Story
মাছে-ভাতে বাঙালি যুবকদের ম্যাড়ম্যাড়ে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট জীবনে ছক ভাঙার গল্প শেখালেন সেনডাঙার দীপঙ্কর। শুধু ছক ভাঙা গল্পই শেখালেন না, দিলেন কিভাবে বাঙালি যুবকেরা ম্যাড়ম্যাড়ে জীবনকে কালারফুল করে তুলবেন, সেই গল্পও। পলিটেকনিক ডিগ্রিকে কুলুঙ্গিতে তুলে নিশ্চিত চাকরিকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে নিজের বাড়িতেই মাত্র ১০০ ফুট জায়গার মধ্যেই অসাধ্য সাধন করে দেখালেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সেনডাঙার দীপঙ্কর।
প্রথম থেকেই মাছ, অ্যাকোয়ারিয়াম- এসবের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও কিভাবে আয়ের দিশা পেতে পারেন, তাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। কিন্তু জেদে পড়েনি একটুও ঘাটতি। অবশেষে মাছ চাষ করে উপার্জনের রাস্তা খুঁজতে তিনি পৌঁছে গেলেন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে। মাছ চাষের ইচ্ছে শুনে এগিয়ে এলেন ঐ কেন্দ্রের মৎস্য বিজ্ঞানী অনিন্দ্য নায়েক। দীপঙ্করকে তিনি দিতে থাকলেন মাছ চাষের প্রশিক্ষণ।
প্রথমে ছোট করে মাছ চাষ শুরু করলেও ধাপে ধাপে দীপঙ্কর নিজের জেদে এগিয়ে যেতে থাকেন মাছের চাষ বাড়ানোর জন্য। কিন্তু কি ধরণের রঙিন মাছ চাষ করলে রোজগারের অঙ্ক বাড়াতে পারবেন সেই নিয়ে ছিল তাঁর সন্দেহ। এরপর তিনি শুরু করলেন চিকলেট মাছের চাষ। রঙিন চিকলেট মাছ চাষ করার কারণ হল, এই মাছ মূলত এক্সপোর্ট হয়। এবং সাধারণ চাষিদের কাছে এই মাছ চাষ একটু ব্যয়বহুলও। তাই হাতে দু’লক্ষ টাকার মত পুঁজি আর ঘরের মধ্যে ১০০/ ৫০ ফুট জায়গাতেই শুরু করে দিলেন মাছ চাষ। বর্তমানে তিনি ৪০টি জলের ট্যাঙ্ক তৈরি করেছেন। সেখানে চাষ করছেন ২৬ প্রজাতির চিকলেট রঙিন মাছ। সঙ্গে খুলে গেল উপার্জনের পথটাও।
শুধু চাষ করলেই তো হল না। কিভাবে করতে হবে, কেন করতে হবে তারও একটা সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সিমেন্টের ট্যাঙ্কে কেন করা যাবে না মাছ চাষ, কেন তৈরি করতে হবে ট্যাঙ্ক, সেই কথাও তিনি জানালেন।
আজ দীপঙ্করবাবু শুধু একজন প্রতিষ্ঠিত মাছ চাষিই নন। বিভিন্ন জায়গায় পরামর্শ দিতে, মাছের ব্রিডিং শেখাতে ডাক পড়ে তাঁর। জানালেন অনিন্দ্যবাবু নিজেই।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে দীপঙ্কর মজুমদার আজ উত্তর ২৪ পরগনার এক জলজ্যান্ত উদাহরণ। একটু পরিশ্রম, পড়াশুনো এবং মাছ চাষের প্রতি ধৈর্য থাকলে কিন্তু যেকেউ আত্মনির্ভর হতে পারবেন। তাই, রঙিন মাছ চাষ করার জন্য দীপঙ্করবাবুর দেখান পথে হাঁটলেই খুলে যাবে উপার্জনের নতুন দিক। প্রয়োজনে কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র তো আছেই।
দেবস্মিতা মণ্ডল, উত্তর ২৪ পরগনা