বিএসএনএল। সাধারণ মানুষের জিওপ্রীতিতে একদিন প্রায় দেউলিয়া হতে বসেছিল এই রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা। আর আজ দেখুন, জিও, এয়ারটেল আর ভিআই-এর একটা সিদ্ধান্তে কেমন চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। বিএসএনএল নিয়ে চর্চা আরও বাড়তে চলেছে। কারণ বিশ্বের ধনীতম ব্যাক্তি এলন মাস্ক নাকি বিএসএনএল-এর পাশে দাঁড়াতে চলেছেন। তবে এই উক্তির সত্যতা যাচাই করেনি বিজনেস প্রাইম নিউজ। তবে সত্যি বলতে কী? এই সন্দেহ কিন্তু একেবারে হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়াও যাচ্ছে না।

কথায় আছে, শত্রুর শত্রু নাকি বন্ধু হয়। অম্বানি আর মাস্কের ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এক্ষেত্রে এক্স ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে। কেন বললাম? প্রতিবেদনটা শেষ পর্যন্ত দেখলে জলের মতো সহজ হয়ে যাবে পুরো বিষয়টা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি হয়ে কেন হঠাৎ বিএসএনএল নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলেন তিনি? দেখুন, পেশায় এবং পরিচিতিতে যখন ব্যবসায়ী তখন উদ্দেশ্য রয়েছেই। তবে সেই উদ্দেশ্যে ভারতের কতটা লাভের লাভ, সেটাই ভাববার মতো বিষয়। এখন দেখে নেওয়া যাক, মাস্কে কী সত্যিই বিএসএনএল-পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন? আর যদি সত্যিই সেই আগ্রহ তাঁর থেকে থাকে, তাহলে সেটা কেন? জানব বিস্তারিত।

স্টারলিঙ্ক। এলন মাস্কের সংস্থা। নিশ্চয়ই নাম শুনেছেন। ভারতের বাজারে আসার জন্য অনেকদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক। ভারতের মতো সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশের মতো মার্কেট যেকোনো ব্যবসায়ীর পাখির চোখ হবেই। মাস্কও কোন ব্যাতিক্রম নয়। আর ভারতের বাজার যদি একবার মাস্কের দখলে চলে যায়, সেক্ষেত্রে সবচেয়ে সস্তা দরে ইন্টারনেট দাতা হতে পারে স্টারলিঙ্ক। ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল আজও ইন্টারনেট কী? আর তাঁর সুফল বা কুফলই বা কী? তা জানে না। তাই উধু শহর বা শহরতলিতে নয়। সেই সমস্ত গ্রামে গঞ্জে, কোণায় কোণায় পৌঁছে যাওয়ার লক্ষ্যেই ভারতের বাজারে আসতে চায় এলন মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্ক।

কিন্তু এতটা সস্তায় কীভাবে ইন্টারনেট দেবে তারা? দিতে পারবে, কারণ তাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে। আর ভারতে যেহেতু কঞ্জিউমার সংখ্যা বেশি, তাই প্রফিট লিমিট খুব মারজিনাল থাকবে। কিন্তু সস্তা দরে মাস্ক যদি ভারতের মাটিতে ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে শুরু করে, তাহলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা কার বলুন তো? ঠিক তাই। মিঃ মুকেশ অম্বানির। ট্যারিফের দাম বাড়িয়ে যিনি এখন ছোট ছেলের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত। যাই হোক। ভারত সরকারের কাছ থেকে তাই মাস্ক যাতে কোনভাবেই লাইসেন্স পেটে না পারেন, তাই যারপরনাই চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি। বেঁকে বসেছিলেন, নানান অজুহাত দেখিয়ে। সে এক লম্বা কাহিনী। তবে, ঐ যে কথায় আছে না! চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়। এশিয়ার ধনিতম ব্যক্তির জীবনেও এল এমন একটা দিন।

অম্বানির মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও ভারতের মার্কেটে ইন্টারনেট প্রোভাইড করার লাইসেন্স পেয়েছে স্টারলিঙ্ক। মানে এলন মাস্কের সংস্থা। পাশে ছিল সেই রতন টাটা। যিনি মাস্ককে এই লাইসেন্স পেতে সামান্য কিছুটা সাহায্য করেছেন। মানে মাস্ক তাঁর এই লড়াইতে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন রতন টাটাকে। তাই এটা আশা করা যেতে পারে, টাটার কোন প্রয়োজনে মাস্কও তাঁর পাশে থাকবে। অবশ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিনিময় প্রথা নতুন বা অবিশ্বাস্য কোন বিষয় নয়। আর এখানেই আসছে সেই প্রশ্ন। তাহলে কী টাটার সেই সাহায্য ফিরিয়ে দিয়ে বিএসনএল নিয়ে কোন নতুন পরিকল্পনা করতে পারেন এলন মাস্ক?

প্রশ্নের সঠিক উত্তর এখনও সোজাসুজি না মিললেও একটা জিনিস কিন্তু আন্দাজ করা যাচ্ছে। দেখুন স্টারলিঙ্ক মানে এলন মাস্কের সংস্থার উদ্দেশ্য কী? প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবার মান উন্নত করা। আর বিএসএনএল-এর উদ্দেশ্য কী? সেই একই। অর্থাৎ দুজনের উদ্ধেশ্য প্রায় এক। টাটার হাত ধরে বেশ কিছু জায়গায় নিজের পরিষেবা উন্নত করতে শুরুও করে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিকম সংস্থা। আর ওদিকে, লাইসেন্স পেয়ে যাওয়ায় এখন হয়ত শীঘ্রই তাদের পরিষেবার কাজ শুরু করতে পারে স্টারলিঙ্ক। তবে , পুরনো সব কথা কী মাস্কের মতো মানুষ ভুলে যাবেন? সেটা কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না।

আর বিজনেস রাইভলরির দিক থেকে টাটা, রিলায়েন্স একে অপরের ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী। আর বিএসএনএল আর টাটা এখন একইসঙ্গে এগিয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজেই রিলায়েন্স জিও-কে বলা ভালো অম্বানিকে জবাব দিতে মাস্ক যে টাটার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, সেটা কিন্তু হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর মাস্ক যদি সত্যিই বিএসএনএল-এর পাহে দাঁড়ায়- সেক্ষেত্রে ভারতের ইন্টারনেট মার্কেটে ডেটার বাদশা বিএসএনএল যে হবে, সেটা বলাই যায়।

তবে একটাই প্রশ্ন। মাস্ক যদি টাটাকে সাহায্য করার অজুহাতে সত্যিই বিএসএনএল-এর হাত ধরে, তখন বিএসএনএল কী তাঁর নিজের নামেই ব্যবসা করবে? না মানে, টুইটারের নামও তো বদলে গিয়েছিল… তাই আর কি! আচ্ছা, সেক্ষেত্রে বিএসএনএল কী এই একইরকম স্ট্র্যাটেজিতে, দামে কম মানে ভালো প্ল্যানে ব্যবসা করতে পারবে? নাকি অনান্যদের মতো সেই মূল্যবৃদ্ধির পথে হাঁটবে? সেক্ষেত্রে গ্রাহক সংখ্যা হারানর সম্ভাবনা কী তৈরি হবে? আপনাদের কী মনে হয়? জানান কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। জীবন হোক অর্থবহ।