Trending

শুকিয়ে যাওয়া ফুলের কদর আমরা কেউই করি না। বরং তাকে অবহেলায় উপেক্ষা করাই দস্তুর। কিন্তু এই শুকিয়ে যাওয়া ফুলের উপরেই নির্ভর করে বহু মানুষের পেট। চলে সংসার। শুকনো ফুলের চাহিদা আমাদের এখানে তেমন একটা না থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে শুকনো ফুলের কদর রয়েছে বেশ ভালোই। গত তিন দশক ধরে বিদেশে শুকনো ফুলের চাহিদা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। মূলত ঘর সাজানো থেকে যে কোন অনুষ্ঠানে এই শুকনো ফুলের চাহিদা থাকে ভালোরকম।
দুর্গাপুর ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আশীষ নগর। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের এই এলাকার প্রায় ১০০ টি পরিবার ফুল শুকোনোর এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। দুর্গাপুর ব্যারেজের জলাধারে দামোদর নদের ছোট ছোট চরে সর, কাশ, হোগলা এবং নলের ঘন জঙ্গল রয়েছে। নৌকায় করে ওই জঙ্গলে গিয়ে সর, কাশ, হোগলা ও নল গাছ সংগ্রহ করেন এলাকাবাসীরা। সাপ এবং পোকামাকড়ের ব্যাপক উৎপাত থাকা সত্ত্বেও পাড়ের বাসিন্দারা জীবন হাতে নিয়ে জঙ্গল থেকে এই সকল গাছের ফুল, কাঠি সারাবছর ধরে সংগ্রহ করেন। তারপর রোদে ছড়িয়ে শুকনো করে নেন। তারপর সেই শুকনো ফুলগুলি এলাকার ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন তাঁরা। এটাই তাঁদের একমাত্র রুজি রোজগার। কেউ পনেরো বছর তো কেউ তারও বেশি। শুকনো ফুলেই তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন উপার্জনের সঠিক দিশা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই সকল শুকনো ফুল এবং কাঠি তাঁদের থেকে কিনে নেন। তারপর কারখানায় সেগুলি কালারফুল করে তোলা হয়। রং লাগানো হয়ে গেলে সেই ফুলগুলিই কলকাতার কিছু রফতানি সংস্থা বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। নল গাছের ১০০০ টি ফুল বিক্রি করে উপার্জন হয় ৪০০ টাকা। ১০০০ কাশ ও সর ফুল পিছু পাওয়া যায় ৯০ টাকা। ১০০০ টি হোগলা ফুল পিছু মেলে ২০০ টাকা। এছাড়াও নল ও সরের এক একটি কাঠি পিছু ৪০ পয়সা পাওয়া যায়। এই জীবিকায় পরিবারের ছোট থেকে বড় সবাই যুক্ত থাকায় উঠে আসে প্রতিদিনের মজুরি। প্রায় ২০ বছর ধরে এই ব্যবসায় যুক্ত রয়েছেন প্রায় ১০০ টি পরিবার।
ফুল রফতানিতে ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে রয়েছে পাঁচ নম্বরে। আমেরিকা, ইউরোপ, জার্মান, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, জাপানের মত ২০টি দেশে ভারতের প্রায় ৫০০ প্রজাতির শুকনো ফুল রপ্তানি করা হয়। দামোদরের এই সকল শুকনো ফুল এবং কাঠি পাওয়া যায় নভেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। তারপর এক দু’মাস বন্ধ থেকে জুন – জুলাই থেকে আবার শুরু হয় এই কাজ। সত্যি বলতে, শুকনো ফুলের বিক্রি তেমন একটা লাভজনক না হলেও স্থায়ী একটা রোজগারের দিশা দেখিয়েছে এলাকাবাসীদের। সেটাই বা কম কিসের?
কাঞ্চন দাস
পশ্চিম বর্ধমান