গাছ আর পরিবেশের আত্মীয়তার শুরুটা কারুর জানা নেই। এতটাই অবিচ্ছেদ্য। গাছ যে অক্সিজেন দেয় বেঁচে থাকার জন্য, এ আর নতুন কি? গাছ বিক্রি করে পয়সাও পাওয়া যায় এতেও নেই কোন নতুনত্ব। চাষি গাছ লাগান তাঁর বেঁচে থাকার স্বার্থে। জীবিকার প্রয়োজনে। কিন্তু ভেষজ গাছ চাষে রয়েছে আয়ের ধারাবাহিকতা। ধারাবাহিকতাই জীবনের বেঁচে থাকার মূল রসদ।

বাগান তো অনেকেই করেন। কিন্তু ভেষজ বাগান করে অতিমারির মধ্যে সুস্থ থাকার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন তুফানগঞ্জের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। একইসঙ্গে বিকল্প আয়ের পথ তৈরি করে নজিরও গড়ছেন তাঁরা।

পরিবেশের সামঞ্জস্য বজায় রাখার পাশাপাশি সুস্থ থাকার জন্য ২০১৮ সাল থেকে ব্রাহ্মী, তুলসি, কুলেখাড়া, বাসকের মত প্রায় ১৪টি ভেষজ গাছের চাষ করছেন তুফানগঞ্জ মহকুমার নাটাবাড়ির ৩০ জন মহিলা। আর এই চাষ করেই আজ রীতিমত নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন তাঁরা। ভেষজ দ্রব্য থেকে ভেষজ গাছের চারা তাঁরা বিক্রি করছেন বিভিন্ন জায়গায়। যা মহিলাদের স্ব-নির্ভর হয়ে ওঠার পথে বিকল্প ভিত্তি হয়ে উঠেছে। আর এই গোটা কর্মকাণ্ড যার মগজাস্ত্র ব্যবহারে বেরিয়েছে তিনি নাটাবাড়ি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ বাসবকান্তি দিন্দা। আজ তাঁর পরামর্শেই সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি আর্থিক স্বাস্থ্যও অনেকটা মজবুত হয়েছে।

ঘরে ঘরে যে ধরণের সাধারণ রোগ হয় তার সঙ্গে জুঝে ওঠার জন্য ভেষজ গাছের কোন বিকল্প নেই। আর তাই ভেষজ সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই কর্মকাণ্ড। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ৩০ জন মহিলা। কিন্তু কেন এই ভাবনা চিন্তা?

আজ এই উদ্যোগের সাফল্য দেখে ৩০ জন মহিলার পাশাপাশি অনুপ্রাণিত হয়ে আশেপাশের আরও ৫০ জন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা এগিয়ে এসেছেন। সাফল্যের এই গল্প স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা ছড়িয়ে দিয়েছেন আরও অনেকের কাছে। উৎসাহ জোগাচ্ছেন অন্যান্যদেরও।

বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অ্যালোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথির ওপর মানুষের বিশ্বাস যতটা গভীর হয়েছে আয়ুর্বেদের ওপরেও সেই বিশ্বাস তৈরি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন আয়ুর্বেদিক ডাক্তাররা। ভারতের এই সুপ্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র আজ মডার্ন চিকিৎসাশাস্ত্রের মধ্যে পড়ে যেন কোথাও হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু ভেষজ চাষ করে আজ সেই ধারণাকে একেবারে মিথ্যা প্রমাণ করে দিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। তাই বলাই যায়, শুধু স্বাস্থ্য নয়, আর্থিক স্বাস্থ্য মজবুত করতেও ভেষজ গাছের বিকল্প নেই।

শম্পা সাহা, কোচবিহার