Trending
মনে পড়ছে ঈশপের সেই গল্পটা? স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস যুদ্ধে হেরে গিয়ে লুকিয়েছিলেন একটি গুহায়। সেখানেই দেখতে পান একটি মাকড়সা জাল বুনতে গিয়ে কিভাবে বারবার ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র ছিল না মাকড়সাটি। তাই নতুন করে ফের উদ্যমে লাগে। আর যে কারণে সাতবার হার মানলেও আটবারের বার মাকড়সাটি জাল বুনতে সক্ষম হয়। এভাবেই একটি মাকড়সা রবার্ট ব্রুসের জীবন দর্শন একেবারে বদলে দিয়েছিল। হারানো উদ্যম তিনি ফিরে পেয়েছিলেন। তারপর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেন রবার্ট ব্রুস। এবং নিজের জয় নিশ্চিত করেন।
বন্ধুরা ব্যতিক্রমী কিছু করতে গেলে তার জন্য প্রয়োজন পড়ে সাহস, মেধা, পরিশ্রম এবং সাফল্য পাবার জন্য লাগাতার প্রচেষ্টা। এই চারটি মূল মন্ত্র যদি একটি ছাতার তলায় না-আসে, তাহলে সেই কাজে সাফল্য আসে না। আবার এটাও ঠিক সাফল্য একবারে হয় না। তার জন্য প্রয়োজন হয় ব্যর্থতার। ব্যর্থতা যদি না-আসে তাহলে সাফল্যের আনন্দকে উপলব্ধি করবেন কি করে? ঐ যে বলে না, ব্যর্থতাই হচ্ছে সাফল্যের চাবিকাঠি! আর এই প্রত্যেকটিই নিজের জীবনে খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন এলন মাস্ক। যিনি একটা সময় ছোট্ট ঘরের একটি সোফায় শুয়ে চোখের পাতা এক করতেন, তখন সেই ঘরে বসেই বুনেছিলেন এমনই কিছু স্বপ্ন। যা সেই সময়ে দাঁড়িয়ে কিছুটা অকল্পনীয় মনে হয়েছিল অনেকের। কিন্তু মাস্কের আত্মবিশ্বাস ছিল অগাধ। তিনি মনে করতেন, তুমি যত বড় হবে, ততই চারপাশ থেকে ঘিরে ধরবে হাজার হাজার প্রতিকূলতা। কিন্তু অবিচল থাকতে হবে নিজের লক্ষ্যে। তাই বন্ধুরা, চাকরি করুন বা ব্যবসা। নিজেকে ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রতিকূলতার সব ঢেউকে সাঁতরে পার হতে হবে। যা করতে পেরেছিলেন এলন মাস্ক। ভয় পাবেন না, অবাক হবেন না। কারণ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবেন আপনিও। আসুন, আজ আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব এলন মাস্কের এমনই কিছু লাইফ চেঞ্জিং থটস, যা আপনাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলতে অনেকটাই সাহায্য করবে।
১।
হাল ছেড়ো না বন্ধুঃ
একবার, দু’বার, তিনবার…নিজের লক্ষ্যে যতক্ষণ না পৌঁছতে পারবেন ততক্ষণ হাল ছাড়া যাবে না। আর এই কথাটা এলন মাস্কের জন্য দারুণভাবে প্রযোজ্য। স্পেস এক্স থেকে ফ্যালকন রকেট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করার আগে তিনবার ব্যর্থ হয়েছিলেন মাস্ক। চতুর্থবার যদি ব্যর্থ হতেন, তাহলে হয়ত নিঃস্ব হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকত না। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। এবং চতুর্থবার এলন মাস্ক সেই অসাধ্য সাধন করলেন। এটা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হল। এলন মাস্ক নিজের লক্ষ্য থেকে একবিন্দু সরে আসেননি। আপনারাও বন্ধুরা, সাফল্য পেতে গেলে এমনই অনেক বাধা পাবেন। ব্যর্থতার হাতছানি পাবেন। কিন্তু হতাশ হবেন না, ভেঙেও পড়বেন না। বরং নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকুন। দেখবেন, সাফল্য আপনার দোরগোরায়।
২।
ঝুঁকি নেবার প্রবণতাঃ
এলন মাস্ক যেভাবে ঝুঁকি নিতে পেরেছিলেন, সেটা কিন্তু একেবারেই অসম্ভব কিছু নয়। বারবার নিজেকে নিয়ে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। কারণ ঝুঁকি নেবার মত সাহস তিনি দেখাতে পেরেছিলেন। জিপ২ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পে প্যাল। আবার স্পেস এক্সের জন্য পে প্যালে থাকা নিজের সমস্ত শেয়ার বিক্রি করেছিলেন তিনি। দেখুন বন্ধুরা, এলন মাস্ক বিশ্বাস করেন যে, কোন কিছু যদি অ্যাচিভ করতে হয় তাহলে হাজার প্রতিকূলতা থাকলেও সেটা করতে হবে। নিজেকে উন্নত করতে গেলে যদি ঝুঁকি নিতে হয় তো হবে। পিছিয়ে আসার কোন রাস্তা নেই। শুধু যে লক্ষ্যে আপনি পৌঁছতে চাইছেন, সেই লক্ষ্যে আপনার ডেডিকেশন থাকতে হবে পুরোটা।
৩।
পরিশ্রমের বিকল্প নেইঃ
কেউ শারীরিক পরিশ্রম করেন। কেউ মানসিক পরিশ্রম করেন। কিন্তু সেই পরিশ্রমের কোন বিকল্প থাকা উচিৎ নয়। এলন মাস্ক যখন নিজের ঐ ছোট্ট এক কামরার ঘরে বসে কাজ করতেন, তখন তিনিও উদয়াস্ত পরিশ্রম করতেন। সকালবেলা ব্যস্ত থাকতেন ওয়েবসাইট নিয়ে। রাত্রিবেলা করতেন কোডিং। মাঝে কিছুক্ষণের জন্য চোখের পাতা এক করতেন তিনি। বিছানা ছিল না। তাই সোফা ছিল মাথা গোঁজার একমাত্র জায়গা। এলন মাস্ক মনে করেন, আপনি যে কাজ করতে ভালোবাসেন তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করুন। কাজের সময় বা বিশ্রামে সবসময় সেই বিষয়টা নিয়ে পড়ে থাকুন। দেখবেন, একদিন না একদিন আপনি নিশ্চয়ই সেই পরিশ্রমের ফল পাবেন।
৪।
হোম ওয়ার্কঃ
ময়দানে খেলতে নামার আগে হোম ওয়ার্ক করা ভীষণ জরুরি। এলন মাস্ক সেই কাজটা মন দিয়ে করতেন এবং এখনো করে চলেছেন। মাস্ক যখন মহাকাশ নিয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার কথা ভেবেছিলেন, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন, মাস্ক হয়ত এসবই শখের বশে করছেন। কিন্তু অন্যের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করলেন তিনি। মাস্ক নিজে বিশ্বাস করতেন, একদিন না একদিন তিনি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছবেন। তার জন্য যে হোম ওয়ার্কের প্রয়োজন রয়েছে, সেটা তিনি করেছেন। আপনারাও যদি নিজের লক্ষ্য পূরণের সেই তাগিদ অনুভব করেন, তাহলে কি করতে চাইছেন, কেন করতে চাইছেন- এই প্রশ্নগুলো নিজেকে বারবার করুন। তার সঙ্গে হোম ওয়ার্ক চালিয়ে যান। এলন মাস্কের এই অভ্যাস যদি আপনি ফলো করেন তাহলে দেখবেন, অনেকের ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে আপনিও পেতে পারেন সাফল্যের দিশা।
৫।
সমালোচনা গ্রহণ করুনঃ
আপনি যে কাজেই সাফল্য পাবার চেষ্টা করুন না কেন, সমালোচনার শিকার আপনাকে হতেই হবে। কিন্তু জানেন কি, এই সমালোচনাই আপনাকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা অনেকটা পরিষ্কার করে দেবে। একইসঙ্গে মাথায় রাখবেন, যতই আপনি সমালোচনার শিকার হন না কেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন না। মনে রাখবেন, আপনি যা করতে চাইছেন, বা আপনার যে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে সমালোচনা গ্রহণ করার মতন মানসিকভাবে শক্ত থাকাটা খুব প্রয়োজন। এলন মাস্ক নিজেও সেই মতে বিশ্বাসী। তিনি মনে করেন, সমালোচনা মন দিয়ে শোনা প্রয়োজন। কারণ সমালোচনা আপনার ভুল ধরিয়ে দিতে অনেকটা সাহায্য করবে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনি নিজের লক্ষ্যে অনেকটাই এগোতে পারবেন।
এখানেই শেষ নয় বন্ধুরা। এলন মাস্ক নিজের জীবন দর্শনে আরও বেশ কিছু চাবিকাঠির ব্যবহার করেছেন। আর সেই কারণেই তো আজ তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। যা শেয়ার করব আরেকটা প্রতিবেদনে। শুধু মনে রাখবেন, মাস্ক নিজে যা করেছেন সেটা আপনিও করতে পারবেন। কারণ এই দুনিয়ায় অসম্ভব বলে যে কিছু নেই, সেটা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন এলন মাস্ক। তাই বন্ধুরা, আজকের প্রতিবেদনে সাফল্য পাবার জন্য মাস্কের যে পাঁচটি মন্ত্র আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম, সেটা নিজের জীবনে অ্যাপ্লাই করুন। দেখবেন, সাফল্য পেতে খুব একটা অসুবিধা হবে না। আর যদি সেই সাফল্য আপনারা কেউ পেয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই জানাবেন আমাদের। ভালো থাকুন, দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ। আর হ্যাঁ, লাইক, শেয়ার এবং সাবস্ক্রাইব করতেও ভুলবেন না কিন্তু।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ