Daily
সাল ২০৪১। কেমন হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের ছবিটা? শিক্ষা থেকে সংস্কৃতি। রাজনীতি থেকে অর্থনীতি। ডিজিটালাইজেশন কি বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করতে পারবে? ২০৪১ সালে কি কোন ‘ডিজিটাল’ ম্যাজিকে উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে পরিণত হবে বাংলাদেশ?
ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশবাসির কাছে একটা প্রত্যয়, একটা স্বপ্ন। সাল ২০০৮। নির্বাচনী ইস্তেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে ব্রহ্মাস্ত্র করে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসলেন শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রাও শুরু হয় এই ২০০৮ থেকেই। এরপর একে একে সরকারি ক্ষেত্রে, প্রাইভেট সেক্টরে, স্কুলে, কলেজে- দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসছে ডিজিটাল ঢেউ। আর আজ ১৪ বছর পর এই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মানচিত্রে এক নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে ডিজিটালাইজেশনের হাত ধরে। প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকা দেশ বাংলাদেশের মেরুদণ্ড এখন এই ডিজিটাল মাধ্যম। আর ইতিমধ্যেই ২০৪১-এ পৌঁছনোর জয়জাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ করতে একের পর এক মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর যে কারণে গত ১৪ বছরে এই খাতে আয়ের পরিমাণ ছাড়িয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। এবং আশা করা যাচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে এই আয়ের অঙ্কটা পৌঁছবে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারে। পদ্মা সেতুতে টোল আদায় থেকে শুরু করে ই-টিকেটিং সিস্টেম, ই-টেন্ডার সিস্টেম, ই-পাসপোর্ট সিস্টেম সবটাই এখন সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড। সরকারি থেকে সামাজিক প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহার সাধারণ মানুষের পরিশ্রম যেমন কমিয়েছে তেমনই দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হারও বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। শুধু তাই নয়। অতিমারির সময় যখন দেশের প্রতিটি ক্ষেত্র নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা, তখন শুধুমাত্র এই ডিজিটাল সিস্টেমের উপস্থিতিতেই স্কুল কলেজ থেকে অফিস এবং বিভিন্ন সরকারিক্ষেত্র চালু থেকেছে। কাজেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই ডিজিটাল সিস্টেম যে একটা নতুন অধ্যায়, তা বলাই যায়।
২০২২ থেকে ২০৪১। এই জার্নিতে নাকি আরও বড় কোন নাটকীয় পরিবর্তন অপেক্ষা করছে বাংলাদেশবাসীর জন্যে। আর শুধু বাংলাদেশেই নয়। ফিউচারিস্টরা বলছেন, মানব ইতিহাসে একটা সাংঘাতিক পরিবর্তন আনতে চলেছে আগামী ২০ বছর। বিশ্বাস হচ্ছে না তো? নিজেরাই ভাবুন না, যেখান ব্যবহারকারীদের মধ্যে রেডিও-র জনপ্রিয়তা পৌঁছতে সময় লাগে ৩৫ বছর, সেখানে ফেসবুক সময় নিয়েছে মাত্র সাড়ে তিন বছর। আর অ্যাংরি বার্ডের মতো গেম সময় নিয়েছে মাত্র ৩৫ দিন। আগে জিনম সিক্যুয়েন্স করতে সময় লাগত ১০ বছর আর খরচ হত ২.৭ বিলিয়ন ডলার। এখন সময় লাগে মাত্র কয়েক ঘণ্টা, খরচ? হাজার ডলার মত। হয়তো আগামীতে জিনম সিক্যুয়েন্সের সময় কয়েক সেকেন্ড বা মিলিসেকেন্ডে নেমে আসবে। কাজেই ডিজিটাল সিস্টেম যে মানুষের ব্যয় এবং পরিশ্রম দুইই কমেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
দুই দশক আগেও বাংলাদেশবাসির কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল একটা রূপকথার মতো। আর আজ সেই বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ১০০ গুণ। প্রযুক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে রীতিমত নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু কি বলুন তো, সেদেশে বহু মানুষ এখনও জানেনই না যে কি এই ডিজিটাল পরিষেবা? তাই সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই অভ্যাসটা তৈরি করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বৈকি। তারওপর আবার প্রাইভেট সেক্টরগুলো সাইবার সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসির কথা মাথায় রেখে ডিজিটাল মাধ্যমকে একটু দূরে সরিয়ে রাখছে। তবে এত কিছু সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এই বিষয়ে খুব নিশ্চিত যে সঠিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আর বাংলাদেশবাসীর মেধাকে অস্ত্র করে খুব শীঘ্রই উন্নয়নশীল দেশের একজন হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।
বিজনেস প্রাইম নিউজ
জীবন হোক অর্থবহ