Market
অনলাইনে পেমেন্ট করে জিনিস কেনার প্রবণতা ভারতীয়দের মধ্যে আগে তেমন একটা ছিল না। মানে একহাতে টাকা দিয়ে অন্য হাতে জিনিস নিতেই পছন্দ করতেন ভারতবাসী। তাই প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর নরেন্দ্র মোদী ডিজিটাল ইন্ডিয়ার হাঁক দিলেও সাধারণ মানুষের অভ্যাস তৈরি হতে সময় লাগছিল। করোনার আতঙ্ক সেখানেই কাজ করল অনুঘটকের। ভারতীয়দের অভ্যাস তৈরি হল ঘরে বসে জিনিস কেনার। ক্যাশলেশ পেমেন্ট। মাধ্যম ইন্টারনেট। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আর করোনার আতঙ্ককে মাথায় নিয়েই আট থেকে আশি প্রত্যেকেরই ভরসার জায়গা হয়ে উঠল ই-কমার্স। আর যে কারণে যত দিন যেতে লাগল ততই ই-কমার্স কোম্পানিগুলো ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করল। ভারতে ই-কমার্স সংস্থাগুলির নাম বললে, প্রথমেই মাথায় আসে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিলের মত একাধিক সংস্থার নাম। যারা প্রতিদিন নিজেদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে বিন্দু দিনু করে। দিনের শেষে সেটাই সিন্ধু হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখন কিভাবে ই-কমার্স সংস্থাগুলি নিজেদের ব্যবসা করোনাকালে তড়তড় করে বাড়িয়েছে, সেই ইতিহাস আমরা কমবেশি প্রত্যেকেই জানি।
বিদেশের মাটিতে মোটামুটিভাবে ৯০ এর দশক থেকেই ই-কমার্স ব্যবসার উত্থান। তার অন্যতম উদাহরণ অ্যামাজন। ১৯৯৪ সালে জেফ বেজোসের হাত ধরেই যাত্রা শুরু করেছিল। ২০২১ সালে অ্যামাজনের রেভিনিউ হয়েছে ৪৬৯.৮২২ বিলিয়ন ডলারের মতন। দেশের মাটিতে ফ্লিপকার্টের যাত্রা একটু দেরিতে শুরু হলেও বর্তমানে পিছিয়ে নেই এই সংস্থাও। শুধু ক্রেতার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েই নয়। বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করলে ব্যবসার এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ই-কমার্স। অনলাইনে পণ্য বিক্রি না করতে পারলে ব্যবসার দিক দিয়ে এটা একজন ব্যবসায়ীকে ক্ষতির মুখেও ফেলে দিতে পারে। তাই ব্যবসায়ীদের মনেও ই-কমার্স এখন ভরসার জায়গা। একইভাবে ক্রেতার দিক থেকেও। ক্রেতারাও এখন আগের মতন নেট মাধ্যমকে ব্যবহার করে পণ্য কিনতে খুব একটা সংশয়ে ভুগছেন না। আর যে কারণে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্টের মত দেশের প্রথম সারির ই-কমার্স সংস্থাগুলি ব্যবসার অঙ্ক ভালোভাবে বাড়িয়ে তুলছে। আর সেই দিকে মাথায় রেখেই বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী বছরগুলোয় দেশে ই-কমার্স খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নিতে চলেছে। তার ওপর ভিত্তি করেই মনে করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে ই-কমার্সের ব্যবসা পৌঁছতে পারে ১১১.৪০ বিলিয়ন ডলারে। ২০৩০ সালে সেই অঙ্কটা পৌঁছতে পারে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এই অঙ্কটা যে খুব একটা ভুল নয় তার একটা ছোট উদাহরণ দেওয়া যাক। একটি সমীক্ষা বলছে, বর্তমানে অ্যামাজনের গ্রাহক সংখ্যা ১০০ মিলিয়ন। ভারতের মুখ চেয়ে অ্যামাজন ১৬৮ মিলিয়ন পণ্য বিক্রি করে থাকে। সেদিক থেকে পিছিয়ে নেই দেশের অন্যান্য প্রথম সারির ই-কমার্স সংস্থাগুলি। আর দেখুন, বর্তমানে অ্যামাজন দেশের বৃহত্তম ই-কমার্স সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ই-কমার্স সংস্থাগুলি যে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে ভালোরকম ছাপ রাখতে চলেছে, সেই আন্দাজ বহু আগেই পাওয়া যায়। আর যে কারণে সরকারের তরফ থেকে দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার। বর্তমানে ভারতে স্মার্টফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭৫০ মিলিয়ন। ২০২৬ সালের মধ্যে সেই অঙ্কটা পৌঁছতে পারে ১ বিলিয়নে। সুতরাং একটা বিষয় পরিষ্কার, দেশের মানুষের হাতে যত উঠবে স্মার্টফোন, ততই বাড়বে ইন্টারনেট পরিষেবা। আর ততই উজ্জ্বল হবে ই-কমার্স সংস্থাগুলোর ভবিষ্যৎ।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ