Trending
বালিতে জি-২০ বৈঠক সফল। তার জন্য কৃতিত্ব স্বচ্ছন্দে যেতে পারে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো-র কাছে। এবার সেই জি-২০ বৈঠকের স্টিয়ারিং চলে এলো ভারতের হাতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মনে করছেন, জি-২০ বৈঠকে সভাপতিত্ব করা আসলে গোটা বিশ্বের সামনে ভারতের ক্যাপ্টেন্সি দেখানোর দুর্দান্ত সুযোগ। জি-২০ বৈঠকে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের সহযোগিতায় অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প- এই সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করা হয় এবং খুঁজে বার করা হয় সমাধানসূত্র। বিশ্ব অর্থনীতির সামনে ভারত নিজের শক্তপোক্ত স্ট্যান্ডপয়েন্ট দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। ফলে গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম ভারতকে নিঃসন্দেহে একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেবে। সত্যিই কি তাই? আচ্ছা, জি-২০ বৈঠক আসলে কি? জি-২০ বৈঠকের পথচলা শুরু কিভাবে? আর এতে ভারতের সামনে কতগুলো চ্যালেঞ্জ থাকবে? এই নিয়েই তুলে ধরা যাক আজকের প্রতিবেদন।
জি-২০’র ফুল ফর্ম হল গ্রুপ অফ টোয়েন্টি। এটি হল বিশ্বের ২০টি দেশের অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নরসদের নিয়ে তৈরি একটা জোট। এই জোটের মূল লক্ষ্য হল বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। জি-২০ জোটের ক্ষমতা বিশ্ব অর্থনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে মোট উৎপাদনের ৮৫%, গ্লোবাল ট্রেডিং-এর ৮০% নির্ভর করে এই জি-২০ গোষ্ঠীর ওপরে। জি-২০-র আওতায় রয়েছে বিশ্ব জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ। এই গোষ্ঠীর সদস্য কারা? ভারত, চিন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, তুরস্ক, রাশিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মান, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই জি-২০ প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করেই গোটা বিশ্বের অর্থনীতি, জলবায়ু মোকাবিলা এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা সারে প্রত্যেকটি দেশ। সুতরাং যে দেশ জি-২০ বৈঠকের সভাপতিত্ব করে, সেই দেশের জিও পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড অনেকটাই মজবুত হয়। এবারে সেটাই করে দেখাতে চলেছে ভারত।
বলাই বাহুল্য, ১৯৯৯ সালে প্রথম জি-২০ বৈঠক তৈরি করা হয় বিশ্ব অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে। গ্লোবাল রিসেশনের মত বড় বিপর্যয় যদি না-আসে আর এলেও যাতে গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে জি-২০র গোষ্ঠীভুক্ত বা গোষ্ঠীভুক্ত নয় এমন দেশগুলি কোনরকম মন্দার আঘাত না-খায়, সেটাই জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি আলোচনা করে। সমাধান সূত্র খোঁজার চেষ্টা করে। এখানেই জানিয়ে রাখি, জি-২০ ফরমেশন হবার শুরুর দিন থেকেই ভারত এই গ্রুপের সদস্য। মূলত জি-২০ যে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করে, সেই সম্মেলনে থাকে জি-২০র অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, বিদেশমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী সহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সম্মেলনে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, যে-দেশ জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব করবে সেই দেশের গ্লোবাল ইনফ্লুয়েন্স কতটা বাড়তে পারে? ভারতের ক্ষেত্রেও সেই ট্র্যাডিশনের কোন নড়চড় হবে না। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, জি-২০ বৈঠক আয়োজন করার জন্য ভারতের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে।
ভারতে জি-২০ সম্মেলন বসেছে ১ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত। মনে করা হচ্ছে, জি-২০ বৈঠকের জন্য প্রায় ২০০টি সভা আয়োজন করা হবে দেশজুড়ে। দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যে চলবে জি-২০-র বৈঠক। কিন্তু এই বৈঠকে ভারত বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে পারে। কিরকম, সেটাই বলছি। এমনিতেই জি-২০-র গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠেছে প্রশ্নচিহ্ন। অনেকেই গোষ্ঠীর মধ্যে মতবিরোধের চিড় লক্ষ্য করছেন। ভারতের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল এই ফাটল মেরামত করা। সঙ্গে যত মত, তত পথের মধ্যে নির্ভুল একটি সংযোগস্থাপন করা। বিষয়টা এমনভাবেই করতে হবে যাতে প্রত্যেকটি দেশ নির্দিষ্ট একটি সরলরেখায় আসতে পারে। যেখানে একটি ফর্মুলা প্রত্যেকটি দেশ মেনটেন করবে ভালোভাবে। ভারতের ক্ষেত্রে জি-২০ বৈঠক আয়োজন করতে গেলে প্রথমেই যা মাথায় রাখতে হবে, সেটা হল জলবায়ুর ক্ষতি। জানা গিয়েছে, যেহেতু ভারত এবার জি-২০ বৈঠক নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাই জলবায়ুর ক্ষতি কিভাবে আটকানো সম্ভব এবং তার পাশাপাশি এই ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য অর্থায়নের বিষয়টাও খেয়াল রাখতে হবে ভারতকে। একইসঙ্গে মধ্য আয়ের এবং নিম্ন মধ্য আয়ের দেশগুলির কাছে কিভাবে রিনিউয়েবল এনার্জিকে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই বিষয়েও ভারত গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা রাখতে চলেছে। তার সঙ্গে রয়েছে অবশ্যই অর্থনৈতিক মন্দা। আসন্ন বিশ্বমন্দা নিয়ে ঠিক কোন কোন পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ, যাতে সেই মন্দার ঢেউ পাশ কাটানো যায় সেদিকেও লক্ষ্য রেখে নির্দিষ্ট একটা রূপরেখা তৈরি করতে হবে ভারতকে। এছাড়াও বিশ্ব জুড়ে যে খাদ্য সংকটের আভাস মাঝেমধ্যেই পাওয়া যায় সেটার নিষ্পত্তি করাটাও ভারতের লক্ষ্য।
জি-২০ বৈঠক নেতৃত্ব দেবার জন্য গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে ভারত অনেকটা এগিয়ে যাবে। মূলত ফরেন রিলেশনের দিকটা আরও শক্তপোক্ত হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক ডিপ্লোম্যাট-রা। তাঁরা মনে করছেন, মন্দার আশঙ্কা, জলবায়ুর পরিবর্তন, খাদ্য সংকট বা শক্তির ব্যবহারের মতন বিভিন্ন নীতি নির্ধারণের জন্য ভারতের সামনে এটা এক দুর্দান্ত সুযোগ এনে দিয়েছে। আর যেহেতু জি-২০-র এবারের ক্যাপ্টেন্সি ভারত করছে, সুতরাং শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে ভারত বিভিন্ন সময়ে সমর্থন পাবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামের। ফলে, গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে ভারতের জায়গা আরও একটু উন্নত হবে। এখানেই জানিয়ে রাখি, জি-২০ বৈঠকে ভারতকে নেতৃত্ব দেবার পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ভারতকে জি-২০ বৈঠক সফলভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য সবধরণের সাহায্য করতে প্রস্তুত মার্কিন মুলুক। এখন বিষয়টা হচ্ছে, আর যাই হোক, গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে ভারত যে ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ পাবে সেটা বলাই যায় চোখ বন্ধ করে। এখন গ্লোবাল ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে ভারত সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারে কিনা আপাতত সেটাই দেখার। আপনার কি মনে হয়, জি-২০ বৈঠক নেতৃত্ব দেবার জন্য কি সত্যিই ভারত সবধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ