Trending
ইনি সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী এবং ক্রাউন প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমন আল সাউদ। প্লেন থেকে তিনি নামছেন জি-২০ বৈঠক অ্যাটেন্ড করার জন্য। এখানে বিষয়টা তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয় বলে আপনার মনে হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের জন্য এটা চমকে দেবার মতো বিষয় ছিল। কারণ এমবিএস বা মহম্মদ বিন সলমন আল সাউদের জি-২০ অ্যাটেন্ড করার জন্য দিল্লি নামার আগে ইসলামাবাদে ঢুঁ মারার কথা ছিল। তারপর পাকিস্তানের কাছে এলো এক ভয়াবহ আফটার শক। যখন মোদী-এমবিএস-বাইডেন এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনকে কথা বলতে দেখা গেল। একটি সুতোয় যখন মোদী-এমবিএস-বাইডেনের ছবিটা প্রকাশ্যে এলো, আর জানা গেল বিশাল বড় এক ইকোনমিক করিডোর তৈরি হবে তারপরেই কার্যত ঘুম উড়ে গেল পাকিস্তান সরকারের। ব্যাকফুটে চলে গেল চিন। বিষয়টা ক্লিয়ার করছি গোটা প্রতিবেদনে।
এই প্রতিবেদন দুটো অ্যাঙ্গেল থেকে ধরা যেতে পারে। এক প্রায় নিঃস্ব পাকিস্তানের হাল ফেরানোর জন্য সৌদি আরব নাকি ২৫ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করবে বলে মনে করেছিল পাকিস্তানের সরকার। কিন্তু পাকিস্তানের চিন্তা বিন্দুমাত্র ভাবায় নি সৌদি আরবকে। একদিকে যখন পাকিস্তান ধর্মীয় ইস্যুকে হাতিয়ার করে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে ভারতের ইমেজ ডাউন করার চেষ্টা চালাচ্ছিল, তখন সৌদি আরবের মতো দেশ ভারতে একের পর এক বিনিয়োগের রাস্তা খুলে দেওয়ায় তখন ঝটকা ভালোরকম জোরে তো লাগবেই। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তাই পাকিস্তানের কাছে আর কোন অপশন নেই। কারণ সৌদি আরব সাফ বুঝিয়ে দিল পাকিস্তানের মতো দেশের দিকে বারবার হাত উপুড় করা বোকামো হবে। একদিকে আইএমএফ, অন্যদিকে বিশ্বব্যাঙ্ক, এদিকে পাকিস্তানের বিগ ব্রাদার সৌদি আরব যখন একের পর এক বিনিয়োগের জন্য ভারতের ওপর ভরসা রাখছে এবং ভারতকে পাখির চোখ করছে তখন ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর যে পাকিস্তানকে একেবারে কোনঠাসা করে দেবে, সেটা তো আর বলার অপেক্ষা থাকল না।
এদিকে পাকিস্তান যখন একের পর এক ঝটকা খাচ্ছে, তখন রাগে কার্যত ফুঁসছে চিন। কারণ চিনের যে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ছিল, কার্যত সেই পরিকল্পনাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে এই ইকোনমিক করিডোর তৈরির পরিকল্পনা। চিনের কেন রাগ সেটা বলার আগে এই ইকোনমিক করিডোর নিয়ে কিছু তথ্য আপনাদের দিয়ে রাখি। প্রথমেই বলি ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ- এই সুবিশাল ইকোনমিক করিডর তৈরির লক্ষ্য একটাই। আর্থিক কর্মকাণ্ড আরও বৃদ্ধি পাবে। ভারত এবং ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। আর তাদের সৌজন্যে বিশাল ফায়দা করবে মধ্যপ্রাচ্য। করিডর তৈরি করা হবে রেলপথে এবং জলপথে। প্রথমে ভারত থেকে জলপথে সংযোগ স্থাপন হবে মধ্যপ্রাচ্যের। তারপর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির মধ্যে তৈরি হবে রেল করিডর। তারপর ফের ইজরায়েল থেকে আবার জলপথে করিডর যাবে ইউরোপ পর্যন্ত। ইতিমধ্যে ইকোনমিক করিডর তৈরির ব্যপারে মউ স্বাক্ষরিত হয়ে গেল। কারা যুক্ত হল? ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। লক্ষ্য কি? ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ এবং ইউরোপের মধ্যে আর্থিক কর্মকাণ্ডের পথ আরও সুমসৃণ করে তোলা। জ্বালানি তেল, গ্যাস থেকে শুরু করে যাবতীয় পণ্য পরিবহণ আরও হ্যাসল ফ্রি ওয়েতে হবে। মনে করা হচ্ছে, এই করিডর তৈরি হয়ে গেলে সুয়েজ ক্যানেলে যে পণ্য পরিবহনের জন্য জাহাজের লাইন লেগে থাকত সেই ভিড় অনেকটাই এড়ানো যাবে। একইসঙ্গে বৃদ্ধি পাবে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি। এই বছর মে মাসে ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইসার অজিত ডোভালের সঙ্গে একটা বৈঠক হয় মার্কিনী নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভানের সঙ্গে। সেই সময়ই ইকোনমিক করিডর তৈরির ভাবনা চিন্তা প্রকাশ্যে আসে। তারপর সটান জি-২০ তে সৌদি আরবের পূর্ণ সহযোগিতায় এই বিরাট ইকোনমিক করিডর তৈরির ঘোষণা করা হয়। তারপরেই কার্যত চিন ফোঁসফোঁস করতে শুরু করেছে।
প্রথম, চিন যে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়েছিল সেটা এখনো বিশ বাঁও জলে। এই করিডরের ভবিষ্যৎ দেখিয়েছিল চিন। জিনপিং নেতৃত্বের আশ্বাস ছিল যে এশিয়া থেকে পণ্য ইউরোপে দ্রুত পাঠানোর জন্য এমন একটা করিডরের প্রয়োজন রয়েছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই প্রোজেক্টে বিনিয়োগ করেছিল ইতালি। জার্মানি, ফ্রান্স বা ইউরোপের দেশগুলো বেশ আশাবাদী ছিল। কিন্তু মুশকিলে ফেলে দিল চিনের একনায়কতন্ত্র মনোভাব এবং পাকিস্তানকে এই প্রোজেক্টে যুক্ত করা। যেটুকু জানা গিয়েছে, ভারতকে প্যাঁচে ফেলার জন্য চিন যে করিডরের ভাবনা করে সেটা গিয়েছে পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য চিন ইকোনমিক করিডরের একটা অংশ পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে করার পরিকল্পনা করে। তার জন্য পাকিস্তানে চিন বিনিয়োগ করে। কিন্তু পাকিস্তানে বিনিয়োগ করে প্রফিট খোঁজা আর আদিপুরুষ রিলিজ করে প্রডিউসারের লাভের অঙ্ক তুলে ধরা মোটামুটি একই। পুরোটাই গন কেস। আর এতোকিছু জেনেও পাকিস্তানে বিনিয়োগ করে ভালোরকম ফেঁসেছে চিন। আর ভারতের এই ইকোনমিক করিডর নিয়ে চিনের সবথেকে বেশি আপত্তি আমেরিকার নাক গলানো। চিনের বক্তব্য ওবামার আমলেও নাকি তৎকালীন মার্কিন বিদেশমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন নিউ সিল্ক রোড নির্মাণে আমেরিকার সাহায্য করার কথা জানায়। সেটা ছিল নিউ সিল্ক রোড তৈরির পরিকল্পনা। এতে নাকি আফগানিস্তান সহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা আরও সহজ হবে। এটা নাকি চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে ধাক্কা দেবে বলে আপত্তি জানায় চিন। এই একই কথা ভেসে আসে চিনের সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটি থেকে। এদিকে সৌদি এবং ইরানের মধ্যে বিবাদ ভুলিয়ে দেবার গুরু দায়িত্ব নেয় চিন। তার জন্য প্রশংসাও পায় তারা। কিন্তু চিনের দাবি এভাবে এগোলে স্বার্থসিদ্ধিতে বাধা তৈরি হতে পারে বলে মনে করে আমেরিকা। আর যে কারণে চিনের শক্তি খর্ব করার জোর চেষ্টা চালায় আমেরিকা। মনে করা হচ্ছে, ভারত জি-২০ বৈঠকে যেভাবে আমেরিকা এবং সৌদিকে সঙ্গে নিয়ে ইজরায়েলকে এক সুতোয় বেঁধে ইউরোপকে কানেক্ট করার এই রোডম্যাপটি প্রকাশ্যে আনে সেটা চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকেই থ্রেটের মুখে ফেলে দেয়। ইতালি সহ যে সকল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রোজেক্টে বিনিয়োগ করেছিল তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনরকম আশা দেখতে না পাওয়ায় এখন তারা ভারতের এই প্রোজেক্টকেই পাখির চোখ করছে। অতএব দিনের শেষে ফাঁপরে পড়েছে চিন এবং ঝটকা খেয়েছে পাকিস্তান।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ