Trending
এখনই কিছু ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে সব ঠিক হয়ে যাবে। এমনটাই জানাচ্ছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইশক ডর। কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে, পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ কি আর এসবে হুঁশ ঠিক রাখতে পারছেন? ভারত তো বটেই, এমনকি পাকিস্তানের দেশের মানুষগুলোই নিজের দেশের নেতা-মন্ত্রীদের কথা বিশেষ পাত্তা দেয় না। এখন অনেকেই পাকিস্তানের পলিটিক্যাল মাথাদের নিয়ে তেমন একটা ভাবিত হন না। কারণ এরা প্রেজেন্ট টেন্স নিয়ে তেমন ভাবিত থাকেন না। হয় পাস্ট, অথবা ফিউচার- এই নিয়েই তাদের যাবতীয় কথার আদানপ্রদান। পাকিস্তানের অর্থনীতি কবে ঠিক হবে? – হবে
পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের অভাব, অভিযোগ মিটবে? – মিটবে
পাকিস্তানে জলের ক্রাইসিস মিটবে? – মিটবে
এভাবেই সব হবে। আর এই ‘হবে’-র চক্কোরে পড়ে আবারও পাকিস্তানকে ট্রোলড হতে হল। এবারে করলেন স্বয়ং পাকিস্তানের বিগ ব্রাদার তুর্কির প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। বিষয়টা কী একটু খোলসা করে বলি।
নেট মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ প্রায় আলিঙ্গন করতে গেলেন এরদোয়ানকে। কিন্তু তিনি নিজের ঘাড়টি একবারের জন্য বাঁকালেন না। খুব কাঠ কাঠ অভ্যর্থনা গ্রহণের ধরণ ছিল মিঃ প্রেসিডেন্টের। তারপরেই কার্যত মকড হচ্ছেন শরিফ। নিজের দেশের লোকেরাই তাঁর দিকে আঙুল তুলেছে। পাকিস্তানের এই হামলে পড়া বিষয়টা যেমন নতুন নয়, তেমনই আবার এরদোয়ানের ঘাড় সোজা রাখা তাও আবার পাকিস্তানকে দেখে, সেটাও কিছুটা নতুন তো বটেই। তাহলে কি এবার তুর্কি নিজেও কি একটু একটু করে ভারতের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে? এটা যদি হয়, তাহলে কিন্তু ইশক ডরের অর্থনীতিকে খুব তাড়াতাড়ি জিগিয়ে তোলা কঠিন। কারণ এখানে পাকিস্তানের দুটি হাত সেই অর্থে ধরা রাখে দুজন- একদিকে চিন, অন্যদিকে তুর্কি। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে বরাবর পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে এসেছে তুর্কি। সেই তুর্কি এবার শরিফের অভ্যর্থনা এভাবে মিঠে-মন্দে গ্রহণ করার অর্থ কী? তাহলে কি জিও পলিটিক্সে ভারতের মধুরতম প্রতিশোধ হতে চলেছে এটাই?
শুধু পলিটিক্যাল স্ট্যান্ডিং থেকে নয়। ইকোনমিকালি সময়ে-অসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে তুর্কি। এমনকি পাকিস্তানে বন্যা এলে তুর্কি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সেটা তো মনেই আছে যে, তুর্কিতে ভূমিকম্প হবার পর পাক কিভাবে সাহায্য পাঠানোর নাম করে মুখ পুড়িয়েছে। তাছাড়া পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ নিজেরাই বলছেন, পাকিস্তানকে কার্যত চালাচ্ছে চিন। চিনের অঙ্গুলিহেলন ছাড়া পাকিস্তানে একটি জামার সুতোও বিক্রি হয় না। তার ওপর পাকিস্তানের ভেতর যে চূড়ান্ত অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে তুর্কির পাশে থাকাটা খুব প্রয়োজন। কিন্তু সেও যে…
এখন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য কী? তিনি বলছেন, পাকিস্তানে আর্থিক পরিস্থিতি খুব একটা স্বভাবিক নয়। তাঁর বক্তব্য পাকিস্তানের অর্থনীতিকে সঠিক খাদে বয়ে নিয়ে যেতে আবারও কিছুটা সময় লাগবে। একদিকে ডলারের নিরিখে টাকার ভ্যালু কমছে। আবার অন্যদিকে বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ তলানিতে এসে ঠেকছে। তাঁর বক্তব্য ১৯৯৮ সাল এবং ২০১৩ সালে পাকিস্তান যে কঠিন আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল, সেই পরিস্থিতি আবারও দেখা দিয়েছে। কিন্তু এবারেও নাকি দুর্দান্ত ট্যাকল করে সেটা আটকানো সম্ভব।
খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে ২০২২ সালে পাকিস্তানের অর্থনীতি ছিল ২৪ নম্বরে। এখন দাঁড়িয়ে রয়েছে ৪৭ নম্বরে। কিন্তু পাকিস্তান এখান থেকে বেরিয়ে আসবে কিভাবে? ভারতের সঙ্গে তার আদায় কাঁচকলা। তুর্কি পাশ থেকে সরছে। মুখ ভার করে রয়েছে ইরান। সেও এখন ভারত ঘেঁষা মনোভাব নিয়েছে। মাঝে একবার পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মিঃ পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে গেছিলেন। তখন অনেকেই ঠাট্টার বশে ভেবে নিয়েছিলেন, রাশিয়া হয়ত ভারতের উড়ু উড়ু মনোভাব ছাঁটার জন্য পাকিস্তানকে পাশে চাইছে। কিন্তু এসবে চিঁড়ে ভেজে নি। কারণ ক্রেমলিন থেকে হাওয়া এখনো দিল্লির দিকেই আসছে। সেই হাওয়া করাচি যায়নি। সুতরাং, পাকিস্তানের অর্থনীতি বলে নয়। পাকিস্তানের পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি সেটা আভ্যন্তরীণ তো বটেই এমনকি বাইরেও কেমন জানি দরকচা হয়ে গেছে। কেউ আর বিশেষ পাত্তা দিতে চাইছে না।
আরেকটা বিষয়। এই যে সবাই মনে করছে পাকিস্তানের আয়রন ব্রাদার চিন একমাত্র শরিফের পাশে দাঁড়িয়েছে, আসলে লবডঙ্কা। চিন দাঁড়িয়েছে কারণ, শিংপিং সরকার বুঝে গেছে, পাকিস্তান এখন পুরোপুরি ঘেঁটে ঘ। তাই পাকিস্তানকে কন্ট্রোল করার সুবর্ণ সুযোগ তাদের হাতেই। আর এর জন্য ভারতের সঙ্গে আদায় কাঁচকলা সম্পর্ক তৈরি করার কোন মানে হয় না। চিন বাইরে পুঁজিপতি মনোভাব দেখায়। চিন ব্যবসা করে। সেই ব্যবসার বিরাট অঙ্ক চিনের কোষাগারে ঢোকাতে সাহায্য করে ভারত। সুতরাং, ভারতের মত বিশাল বাজারকে নিজের হাতে নষ্ট করে দেওয়া বোকামি। সুতরাং ঐ সীমান্তে যে সামান্য ‘ম্যায় ম্যায় তু তু’ গোছের কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, সেই পরিস্থিতি আর ঘোরালো হবে না বলেই মনে করছেন অনেকে। এতে ভারতের যেমন লাভ, তেমনই চিনের লাভ। সুতরাং পাকিস্তানের দিকে তাকালে বোঝা যাচ্ছে, দেশটা যতই এনিমি অফ মাই এনিমি ইজ মাই ফ্রেন্ড সমীকরণটি গুলে খেতে চায়, বিষয়টা কিন্তু একেবারেই অত সহজ নয়। তাই পাকিস্তানের পলিটিক্যাল এবং ইকোনমিক্যাল স্টেবিলিটি এখনই ফেরত পাবার কোন আশা নেই। আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের মত প্রতিষ্ঠান সাফ বুঝিয়ে দিয়েছে, সারা জীবন ‘ভিক্ষম দেহী’ করে লাভ নেই। বারবার কেউ টাকা দেবে না। নিজের দেশের পলিটিক্যাল স্টেবিলিটি ফিরিয়ে না আনতে পারলে, পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের অবস্থা দিন দিন খারাপই হবে। সুতরাং ইশক ডরের বক্তব্য আপাতত থেকে যাচ্ছে ফিউচার টেন্সে। কারণ কবে হবে সেটা কেউ বলতে পারবে না। আপনারা কি পারবেন? তাহলে মতামত লিখে ফেলুন কমেন্ট বক্সে। সঙ্গে শেয়ার করুন আমাদের প্রতিবেদন। আর সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ