Trending

আজ নববর্ষ। আর নববর্ষ মানেই বাঙালির মধ্যে সেই চেনা উন্মাদনা। দোকানে দোকানে ভীষণ ব্যস্ততা। হালখাতা আর মিষ্টির সমারহে এক হৈ হৈ ব্যাপার। কিন্তু বলুন তো? আজকের দিনে দাঁড়িয়ে উৎসবের এই রমরমা ব্যাপারটা আদৌ সত্যি তো? মানুষ অভ্যস্থ হচ্ছে ডিজিটাল সিস্টেমে। কর্পোরেট ইভেন্ট থেকে ফ্যামিলি গেট – টুগেদার সবটাই এখন ডিজিটাল সিস্টেমের হাতের মুঠোয়। আর ঠিক যে কারণে ক্রমেই মলিন হয়ে আসছে হুজুগে বাঙালির উৎসবের হই-হট্টগোল।
প্রথা মেনে ফি বছর দোকানগুলোতে হালখাতার নিয়ম পালন বাঙালির ১৩ পার্বণের অন্যতম। কিন্তু এবছর কোথাও যেন ভাটা পড়েছে সেই উৎসবে। পার্বণের রমরমা ফিকে করতে এবং ডিজিটাল লাইফস্টাইলকে আগলাতে খানিকটা বুস্ট আপ করেছে অতিমারি। ডিজিটাল লাইফস্টাইলের আড়ালে ক্রমেই ফিকে হচ্ছে বাঙালির বাঙালিয়ানা। দোকান জুড়ে সাজানো হালখাতার নতুন খাতা। কিন্তু বিক্রি কোথায়? মুঠোফোন আর ইন্টারনেটের দুনিয়ায় এই সবটাই এখন ব্যাকডেটেড। কম্পিউটারে যুগে যেভাবে হালখাতার ডিম্যান্ড কমেছে, তাতে ব্যবসায়ীদের অবস্থা বেশ খারাপ। ভবিষ্যতে হয়তো বিকল্প আয়ের কথা ভাবতে হতে পারে বলে জানালেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী মহম্মদ আনুয়াল হক।
এই কয়েকবছর আগেও ক্রেতাদের কেনাকাটার হিসেব লেখা থাকতো ব্যবসায়ীদের হালখাতার পাতায়। কিন্তু বর্তমানে জাঁকিয়ে বসেছে অনলাইন বিজনেস। মানুষের ঝোঁক বেড়েছে অনলাইন ট্রানজ্যাকশনে। ই-কমার্সের দৌরাত্ম্যে লোকাল দোকানের ব্যবসা ঠেকেছে তলানিতে। দুরত্ব তৈরি হয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যবসায়িক সম্পর্কে।
তাছাড়াও অতিমাতির কারণে চাপ পড়েছে সাধারণের পকেটে। ঘাটতি পড়েছে নগদে। কাজেই যেকোনো রকম খরচ থেকে পিছিয়ে আসতে চাইছে মানুষ। তাই আগের মত বিভিন্ন মিষ্টির ভান্ডার সাজিয়ে হালখাতার অ্যারেঞ্জমেন্ট করতেও বেগ পেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
তবে এত বিষণ্ণতার মধ্যেও একেবারে ভিন্ন ছবি ধরা পড়ল উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে এক মিষ্টির দোকানে। অন্যান্যবারের তুলনায় মিষ্টির অর্ডার এবার বেশি। অর্ডার এসেছে কালিয়াগঞ্জ ছাড়াও রায়গঞ্জ, বালুরঘাটের বিভিন্ন জায়গা থেকে। হবে নাই বা কেন বলুন? বাঙালির ১২ মাসের ১৩ পার্বণ কি মিষ্টি ছাড়া সপূর্ণ হয়?
অতিমারি কাটিয়ে যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলার ব্যবসা, তখন নতুন বছরে তার শ্রীবৃদ্ধি হোক। ব্যবসার জোয়ার আসুক এই বাংলায়। নতুন বছরে শুধু এটুকুই প্রত্যাশা বাংলার মানুষের।
অরূপ পোদ্দার, বিক্রম লাহা, অনুপ জয়সয়াল
শিলিগুড়ি, কলকাতা, উত্তর দিনাজপুর