Trending
কেন জি২০-র আমন্ত্রণ বাংলাদেশকে?
ভারতের সঙ্গে শুধুই বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের খেল?
বাংলাদেশের আমন্ত্রণ রক্ষায় লাভ কী?
ব্রিকসের সদস্য হয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের আমন্ত্রণ গ্রহণ করার পরেই তুমুল চর্চা তাহলে কি ভারতের ক্যাপ্টেন্সিতে এবার জি ২০-র অন্তর্গত হতে চলেছে বাংলাদেশ? প্রশ্নটা ঘোরাফেরা করা অত্যন্ত স্বাভাবিক। খেয়াল রাখবেন, চলতি বছর জি ২০ সম্মেলনে ভারত আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য কয়েকটি দেশকে। যাদের মধ্যে রয়েছে স্পেন, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, আরব এমিরেটস। তবে কূটনীতিকদের বক্তব্য, প্রত্যেকটা দেশ আমন্ত্রণ রক্ষা করলেও বাংলাদেশ কিন্তু প্রায়োরিটি লিস্টে থাকছেন সবার ওপরে, অন্তত আমন্ত্রিতদের মধ্যে। কেন? তাহলে কি বাংলাদেশের জন্য সুবর্ণ সুযোগ করে দিচ্ছে ভারত?
তার আগে বলা যাক জি ২০ নিয়ে। বর্তমানে জি ২০-র স্টেটাসটা ঠিক কী? ওয়ার্ল্ড জিডিপি-র প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে জি ২০ দেশ থেকে। এছাড়া বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ রয়েছে এই জি ২০ দেশগুলোর হাতেই। একইসঙ্গে ওয়ার্ল্ড পপুলেশনের ৬০ শতাংশ এই জি ২০ দেশের মানুষ। সুতরাং বিশ্ব বাণিজ্যকে কন্ট্রোল করার জন্য এবং জি ২০ ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্যে কতটা অশনি সংকেত নেমে আসতে পারে সেটা বোঝানোর জন্য আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিৎ জি ২০-র মোটো নিয়ে। সাল ১৯৯৭। সেই সময় পূর্ব এশিয়ায় দেখা দেয় আর্থিক সংকট। সেই সংকটের মোকাবিলা করার জন্য তৈরি হয় জি ২০। এরপর ১৯৯৯ সালে একটা বৈঠক করেন জি ৭ দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী এবং ব্যাঙ্ক গভর্নররা। জি ৭ অর্থাৎ বিশ্বের প্রথম সাতটি এলিট দেশ- কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, ইতালি, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জাপান। আর এই দেশগুলোই কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য, পর্যটনের মতন নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা সারে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে আদৌ কি বাংলাদেশ জি ২০ সদস্য হবে? দিল্লি বলছে ঢাকার ইম্পরট্যান্স কতটা। আর সেই বিষয়টা তুলে ধরতেই হবে। যে কারণে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া বা চিনের সামনে বিষয়টা তুলে ধরতে পারে নয়া দিল্লি।
খেয়াল রাখতে হবে ভারত এবং বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের কথা। শুধু কূটনৈতিক স্তরে নয়। দুই দেশের ইকোনমিক ফ্রেন্ডশিপ যথেষ্ট শক্তপোক্ত। দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম সর্ববৃহৎ যদি বাণিজ্যিক অংশিদারত্ব কারুর থাকে তাহলে সেটা ভারত এবং বাংলাদেশের। আর বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের। সুতরাং ইকোনমিকালি বাংলাদেশ যদি মেজর একটা জাম্প দিতে চায় তাহলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হতে হবে। আর বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করাটা প্রয়োজন। এখানেই শেষ নয়, অ্যাক্ট ইস্ট পলিসিও দারুণ ভাবে কাজ করছে। ফলে বাংলাদেশের গুরুত্ব ভারতের কাছে কোন হেলাফেলার বিষয় নয়। বরং যত দিন যাচ্ছে ততই দিল্লির পাশে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের জায়গাটা শক্তপোক্ত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ এশিয়ান জায়ান্ট হয় নি সেটা একেবারেই ঠিক। এশিয়ার বাঘ বলতে আমরা দুটি দেশকেই বুঝি- এক ভারত এবং দুই চিন। কিন্তু চিনের থেকেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বভাব, সংস্কৃতি সবকিছুর সঙ্গেই মিল রয়েছে। সুতরাং চিনের নজরদারি ভালোরকম বাড়ার আগেই ভারত যদি বাংলাদেশকে একেবারে পাশে বসিয়ে দিতে পারে তাহলে রাইজিং ইকোনমি বাংলাদেশ কিন্তু ভারতের জন্য ভবিষ্যতে চিনকে বিপদে ফেলতে তুরুপের তাস হতে পারে। আর সম্পর্ক যদি জোরালো হয় তখন দুই দেশের শ্রীবৃদ্ধি তো হবেই। একইসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যকে সমৃদ্ধ করবে নিউ দিল্লি-ঢাকার কেমিস্ট্রি। সেটা গ্লোবাল এরিনায় অনেককেই জবাব দেবার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। তাই বাংলাদেশ আমন্ত্রণ রক্ষা করার পিছনে হাসিনা সরকার জি ২০-র সদস্য হতে যতটা আশাবাদী ঠিক ততটাই ভারত। বাকিটা সময়ের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো নাকি?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ