকেই পজিটিভ সাড়া দিয়েছে এবং সেই বার্তাই দিয়েছেন। আর তারপরেই ছুটে আসা জি-২০ বৈঠকে।
পুতিন আসবেন না। পুতিন নিজে থেকে সেই কথা বলেছেন। ফোনালাপ সেরেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে। পরিবর্তে এসেছেন বিদেশমন্ত্রী লাভরভ। যদিও জিনপিং যে আসবেন না, সেটা সাফ জানানো হলেও এই নিয়ে মোদীর সঙ্গে কথা হয়নি। এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী, ইতালির প্রধানমন্ত্রী একের পর এক রাষ্ট্রনেতারা পৌঁছে গিয়েছেন ভারতে। জি-২০ সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব। শুধু সম্মেলন নয়। সম্মেলনের শেষে মোদীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হবে এখানেও। বাইডেনের সঙ্গে কী কথা মোদীর- সেটা জানা যায় নি। কারণ প্রধানমন্ত্রী মোদী কোন সাংবাদিকদের অ্যালাও করেন নি। কিন্তু কী বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে, তার একটা ধারণা পাওয়া গিয়েছে। ৭ লোককল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সারেন শেখ হাসিনা। উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের রাষ্ট্রদূত এবং বিদেশ মন্ত্রকের মাথারা। সেখানেই আলোচনা হয় ভারত এবং বাংলাদেশ কিভাবে কাজ করবে হাতে হাত মিলিয়ে। প্রথম অসামরিক পরমাণু ক্ষেত্রে টেকনোলজি দুই দেশের মধ্যে চালাচালি হবে। মুক্ত এবং অবাধ বাণিজ্য হবে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। আর এসব ছাপিয়ে নতুন করে যে তথ্য এলো, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ভারতীয় টাকায় বাণিজ্য কিভাবে হতে পারে আরও মসৃণ ভাবে সেদিকে নজর দেওয়া হবে। এছাড়া কৃষি গবেষণা বা কালচারাল সেক্টর তো রয়েছেই।
জি-২০ ক্যাপ্টেন্সি হোক বা আসিয়ানের বৈঠক। মোদীর ক্যাপ্টেনসি দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে কতটা অচলাবস্থার মধ্যে ফেলেছে সেটা একেবারে অন্য বিষয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে ভারত যেরকম জোরদার পলিসি নিয়ে এগোচ্ছে তারপর মনে করা হচ্ছে এটা এশিয়ার সময় তো বটেই, তার থেকেও বেশি ভারতের সময়। কারণ একটাই। এশিয়ান জায়ান্টস যদি কাউকে বলতে হয় তাহলে সেটা চিন এবং ভারত। চিন কিভাবে নিজের নীতি সাজায় সেটা সকলেরই জানা। গরীব দেশে ঋণের ফাঁদ, দিনের শেষে বরবাদ। আর অন্যদিকে সীমান্তে উত্তেজনা। চিনের একনায়কতন্ত্র মানসিকতাকে জোর ধাক্কা দিতে হবে। আর সেটাই মনেপ্রাণে করতে চাইছে ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় মোদী পুতিনের সামনে বলেছিলেন, আজকের সময় যুদ্ধের নয়। ভারত সত্যিই কোনদিন সম্মুখ সমরে আসতে চায় না। সেটা চিনের সঙ্গে তো নয়ই। কিন্তু দেশটাকে মোক্ষম জবাব দিতে হবে। তাই হাতে নয়, এবার ভাতে মারার পরিকল্পনা। এমনিতেই জিনপিং-কে নিয়ে চিনের সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে প্রবল অসন্তোষ। এদিকে চিনের অর্থনীতি তেমন একটা সুবিধেজনক জায়গায় নেই। আর এটাকেই কাজে লাগাতে চায় ভারত। তাই যেদিক থেকে চিন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন মজবুত করার জন্য একের পর এক দেশের সঙ্গে বড় বিনিয়োগে নামার চেষ্টা করছে, ঠিক সেভাবেই উল্টো দিক থেকে একই চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত। চিন একদিকে যেমন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়েছে তেমনই সৌদি আরব হয়ে লম্বা একটা রাস্তা তৈরির পথে হাঁটতে চাইছে ভারত। সেখানে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে আমেরিকা।
পুঁজিবাদ নিপাত যাক- আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এই বাক্যটা কেমন যেন হাস্যকর ঠেকে। আর পুঁজিবাদের আঁতুড়ঘর মার্কিন মুলুক। এই বিশ্বপুঁজির অঙ্ক চলছে ডলারের মাধ্যমে। সুতরাং এখানেও আবার আমেরিকার আধিপত্য রয়েছে। বরং ডলারের দাদাগিরি বন্ধ হোক এটা প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও মনে মনে সেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। সেই রেসে সামিল রয়েছে ভারত নিজেও। এখানে একটা মোক্ষম চাল ভারতের। পুঁজিপতির দেশ আমেরিকার সকল ব্যবসা ভারত চিন থেকে নিজের ঘরে নিয়ে আসতে চায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ভারতের জন্য সেটা আরও সুবিধে করে দিয়েছে। চিনের পাশ্চাত্য বিরোধী মনোভাবের কারণে পৃথিবীর সব তাবড় সংস্থাগুলো তাই ভারতকে পাখির চোখ করছে। অতএব, ভারত যদি নিজের দেশে চিনে তৈরি ব্যবসাকে নিয়ে আসতে পারে এবং একইসঙ্গে সমস্ত সেক্টরে নিজেদের নম্বর ওয়ান প্রমাণ করতে পারে সেটা ভারতের ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো হবে। অন্যদিকে একুশ শতক এশিয়ার শতক- এই বিষয়টাও লক্ষ্য রেখেছে ভারত। কারণ, ইউরোপ, আমেরিকার ব্যবসার চাকা যদি ভারত থেকেই চালিত হয় দিনের শেষে এশিয়ার শক্তিবৃদ্ধিই তো হবে। এশিয়ার শক্তি বাড়ুক, ভারতের শক্তি বাড়ুক। রাশিয়া সঙ্গে থাকুক। শুধু চিন যদি…যাক গে, আজকের প্রতিবেদন এটুকুই।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ