Daily
দেশে যখন আছড়ে পড়েছে করোনার ঢেউ, উঠছে গেল গেল রব, হাসপাতালগুলিতে বাড়ছে বেডের জন্য হাহাকার। বাড়ছে প্রতিদিনই অক্সিজেনের চাহিদা, দেশের একের পর এক রাজ্যের শ্মশানগুলিতে জ্বলছে মানুষের গণচিতা ঠিক তখনই কিভাবে এই কোভিড যুদ্ধ জয় করতে হবে তারই উপায় বাতলালেন দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক দেবি শেঠি।
সম্প্রতি ইয়ুথ কি আওয়াজ নামে একটি ওয়েব পোর্টালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেশ ইতিবাচকভাবে সরকারের কাছে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার পথ দেখালেন এই চিকিৎসক।
এখন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিন সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর হার। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সরকার কিভাবে চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত তরুণ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এই যুদ্ধে শামিল করবে তার ওপরই নির্ভর করছে লড়াইয়ে হার-জেতার বিষয়টি। ডক্টর শেঠি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে সরকারের কাছে রাখলেন সুচিন্তিত পরামর্শ। একই সঙ্গে এটাও জানালেন যে পিপিই, ভেন্টিলেটর থেকে অক্সিজেন ফোকাসটা এখন ধীরে ধীরে অন্য জায়গায় যেতে চলেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহ খবরের হেডলাইনটা কি হবে তাও বলে দিচ্ছেন এই প্রখ্যাত চিকিৎসক।
গোটা দেশ যখন একজোট হয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে ঠিক সেই সময় কেন এমন ভয়ঙ্কর কথা শোনালেন ডক্টর শেঠি। ভয়ঙ্কর কথা শোনানোর পিছনে তিনি বৈজ্ঞানিক কারণটাও বলে দিলেন।
আমাদের মত বড় দেশে যেখানে প্রতিদিন এত সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন সেখানে কিভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব? এই চিন্তায় যখন ঘুম উড়ছে দেশের বিশেষজ্ঞদের সেখানে দেশের বাস্তব চিত্রটাও তুলে ধরলেন এই প্রবাদপ্রতিম চিকিৎসক।
প্রতিদিন যত রোগী সংক্রমিত হন তাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ রোগীর আইসিইউ বেড লাগে। তাদের বয়স যাই হোক না কেন। এখনো পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৮০ থেকে ৯০ হাজার আইসিইউ বেড রয়েছে। কিন্তু যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে সেখানে প্রতিদিন আইসিইউ বেড লাগবে ৮০ হাজার।
এই যেখানে দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অবস্থা সেখানে কোভিড এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছেন বলে মনে করছেন না ডাক্তার শেঠি।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্রটা কি এতটাই হতাশাব্যঞ্জক? সমাধানের কি কোনো পথ নেই? কি পন্থা অবলম্বন করলে কোভিড বাগে আসবে? এই প্রশ্নের উত্তরে দেশের এই বিখ্যাত হট সার্জেন অত্যন্ত সুন্দরভাবে বাস্তবোচিত পদ্ধতিতে সমাধান সূত্র দিলেন সরকারকে বিবেচনা করার জন্য।
ভারতে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে দু’লক্ষ নার্স ও দেড় লক্ষ ডাক্তার নিয়োগ করতে হবে।
এত অল্প সময়ে কোথায় মিলবে এত ডাক্তার? আর কোথায় বা পাওয়া যাবে এত নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী?
তারও সুচিন্তিত সমাধানের পথ দেখালেন এই চিকিৎসক। বললেন, দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক, নার্সিং কাউন্সিল ও মেডিকেল কমিশন একযোগে সমস্ত ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র-ছাত্রীরা যারা পাশ করে এখনো পর্যন্ত হাতে শংসাপত্র পাননি বলে ঘরে কিংবা লাইব্রেরীতে বসে আছেন তাদেরকে এই কাজে সামিল করতে হবে। এক বছর কোভিড আইসিইউতে কাজ করার পরেই ছাত্র-ছাত্রীরা হাতে পাবেন শংসাপত্র এবং সেক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতেও সরকার তাদের জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আসন সংরক্ষিত করতেই পারে। পৃথিবীতে একমাত্র ভারতই পারে এত অল্প সময়ে এত ওয়ার্কফোর্স তৈরি করতে।
এ তো গেল নার্সদের ক্ষেত্রে সমাধানের পথ। কিন্তু দেশের করোনা যুদ্ধে যে বিপুল পরিমাণ ডাক্তারের প্রয়োজন সে ডাক্তার আসবে কোথা থেকে? সেই প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর দিলেন নারায়ণা হৃদয়ালয় চেয়ারম্যান ডাক্তার দেবি শেঠি।
স্বাস্থ্য কমিশন ও ন্যাশনাল বোর্ড অফ এক্সামিনেশনের কাছে ডক্টর শেঠি পরামর্শ দিয়েছেন এদেরকেও কাজে লাগানো হোক তবেই জেতা যাবে কোভিডের যুদ্ধ।
ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাবের দিকটি যত তাড়াতাড়ি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পূর্ণ করতে পারা যাবে তত তাড়াতাড়ি এত বড় দেশে কোভিড মোকাবিলায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
এখন কেন্দ্রীয় সরকার ডাক্তার শেঠির এই পরামর্শ গ্রহণ করে কি না সেটাই দেখার বিষয়।
ব্যুরো রিপোর্ট