Trending
আন্দামানের পর এবার কেন্দ্রের নজরে নিকোবর
আরও এক মেগা প্রোজেক্টের পরিকল্পনা
৭২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনার ঘোষণা
নিকোবর উন্নয়নে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিবেশবিদরা
কিন্তু কেন?
সিঙ্গাপুরকে সরিয়ে সাগর বানিজ্যে ছড়ি ঘোরাবে ভারত। পরিকল্পনামাফিক ঘুঁটি সাজাচ্ছে দিল্লি। এই মুহূর্তে চর্চায় গ্রেট নিকোবর প্রোজেক্ট। আন্দামানের দক্ষিণতম বিন্দুর ছোট্ট এই দ্বীপকে ঢেলে সাজাতে চাইছে মোদী সরকার। হঠাৎ নিকোবর নিয়ে এত হইচই কেন? ভারতের কোন লাভের লাভ হবে কি?
রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিমধ্যেই একটা দুর্দান্ত উদাহরণ তৈরি করেছে ভারত। কিন্তু ভারতের বেশিরভাগ রপ্তানিই হয় সিঙ্গাপুর, কলম্বো এবং ক্ল্যাং বন্দর মারফৎ। যে কারণে, প্রতি বছর প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা লস করে ভারত। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ক্ষতি আটকানোর কী কোন উপায় নেই? আলবাৎ আছে। আর সেই জন্যই গ্রেট নিকোবর প্রোজেক্ট প্ল্যান করেছে কেন্দ্র। যার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা। স্ট্র্যাটেজিক্যালি এবং ইকোনমিক্যালি এটা নাকি মোদী সরকারের আরও একটা মাস্টারস্ট্রোক। তাহলে কিছু মানুষ কেন বলছেন যে নিকোবর ধ্বংস হওয়া এখন মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা? জানব আজকের প্রতিবেদনে।
মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মাঝের মালাক্কা প্রণালীর পশ্চিম দিকে রয়েছে দ্য গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড। যে মালাক্কা প্রণালী হল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত বাণিজ্যিক জলপথ। বঙ্গপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে যেসব পণ্যবাহী জাহাজ যাতায়াত করে, তাতে ফুয়েল ভরার জন্য সিঙ্গাপুর এবং কলম্বো বন্দরের ওপর নির্ভর করেন ব্যবসায়ীরা। খনিজ তেলবাহী ৫০ শতাংশ জাহাজই সিঙ্গাপুর হয়ে যাতায়াত করে। গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ডে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট তৈরি করা গেলে এই নির্ভরতা কমানো যাবে। বেসিক্যালি পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে পণ্যবাহী জাহাজ ভারত মহাসাগরে এসে হয় শ্রীলঙ্কার পাশ দিয়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে যায় অথবা মালাক্কা প্রণালী হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চলে যায়।
কাজেই ভারতের কাছে নিকোবর একটা ট্রাম্প কার্ড। আর তাছাড়া এখানে উন্নতমানের ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট তৈরি করা গেলে সিঙ্গাপুর বন্দরের সঙ্গে টেক্কা দেবে ভারত। আরও একটা বিষয়। ছোট এবং মাঝারি মাপের জাহাজ তৈরি করতে চট্টগ্রাম বন্দরকে এখন এক নামে চেনে গোটা বিশ্ব। গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ডে জাহাজ তৈরির শিল্প তৈরি করতে পারলে বাংলাদেশকেও টেক্কা দিতে পারবে দেশ। আর একবার সেই প্রোজেক্ট শুরু করা গেলে নিকোবরের দৌলতে ভারতের আয় হতে পারে প্রায় ২০ কোটি টাকা। তবে, ভবিষ্যতে সেখানে ট্যুরিজম, হোটেল অ্যান্ড হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিকে বুস্ট আপ করা সহ আরও একগুচ্ছ পরিকল্পনাও রয়েছে ভারত সরকারের।
ভারতের কাছে ট্রাম্প কার্ড আছে দেখে চিন যেকোনো মুহূর্তে আগ্রাসন চালাতেই পারে। কিন্তু গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ডে বায়ুসেনার একটি এয়ারকন্ডিশন থাকায় সেসব দিক থেকে ভারত নিশ্চিন্ত। সুতরাং স্ট্র্যাটেজিকালি বা ইকোনোমিক্যালি গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড যে মোদী সরকারের একটা মাস্টারস্ট্রোক, সেটা ক্লিয়ার। কিন্তু এখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন পরিবেশবিদরা। তাদের বক্তব্য, পরিকল্পনা করেই নিকোবরকে ধ্বংস করার পথে নেমেছে ভারত সরকার। ঠিক কেন বিরোধিতা করছে তারা?
উন্নয়ন আর বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘুঁটি সাজাতে গিয়ে নিকোবরের জীববৈচিত্র্যের কথা নাকি মাথা থেকে বের করে দিয়েছেন মোদী সরকার, বলছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। গ্রেট নিকোবর আইল্যান্ড হচ্ছে, ফ্লোরা, ফনা, প্রবাল প্রাচীর, রেইন ফরেস্ট ইত্যাদি প্রচুর জীব বৈচিত্র্যে সাজানো। সেখানে রয়েছে শিম্ফেন সহ আরও কিছু উপজাতির বসবাস। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট হলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে জনবসতি বাড়বে। বাইরে থেকে মানুষ এসে সেখানে ভিড় জমালে সেখানকার অর্থনীতির জন্য তো পজিটিভ দিক অবশ্যই। কিন্তু এর ফলে নষ্ট হতে পারে গ্রেট নিকোবরের নিজস্ব সৌন্দর্য। যেটা বাস্তুতন্ত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। আর তাছাড়াও ভূমিকম্প, সুনামি, টেক্টনিক ভোলাটিলিটির দিক থেকে দেখতে গেলে এই প্রোজেক্ট কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদরা।
তবে, নানা বাধাবিপত্তি সামলে গ্রেট নিকোবর প্রজেক্ট একজিকিউট করার জন্য সবুজ সংকেত তো পাওয়া গিয়েছে। আশা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই একটা ম্যাসিভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্টের সাক্ষী হবে ভারত। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক বন্দর সিঙ্গাপুর বা কলম্বোকে টেক্কা দিতে পারবে কি না, সেটা সময়ই বলবে। আপনারা দেখতে থাকুন বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ