Story
বহুদিন আগেই সুকুমার রায় নোটবইতে প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘তেজপাতে তেজ কেন, ঝাল কেন লঙ্কায়?’ তেজপাতার তেজ কত সেই প্রশ্নের উত্তর না জানা থাকলেও তেজপাতা যে খাদ্যগুণ বাড়ানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। একইসঙ্গে এটাও বলা প্রয়োজন যে তেজপাতা শুধু খাদ্যগুণ বৃদ্ধিই করে না, মানুষের আর্থিক ভিতও অনেকটাই মজবুত করে।
এমনিতেই চাল, ডাল বা শস্যের মত প্রথাগত চাষ করে কৃষকবন্ধুরা তেমন একটা লাভের মুখ দেখতে পাননা। সেদিক থেকে তেজপাতা বিকল্প চাষ হিসেবে কৃষকদের আয়ের পথ অনেকটা মসৃণ করে দিয়েছে। তাই উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি নদিয়া জেলাতেও ক্রমশ বাড়ছে এই ঝুঁকিহীন তেজপাতা চাষ। চাকদহ, হরিণঘাটার মত এলাকায় এখন বহু চাষি তেজপাতার মত বিকল্প চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। উপার্জনও করছেন ভালোরকম। হরিণঘাটা ব্লকের ফতেপুরের সঞ্জয় দাস একজন তেজপাতা চাষি। যিনি ১০ বছর ধরে এই তেজপাতা চাষ করে ভালোরকম আয় করতে পারছেন।
শুধু একবার জমিতে তেজপাতার চারা লাগিয়ে নিতে পারলেই হল। প্রাথমিক খরচ একটু বেশি হলেও এরপর আর তেমন চিন্তা নেই। প্রতিবছর বিঘাপ্রতি জমি থেকে মিলবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। পরিচর্চা বাবদ খরচ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। দু’বছর পর থেকে তেজপাতা জমির সার সেচ ঔষুধের যেমন জোগান দেবে তেমনি সংসারের নানা বিধ খরচ খরচা ও সামলে নেবে। তেজপাতা চাষ যে নিঃসন্দেহে অর্থকরী বিকল্প চাষ, সে কথা স্বীকার করলেন হরিণঘাটা ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা প্রসূন ভৌমিক। কৃষকরা যদি আরো বেশি করে তেজপাতা চাষে উৎসাহী হন, তবে তাঁরাও ভালোরকম লাভ করতে পারবেন।
তেজপাতা প্রক্রিয়াকরণ শিল্প নজর কেড়েছে হরিণঘাটায়। এখানের দাসদিয়ায় বিভিন্ন উদ্যোক্তারা তেজপাতা শিল্পে মনযোগী হচ্ছেন। তেমনি একজন উদ্যোগী হলেন চয়ন সরকার। শিক্ষিত বেকারের তকমা ঝড়িয়ে দিয়েছে তেজপাতাই। দিয়েছে কর্মসংস্থান।
শুধু তাই নয়, এই তেজপাতা প্যাকেজিংয়ের কাজে জড়িয়ে রয়েছেন বহু গরীব পরিবার যাদের সিংহভাগ মহিলা। তাঁরাও পেয়েছেন আয়ের সুলুক সন্ধান। এদিকে তেজপাতার চাষ লাভজনক হবাড় খবর পেয়ে বহু চাষিই প্রথাগত চাষের বাইরে বেরিয়ে এই চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। তেমনি একজন উৎসাহী চাষি মধুসূদন দত্ত।
তেজপাতা খাবারের সুগন্ধ যেমন বাড়ায় তেমনি রয়েছে তেজপাতার নানাবিধ ভেষজ গুণ। হজমের সমস্যা দূর করে। ত্বক, চুলের যত্ন রাখে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি হার্টের সমস্যাতেও তেজপাতা দারুন উপকারি। তাই দ্বিধা সরিয়ে বলাই যায় তেজপাতা শুধু খাবার পাতে সুগন্ধ ছড়ায় না, পরিবারের আর্থিক বোঝার ভারও বহন করে অনেকটা।
সুব্রত সরকার
নদিয়া