Trending
জুন মাসে আবারও আমেরিকায় আসছে গ্রেট ডিপ্রেশন? তাসের ঘরের মতন ভেঙে পড়বে আমেরিকার অর্থনীতি?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। আজ সেই দেশের অর্থনীতিই খাদের কিনারে। আমেরিকার মাতব্বররা বলছেন, যদি এভাবেই দিন কাটতে থাকে তাহলে বাইডেনের মুখে হাসি মিলিয়ে যাওয়া আর অপেক্ষা মাত্র। বাইডেনের হাসি বন্ধ মানে, গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম ভ্রুকুটি। আর্থিক মন্দা, বেকারত্ব, টালমাটাল শেয়ার মার্কেট সবকিছুই পর পর হতে শুরু করবে। আমেরিকার সাধারণ মানুষের অবস্থা দাঁড়াবে একেবারে ছাগবলির মতন। একইসঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতি- সে তো আর কূল খুঁজে পাবে না। আমেরিকা নিজেও ডুববে, সবাইকেও ডোবাবে। স্বাভাবিকভাবেই, আমেরিকার অর্থভাগ্যে আজ ঝুলছে সুবিশাল খাঁড়া। কিন্তু কেন? আসুন আজকের প্রতিবেদনে বলব, কেন আমেরিকার অর্থনীতিতে ঘনিয়ে আসছে কালো দিন।
বিশ্ব মার্কেটে দাদাগিরি কে দেখায়? আমেরিকা। বিশ্ব অর্থনীতি কে চালায়? আমেরিকা। আমেরিকা এমনই একটি দেশ, আর সেই দেশের মুদ্রা এমনই একটি জায়গা ধরে রেখেছে গ্লোবাল মার্কেটে যে ডলার ছাড়া কোন দেশ কলার উঁচু করতে পারবে না। যে দেশে ফরেক্স রিজার্ভে ডলার বেশি, সেই দেশের কলার তত উঁচু। কিন্তু এখন যে দিন ঘনিয়ে আসছে, তাতে মার্কিন প্রশাসনের সামনে চরম সংকট। আমেরিকা ঋণখেলাপি হতে পারে। শুনেই ডঙ্কা বেজে উঠল তো? কিন্তু এটাই সত্যি হতে চলেছে। কারণ, আমেরিকায় ঋণের সীমা পৌঁছে গিয়েছে ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারে। এটাই সর্বোচ্চ। নতুন করে আর কোন ঋণ নিতে পারবে না আমেরিকার ট্রেজারি সেক্রেটারি। ফলে অর্থনীতির জন্য অতি ভয়ংকর এক ধাক্কা আসতে চলেছে। ওবামার প্রিয় পাত্র দ্য সুইট বাইডেন রাতারাতি ভিলেন হয়ে উঠবেন। আর ধানাইপানাই না-করে বরং বিষয়টা আরেকটু সহজ ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করি।
মার্কিনী ট্রেজারি সেক্রেটারি বিভিন্ন খাত থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। কিন্তু চাইলেই কি যথেচ্ছ ঋণ নেওয়া সম্ভব? একেবারেই না। সরকার কত টাকা ঋণ নেবে, তার একটা অঙ্ক আগে থেকেই কষা থাকে। সেই অনুমোদন দেয় কংগ্রেস। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি যা তাতে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেস যে সর্বশেষ অনুমোদন দিয়েছিল, সেই টাকা এখনই ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়ে গিয়েছে। সেটা ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। মানে, নতুন করে আর ঋণ তারা নিতে পারবে না। সুতরাং সরকারকে কিছু না কিছু ভাবে এই টাকা খরচ করতে হবে। তার জন্য নিতে হবে স্ট্র্যাটেজি। সেক্ষেত্রে তারা কী করতে পারে? ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার একভাবে ধরে রাখতে পারে। অনেকেই বলছেন, সেটাও যদি কাজে না-লাগে তখন আমেরিকাকে নজর দিতে হবে উদ্বৃত্ত বাজেটের দিকে। মানে, রাজস্ব যা আদায় হবে সেটা দিয়েই যাবতীয় খরচ খরচা চালাতে হবে মার্কিনী প্রশাসনকে। অনেকেই বলছেন, উদ্বৃত্ত টাকায় আমেরিকা নিজের সংসার চালাবে? এটা ইতিহাসে আগে কোনদিন হয়েছে? বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই পথে যদি আমেরিকাকে হাঁটতেই হয় তাহলে বলতে হবে আমেরিকার জিডিপি গ্রোথ ৪.৫% ধাক্কা খাবে। সেটা কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এই বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আমেরিকার ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন।
মার্কিন প্রশাসন এমনিই যে টাকার কর আদায় হয়, তার চেয়ে বেশি খরচ করার জন্য ঋণ নেওয়ার ট্র্যাডিশন ধরে রেখেছে। কারণ সেই ঋণের টাকা দিয়েই বাকি পরিশোধ করে থাকে মার্কিনী প্রশাসন। কিন্তু গোল্ডম্যান স্যাক্সের রিপোর্ট বলছে, এই বছর যেন ঋণ পরিশোধ করার ব্যপারে অনিশ্চয়তা আরও বেশি করে জমা হল। যুক্তরাষ্ট্র ঋণ খেলাপি হলে লক্ষ লক্ষ আমেরিকাবাসী, বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যৎ একেবারে অন্ধকারে ডুবে যাবে। স্পেশ্যালি আমেরিকার সাধারণ মানুষ যারা সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতন বেশ কিছু সুবিধে পেয়ে থাকেন তাঁরা সেই সুবিধেগুলো আর পাবেন না। ক্ষতির মুখে পড়বে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। মাইনে আটকে যেতে পারে সামরিক বাহিনীর। সাধারণ মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ কমে যাবে। একইসঙ্গে বাড়বে মন্দার আঁচ, হাজারে হাজারে বেকার মানুষের ভিড় বাড়বে। সব মিলিয়ে একেবারে টালমাটাল পরিস্থিতির শিকার হবে খোদ আমেরিকা। বর্তমানে আমেরিকার ঋণ সেই দেশের জিডিপির ১২৩.৪ শতাংশ। আর পরিস্থিতির অভিমুখ যেদিকে, তাকে অনেকেই গ্রেট ডিপ্রেশনের ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন। ডিফল্ট হবার দুর্নাম ছড়িয়ে পড়বে গোটা বিশ্বে। আর যদি ঋণের সীমা বৃদ্ধি আটকে থাকে তিন মাস বা তার বেশি, তাহলে জিডিপি ধাক্কা খাবে ১৫% মতন। যদিও ইতিহাস বলছে একেবারে অন্য কথা। যদি আমেরিকা ঋণ পরিশোধ করতে না-পারে তাহলে আমেরিকার অর্থনীতি পড়বে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে। তখন নিজেদের বাঁচানোর জন্য আবারও ঋণ সীমা বাড়াতে বাধ্য হবে মার্কিনী প্রশাসন।
সত্যি বলতে কী, আজও বিশ্ববাজারে ডলার ছাড়া গতি নেই। আর লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীদের সবথেকে বেশি আশা ভরসার জায়গা ডলার, টেজারি বন্ড। সুতরাং, আমেরিকার অর্থনীতি যদি গ্রেট ডিপ্রেশনের কবলে আবারও পড়ে, তাহলে কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সেটা ভয়াবহ আকার নিতে পারে। তার জন্যই কি ভারত ডলারের পরিবর্তে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে সোনা মজুদ করছে? সেই নিয়ে কথা বলব আরেকটা প্রতিবেদনে যে কেন আরবিআই ডলারের পরিবর্তে সোনা মজুদে বেশি নজর দিচ্ছে। আপাতত আজকের প্রতিবেদন এইটুকুই।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ