Trending
সাল ১৯৯৪, বিশ্বকাপ বিজয়ী দেশ ব্রাজিল। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫.৯%।
সাল ১৯৯৮, বিশ্বকাপ বিজয়ী দেশ ফ্রান্স। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩.৯%।
সাল ২০০২, বিশ্বকাপ বিজয়ী দেশ ব্রাজিল। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৩.১%।
সাল ২০২২, বিশ্বকাপ বিজয়ী দেশ আর্জেন্টিনা। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার?
The winner on the pitch Sunday may be the winner in the marketplace on Monday. ফুটবল বিশ্বকাপ মানে এক অন্যরকমের উন্মাদনা গোটা বিশ্বে। রাজনীতি থেকে অর্থনীতি, সংস্কৃতি সমস্ত কিছুতে একটা বড় ছাপ রেখে যায় এই বিশ্বকাপ। ইতিহাস সাক্ষী আছে, যে দেশ বিশ্বকাপ জেতে, সেই দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়ে। অর্থনৈতিক মানচিত্রে ছাপ রেখে যায় বিশ্বকাপ আয়োজক দেশও। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে এক অন্যরকম অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে। মন্দার বিশ্বকাপ কি এবার তাহলে অর্থনীতিবিদদের নতুন করে হিসেব কষতে বসাবে?
বিশ্বকাপের মরশুম এলে ভারতে অনেক রকমের পাঁড়ভক্তের দেখা মেলে। যারা নিজেদের দলকে সমর্থনের জন্য নানাকরম অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। পছন্দের দলকে সমর্থন করার জন্য জার্সি কেনা কিংবা বাড়িতে পতাকা লাগানো তো খুব সহজ ঘটনা। আপনি এমনও অনেক ভক্ত পাবেন, যারা দলকে সমর্থন করতে পতাকা সেলাই করবে বলে জমি পর্যন্ত বিক্রি করতে দু’বার ভাবে না। আপাতদৃষ্টিতে এটা উন্মাদ ভক্তের খামখেয়ালীপনা মনে হলেও এর কিন্তু একটা অর্থনৈতিক দিকও রয়েছে। বিশ্বকাপের আনন্দে ভেসে গিয়ে ভক্তরা একটু বেশি খরচ করতেও দ্বিধা বোধ করেন না। কিন্তু এটা তো গেল বিশ্বকাপ রিলেটেড ইকোনমিক্যাল কানেকশনের কথা। দেশের জিডিপি কীভাবে বিশ্বকাপের উপর নির্ভরশীল হতে পারে?
২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন টাইমস তাদের প্রতিবেদনে এই বিষয়টা তুলে ধরেছিল। তারা জানিয়েছিল, কীভাবে একটা বিশ্বকাপ সেদেশের জিডিপি বৃদ্ধির এক এবং একমাত্র কাণ্ডারি হয়ে উঠতে পারে? রিপোর্টে জানানো হয় যে, ১৯৯০ সাল থেকে যেসব দেশ ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারও বেড়েছে। যেসব দেশ অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছিল, বিশ্বকাপের কল্যাণে সেসব দেশের অর্থনীতি আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। যেমন ধরুন, ২০০৯ সালে বেপরোয়া বৈশ্বিক মন্দার শিকার হয়েও ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তোলে স্পেন। প্রবল সামাজিক অস্থিরতার মধ্যেও বিশ্বকাপ জেতার পর দেশের জিডিপির উত্থানটা ছিল মনে রাখার মতো। আর সেবারের হোস্ট কান্ট্রি মানে আফ্রিকার কী খবর একবার দেখে নেওয়া যাক। ২০০৯ সালের বিশ্বমন্দার পরের বছরই দক্ষিণ আফ্রিকাতে অনুষ্ঠিত হয় ১৯তম ফিফা বিশ্বকাপ। যা মন্দা-পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়। দেশের জিডিপি বাড়ে অপ্রত্যাশিতভাবে। বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে পাকাপোক্ত হয় আফ্রিকার অবস্থান। এই বিষয়ে অবশ্য বিখ্যাত ইংরেজ অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনস-এর ‘অ্যানিমেল স্পিরিট’ তত্ত্বের কথা না বললেই নয়। যেখানে তিনি বলেছিলেন যে, অস্থির সময়ে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে মানুষ লজিক্যাল সিদ্ধান্ত নেওয়ার বদলে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। আর যে কারণে খেলাধুলায় যখন কোন দেশ বিশ্বকাপ যেতে, তখন সেই আবেগের প্রভাব গিয়ে পড়ে বিনিয়োগকারীদের ওপর। তবে এটাও ঠিক যে বিশ্বকাপ জেতার এই রেষটা অনেকটা শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মতো। যা হঠাৎ করে শরীরের শক্তি বাড়িয়ে দেয়, আর তার পরপরই শরীর নেতিয়ে পড়ে।
যাই হোক, ফিরে আসা যাক মন্দার আবহে আয়োজিত কাতার বিশ্বকাপের কাছে। ২০২২ সালে কাতারের বিশ্বকাপের আয়োজন করার বিষয়টি ঠিক হয়ে গিয়েছিল ২০১০ সালেই। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট এই দেশটি। আর এই বিশ্বকাপের প্রভাব যে কাতারের অর্থনীতিতেও পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক। কাতার সরকারের অনুমান যে, এই বিশ্বকাপের ফলে কাতারের অর্থনীতিতে প্রায় ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হতে পারে। ওদিকে আতিথেয়তা ও রিয়েল স্টেট খাতে বাড়তি ব্যয়ের কারণে কাতারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। বিশ্বকাপ ফাইনালের সন্ধ্যায় ময়দানে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনা। একদিকে উন্নত দেশ ফ্রান্স আর অন্যদিকে আর্জেন্টিনার অবস্থা তথৈবচ। চলতি বছর তাদের মূল্যস্ফীতির হার ১০০-তে উঠেছে। যদিও এবারের বিশ্বকাপে শেষ হাসি হেসেছে ডিয়েগোর দেশ। কিন্তু এই বিজয় তাদের অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, এখন সেটাই দেখার। আপনাদের কী মনে হয়, আর্জেন্টিনার এই জয় কি দেশের মন্দাভাব কাটিয়ে তুলতে পারবে?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ।