Trending

১ জুলাই ২০২২। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহারকে পাকাপাকিভাবে নিষিদ্ধ করে ভারত সরকার। কিন্তু যে প্লাস্টিক আমাদের জীবনের সঙ্গে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রয়েছে, তাকে কি এত সহজে বর্জন করা যায়? যতই স্লোগান উঠুক যে, প্লাস্টিক বর্জন করুন, আসল সত্যিটা আমাদের সকলের কাছেই স্পষ্ট। প্লাস্টিকের বিকল্প নেই। কোনোদিন ছিলও না। এবং আগামীদিনেও এর কোন বিকল্প হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। পরিবেশের দূষণ ঘটায় প্লাস্টিক। মাটি কিংবা জলের সঙ্গে মিশে গিয়ে ক্ষতি করে বাস্তুতন্ত্রের- পড়ার বইতে এসব তথ্য আপনারা ভুঁড়ি ভুঁড়ি পাবেন। কিন্তু প্লাস্টিক নিয়ে যে অজানা তথ্য পড়ার বইতে নেই, সেটাই আজ বিজনেস প্রাইম নিউজ আলোচনা করবে আপনাদের সঙ্গে।
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে বর্তমানে আলোচনা- সমালচনার যে ঝড় উঠেছে গোটা বিশ্বজুড়ে তা সামাল দেওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু আপনি কি জানেন- পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছিল প্লাস্টিক? হ্যাঁ! একেবারে ঠিক শুনছেন। বিশ্বকে রক্ষা করাই ছিল প্লাস্টিক আবিষ্কারের এক এবং একমাত্র উদ্দেশ্য। প্লাস্টিক আবিষ্কারের গল্পটাও বেশ পুরনো। ১৯০৭ সাল। একদিকে কাগজের ব্যাগের ব্যবহার বাড়ছে আর অন্যদিকে শয়ে শয়ে কাটা পড়ছে বড় বড় গাছ। ৪৩ বছর বয়সী বিজ্ঞানী লিও হেনরিক বায়েকল্যান্ড বেজায় চিন্তিত হয়ে পড়লেন । বাঁচতে হলে পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। শুরু হল দিন রাতের রিসার্চ। অবশেষে ১১ জুলাই এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সবে নতুন এক পদার্থ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানী। ওজনে হালকা, বেশ ভারী কিছু বহন করতে পারে এবং রিইউজেবল। বিজ্ঞানী দারুন খুশি। তার এই নতুন আবিষ্কারের নাম দেন ‘বেকলাইট’। কমল গাছ কাটার মতো গর্হিত অপরাধ। ইনফ্যাক্ট একটি জার্নালে বিজ্ঞানী তার এই সদ্য উদ্ভাবিত আবিষ্কার নিয়ে গর্ব করেন লিও। তিনি বলেন, “ যদি আমি ভুল না করে থাকি, আমার এই উদ্ভাবন ভবিষ্যতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হবে”।
নিজের আবিষ্কার সম্বন্ধে খুব একটা ভুল বলেননি লিও। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে তার এই আবিষ্কার। টেলিফোন, বন্দুক, কফি মেকার- সবকিছুতেই একটু একটু করে প্রবেশ করে প্লাস্টিক। ইনফ্যাক্ট লিওর এই যুগান্তকারী আবিষ্কার আরও মানুষকে নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এই প্রথমবারের মতো, প্রকৃতিতে নেই এমন কিছু আবিষ্কার করার কথা মানুষ চিন্তা করে। এটা কম বড় সাফল্য? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে মানুষ প্লাস্টিকের প্রতি অনেক বেশি ঝুঁকে পরে। আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় টাপারওয়্যারের মতো নিত্যনতুন সব পণ্য। একটা সময় ছিল, যখন গোটা জাতির কাছে প্লাস্টিক নতুনত্ব এবং নতুন সম্ভাবনার প্রতীক ছিল। এখন আপনার মধ্যে প্রশ্ন জাগতেই পারে, তাহলে প্লাস্টিক ভালো না খারাপ?
আপনার মনে হতেই পারে যে যত দিন যাচ্ছে ততই প্লাস্টিকের পরিমাণ বাড়ছে এবং আগামীতে তা ঘোর দুর্দিন ডেকে আনতে পারে। হ্যাঁ। এই কথাগুলো একেবারে মিথ্যে নয়। প্লাস্টিক না মাটিতে মেশে না জলে মেশে। সুতরাং এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তো বটেই। কিন্তু অন্যদিকটাও তো ঠিক, এই যে এত বড় বড় গাড়ি চলছে রাস্তাঘাটে, প্লাস্টিক ব্যবহার হয় বলেই এরা এত হালকা হতে পারে, এবং জ্বালানি খরচওঁ কমে আসে। তবে, এই কথাগুলো তখনই মেনে নেওয়া সম্ভব যখন বাড়তি প্লাস্টিক রিসাইকেল করা হয়। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশ এই বিষয়ে কাজ করছে। এবং তাদের অনেকে সফলও হয়েছে। এই যেমন ধরুন তাইওয়ান। সেখানে তো প্লাস্টিক রিসাইকেল করা বাধ্যতামূলক। বিজ্ঞানীও সেই উদ্দেশ্যেই প্লাস্টিক আবিষ্কার করেছিলেন। এমনকি তিনি নিজেও প্লাস্টিকের ব্যাগ পকেটে ভাঁজ করে রাখতেন। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে মানুষ এগুলো বারবার ব্যবহার করবে। ফলে অনেক কম গাছ কাটা পড়বে এবং পরিবেশের ভালো হবে।
বিজ্ঞানী তো একজন সামান্য মানুষ ছিলেন। তিনি কীভাবে ভবিষ্যৎ জানবেন? সেদিনের সেই আবিষ্কার যা পরিবেশ রক্ষার উদ্দেশ্য ছিল, সেটাই প্লাস্টিক হিসেবে বর্তমানে আমাদের সবার জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়ের সাথে প্লাস্টিক মাত্র একবার ব্যবহারের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার যত বাড়ল, দূষণের মাত্রাও একইসঙ্গে বাড়তে শুরু করলো। এখন অবশ্য দূষণ সামাল দিতে অনেকেই কাগজ বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করছেন। কিন্তু সেটাও তো কোন সলিউশন নয়। কাগজের ব্যাগ তৈরিতে গাছ কাটা পড়ে। প্রচুর পরিমাণে এনার্জির প্রয়োজন পড়ে। অনেক জল লাগে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, এইধরনের ব্যাগ তৈরি করা অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ। আর যেই অঞ্চলে এই ধরণের ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং হচ্ছে, সেখানকার পরিবেশেও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
তাহলে আমরা কী করব? Recycling is the only answer. বারবার ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে মেরামত করে ব্যবহার করুন। যখন সেটাও করা যাবে না, তখন তাকে রিসাইকেল করুন। আর এমনটা হলে লিও বায়াকল্যান্ড, তিনি নিজেও হয়তো বেজায় খুশি হবেন!
বিজনেস প্রাইম নিউজ,
জীবন হোক অর্থবহ।