Trending
১৮২০-১৮৩০ সালের মধ্যে বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের হাত ধরে বিদ্যুতের ব্যবহার দেখেছিল গোটা বিশ্ব। তারপর যত পেরিয়েছে সময় ততই বিদ্যুতের চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বিদ্যুৎ ছাড়া সভ্যতার একটি কদম হাঁটাও কঠিন। আর এই বিদ্যুতের ব্যবহারকে আশ্রয় করেই এগিয়ে চলেছে বিজ্ঞান, শিল্প, স্বাস্থ্য অর্থনীতি সবই। সত্যি বলতে আজ পরিস্থিতি যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, তারপর বিদ্যুতের ব্যবহার মানব সভ্যতাকে এগিয়ে দিচ্ছে একদিকে, আবার অন্যদিকেই বিপদে ফেলে দিচ্ছে পৃথিবীর স্বাস্থ্যকে। কারণ, বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য যে পরিমাণ দূষণ ছড়াচ্ছে তা পৃথিবীর আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমন একটি পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তাই রিনিউয়েবল বা অপ্রচলিত বিদ্যুতের ব্যবহারকে প্রায়োরিটি দিচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ। আর যে কারণেই সোলার পাওয়ার আজ প্রত্যেকটি দেশে এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু তাই বলে সমুদ্রকে ব্যবহার করেও যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সমুদ্র বলতে সমুদ্রের ঢেউকে ব্যবহার করেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার দিকে মনযোগী হচ্ছে বেশ কয়েকটি দেশ। হ্যাঁ বন্ধুরা। স্বাগতম বিজনেস প্রাইম নিউজে। আজ আমাদের প্রতিবেদন ওয়েভ ইলেক্ট্রিসিটি। যেখানে বলব কিভাবে এবং কেন বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য বিশ্বের কিছু দেশ সমুদ্রের ঢেউকে পাখির চোখ করতে চাইছে।
প্রতিবেদন শুরু করি আমাদের প্রত্যেকের জানা সেই পরিচিত তথ্য দিয়ে। পৃথিবীর তিন ভাগ জল এবং এক ভাগ স্থল। এই তিন ভাগ জলের অধিকাংশটাই হচ্ছে মহাসমুদ্র। আর সমুদ্রে ঢেউ পাওয়া যায় সবসময়। ঢেউ যখন আছড়ে পড়ে বা সমুদ্রের বুক চিড়ে এগিয়ে আসতে থাকে, সেই ঢেউয়ের শক্তিও থাকে অনেকটাই। আর এটাই ভাবিয়েছিল স্কটল্যান্ডের এক জিওইঞ্জিনিয়ারকে। নাম স্টিফেন সল্টার। তাঁর মাথায় এই চিন্তা বাসা বেঁধেছিল যে কিভাবে সমুদ্রের ঢেউকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। অবশেষে মাথা খাটিয়ে ১৯৭৪ সালে তিনি একটি যন্ত্র আবিষ্কার করলেন যার নাম দিলেন ‘ডাক’ বাংলায় ‘হাঁস’। এই নাম কেন, সেটা একটু পর বলছি। আপাতত বলি যে, এমন একটি অভিনব যন্ত্র আবিষ্কার করে ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করার পথ অনেকটাই মসৃণ হয়ে যায়। কিন্তু সেই সময় এই সম্ভাবনা অচিরেই চাপা পড়ে গেছিল। এবং বিষয়টা সম্পর্কে তেমনভাবে অনেকেই গুরুত্ব দেবার প্রয়োজন মনে করেন নি। কিন্তু এখন লাগামছাড়া দূষণ ধীরে ধীরে পৃথিবীর স্বাস্থ্যকে একেবারে নষ্ট করে দিচ্ছে। দূষণের কারণেই মডারনিজমের গায়ে পড়ছে কালো দাগ। বিজ্ঞানীরা ভাবতে শুরু করেছেন। সোলার এনার্জি ছাড়াও কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়? এদিকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি দেশ কার্বন শূন্য শক্তি তৈরি করার ব্যপারে বদ্ধপরিকর। আর যে কারণেই ঝিমিয়ে পড়া ওয়েভ ইলেক্ট্রিসিটির কনসেপ্ট ধীরে ধীরে আগ্রহ এবং আশা দুইই তৈরি করছে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের মধ্যে।
সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যপারে যে দেশটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, সেটি আর কেউ নয় খোদ আমেরিকা। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, স্কটল্যান্ড, ডেনমার্ক, চিন এমনকি ইংল্যান্ডের মতন দেশগুলিও এখন সাগরের ঢেউকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরির ব্যপারে যথেষ্ট সচেতন। এবার আসা যাক সেই যন্ত্রের কথায়। কী এই এডিনবরা হাঁস? এটি হল এমন এক ধরণের যন্ত্র যা সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়েই তৈরি করতে পারবে বিদ্যুৎ। বাংলায় বলা যেতে পারে ‘এডিনবরা হাঁস’। নামটা অদ্ভুত হলেও কাজটা খুব সহজ। এই যন্ত্র মানে হাঁসের পিছনের অংশে ঢেউয়ের অবিরাম ধাক্কাইয় তৈরি হবে বিদ্যুৎ। ঢেউ থেকে কিভাবে বিদ্যুৎ তৈরি হতে পারে, তার জন্য ঢেউয়ের গতিপ্রকৃতি বুঝতে হবে। ঢেউয়ের উপরিভাগে সবচেয়ে বেশি শক্তির সঞ্চালনা ঘটে থাকে। ঢেউয়ে তৈরি জলকণা কখনই মহাসাগরকে অতিক্রম করে যায় না। বাতাসের ধাক্কা খেতে খেতে চক্রের মত একই জায়গায় ঘুরপাক খেতে থাকে। এর ফলে তৈরি হয় একটি শক্তি। এখানেই বলি, সমুদ্রের গভীরতা বাড়লে ঢেউয়ের শক্তি কমতে শুরু করে।
এটি হচ্ছে ওয়েভলেন্থ ম্যাগনেট। মেরুদন্ডের মতন দেখতে এই যন্ত্রটি সমুদ্রের উপরে ভেসে থাকে। যা বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে তৈরি। এই একটি থেকেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে প্রায় ১০০ মেগাওয়াট। পিস্টন লাগানো যন্ত্রটি ঢেউয়ের সঙ্গে ওঠানামা করতে থাকে। আর সেটাই জেনারেটরে বিদ্যুৎ সঞ্চয় করতে সাহায্য করে। এই পিস্টনটি দেখতেই হাঁসের মতন। প্লাস্টিক বা কার্বন ফাইবার ব্যবহার করা হয় এগুলো তৈরি করতে। সবথেকে বড় কথা, এগুলো ব্যবহার করা যায় বহুদিন। বিদ্যুৎ তৈরির খরচও অপেক্ষাকৃত অনেকটাই কম। বলা হচ্ছে, সমুদ্রের ঢেউ যত আসবে ততই নাকি এই যন্ত্রের চালিকা শক্তি আর বৃদ্ধি পাবে। আর যন্ত্রটি সমুদ্রের তলদেশে নোঙ্গর করে আটকে রাখা থাকবে। ফলে জোয়ার, ভাটা, উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের ঝাপ্টা খেলেও এটি অন্যত্র সরে যাবে না। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন করাটাও মসৃণ হয়ে যাবে অনেকটাই। উল্লেখ্য, এই যন্ত্রটি নিয়ে সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার অন্যতম কারণ, জলের ঘনত্ব সাধারণত বাতাসের থেকে কয়েকশো গুণ ভারি। আর সুমদ্রে তো ঢেউয়ের অভাব নেই। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাও এর অনেকটাই বেশি হবে। ঢেউ থেকে তৈরি সবচেয়ে বড় প্ল্যান্টটি এখন রয়েছে স্কটল্যান্ডে। তারা উল্লেখযোগ্য ছাপ রাখছে ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের দিকে। জানা গিয়েছে, সমুদ্র থেকে ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি করার জন্য প্রায় সাত কোটি ইউরো বিনিয়োগ করা হচ্ছে। পরিকল্পনামাফিক এগোতে পারলে, ২০৫০ সালের মধ্যে ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ তৈরির পরিমাণ বাড়বে ১০ শতাংশের বেশি। তবে সত্যি বলতে গেলে, উইন্ডমিল বা সোলার প্যানেলের চেয়ে ঢেউ থেকে বিদ্যুৎ তৈরির এই বিষয়টা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু এই মেকানিজম যদি দেশে দেশে খুব গুরুত্ব দিয়ে চালু করা যায়, তাহলে দেশগুলিও আর্থিকভাবে অনেকটাই সাশ্রয়ী হবে। আজকের মতন এখানেই শেষ করছি আমাদের প্রতিবেদন।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ