Bangladesh

অসম সাহসে আমরা অসীম সম্ভাবনার পথে ছুটিয়া চলেছি/ সময় কোথায় পিছে চাব কোন মতে!”- বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘হবে জয়’ কবিতার একটি লাইন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখে শোনা গেল এই উদ্ধৃতি। তারই সঙ্গে একেবারে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হল। পদ্মা সেতুর পর এবার মেট্রো। আধুনিক বাংলাদেশের মুকুটে জুড়ল নতুন পালক। হোক সে গঙ্গা পাড়ের মেট্রোর কাছে একেবারে শিশু, তবু উন্নয়নের জোয়ার যে এলো সেই কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই। বাংলাদেশের মেট্রো তাই ওপার বাংলার মানুষদের কাছে স্বপ্ন পূরণের মতনই। কিন্তু জানেন কি যে বাংলাদেশের মেট্রো আধুনিকতায় কোন অংশে কলকাতার মেট্রোর থেকে কম নয়। কিছু ক্ষেত্রে তো কলকাতার আধুনিক মেট্রো পরিষেবাকেও দিচ্ছে টেক্কা।
কলকাতা মেট্রো চালু হয় ১৯৮৪ সালে। ভারতের মধ্যে প্রথম তিলোত্তমার বুক চিড়েই ছুটতে শুরু করে মেট্রো। এরপর পেরিয়েছে ৩৮ বছর। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে চালু হল মেট্রো পরিষেবা। দুই বাংলার মেট্রো পরিষেবা নিয়ে এখনই তুলনা করা বা কাটাছেঁড়া করাটা বৃথা। কিন্তু বাংলাদেশ বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে তারা আজ উন্নয়নের ধ্বজা যেভাবে তুলে ধরতে পারল, সেটা টেক্কা দিতে পারে গঙ্গা পারের মেট্রোকে। কিভাবে সেটা বলার আগে বাংলাদেশ মেট্রো তৈরি নিয়ে দু’চার কথা বলা যাক। ঢাকার যানজট কেমন থাকে, এই বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে সকলেরই। নিত্য জ্যাম, ঘন্টার পর ঘন্টা ট্র্যাফিকে আটকে থাকা গাড়ি- এই সবই যেন বাংলাদেশের নিত্যযাত্রীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তুলেছিল। আর যে কারণে ২০১৬ সালে এমআরটি-৬ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর থেকেই ঢাকাবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন মেট্রো পরিষেবা পাবার জন্য। প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকার প্রোজেক্ট এই মেট্রো। এর মধ্যে বড় অংশ খরচ করছে জাপানের সংস্থা জাইকা। বাকি টাকা খরচ করছে বাংলাদেশ সরকার। এবার আসা যাক বাংলাদেশের মেট্রো পরিষেবা নিয়ে দু’চার কথায়।
প্রথমেই বলি মেট্রো পরিষেবা দিতে গিয়ে ছক ভাঙ্গা পথে হাঁটছে হাসিনা সরকার। ঢাকা মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর প্রথম যার হাত ধরে ট্রেন চলতে শুরু করে, তিনি একজন মহিলা। নাম- মরিয়ম আফিজা। এখানেই বলে রাখি, ঢাকা মেট্রো পরিষেবা পাওয়া যাবে ৬ জন মহিলা চালকের হাত ধরে। কলকাতা মেট্রোয় কিন্তু মহিলা চালক নেই। ঢাকা মেট্রোয় রয়েছে ১৭ টা স্টেশন। বর্তমানে ঢাকা মেট্রো চলবে ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি পথ। জানা গিয়েছে, মেট্রো যাতায়াত করবে সাড়ে ৩ মিনিটের ব্যবধানে। তবে মেট্রো স্টেশনে রয়েছে আধুনিকতার ছড়াছড়ি। স্টেশনগুলোর একতলায় থাকছে স্টেশন প্লাজা, দো-তলায় থাকছে টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস এবং কনকোর্স হল। আর তৃতীয় তলায় থাকছে প্ল্যাটফর্ম। স্বয়ংক্রিয় টিকিট কাটার মেশিন থাকছে, যেখানে যাত্রীদের লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর কোন হ্যাপা পোয়াতে হবে না। এছাড়াও থাকছে স্মার্ট কার্ডের ব্যবস্থা। যাত্রীরা প্রয়োজনমত এক সপ্তাহের বা এক মাসের টিকিট কাটতে পারবেন। থাকছে ফ্যামিলি কার্ডের সুবিধা। বিশেষভাবে সক্ষম যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে আলাদা করে তৈরি করা হয়েছে টিকিট কাটা, প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। থাকছে লিফট। দৃষ্টিহীন এবং মূক, বধিরদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ সুবিধা। খেয়াল রাখা হয়েছে মহিলা যাত্রীদের কথাও। জানা গিয়েছে, ১৭টি স্টেশনের মধ্যে চারটি স্টেশনে গাড়ি নিয়ে সরাসরি প্রবেশ করা যাবে। এমনকি বাস, ট্যাক্সি বা অটো এসেও দাঁড়াতে পারবে স্টেশন চত্বরে। কমলাপুর, আগারগাঁও, ফার্মগেট এবং দিয়াবাড়ি স্টেশনে স্টেশন প্লাজার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনা যাতে না-ঘটে তার জন্য থাকছে প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এই দরজা ট্রেন থামলে খুলবে, তারপর আবার নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও যাত্রীদের একগুচ্ছের সুবিধে দিতে চলেছে ঢাকা মেট্রো। জানা গিয়েছে, ট্রেন পিছু কোচের সংখ্যা থাকবে ৬টি। যাত্রী সফর করতে পারবেন গড়ে ২৩০৮ জন। প্রায় ১০০ কিমি গতিতে ছুটবে ঢাকা মেট্রো। আর যে কারণে ২১ কিমি পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট।
তবে একটা বিষয়। পদ্মা পারের মেট্রো ভাড়া কিন্তু অনেকটাই বেশি যদি কলকাতার মেট্রোর সঙ্গে তুলনা করা হয়। জানা গিয়েছে, ঢাকা মেট্রোর ন্যূনতম ভাড়া রাখা হবে ২৫ টাকা। আর পুরোটা যেতে খরচ করতে হবে ১০০ টাকা মতন। অর্থাৎ, যেখানে কলকাতা মেট্রোর সর্বোচ্চ ভাড়া ২৫টাকা সেখানে ঢাকা মেট্রোর সর্বোচ্চ ভাড়া ৪ গুণ বেশি। বর্তমানে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো চলবে সকাল ৮টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত। পরের বছর মার্চ, এপ্রিল থেকে প্রত্যেকটা স্টেশনে মেট্রো থামবে। আর ১৭টি স্টেশনে মেট্রো পরিষেবা ২০২৫ সালের আগে পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ বাকি অংশের কাজ এখনো চলছে। বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশ যেভাবে আধুনিকতার মোড়কে মেট্রো পরিষেবা দেশবাসীর জন্য উপহার দিয়েছে, তা টেক্কা দেবে অন্যান্য দেশের মেট্রো পরিষেবাকেও। দেরিতে হলেও ঢাকাবাসীর জন্য এটা নিঃসন্দেহে খুব বড় একটি খবর। আর হাসিনা সরকারের জন্য দারুণ সাফল্য। সুতরাং পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা যে মেট্রো সফর করে সময় বাঁচিয়ে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন, সে আর নতুন কথা কি? একইসঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিশা হিসেবেও পদ্মা সেতুর পাশে নিজের অবস্থান পাকা করে নেবে ঢাকা মেট্রো। এখানেই শেষ করছি আজকের প্রতিবেদন।
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ