Science & Technology
ধরুন, আপনি কোন একটা কফি শপে প্রথমবারের জন্য কফি খেতে গেলেন। সেই সময় ঐ কফি শপে বাজছে একটা গান। কফি খেতে খেতে ঐ গানের সুর যখন আপনার কানে ভেসে এলো, তখন মনে হবে আপনি যেন এই কফি শপে আগেও এসেছেন। কফি খেতে খেতে এই গানটাই আপনি শুনেছেন। মানে, একই ঘটনা আপনার সঙ্গে ঘটছে একেবারে হুবহু। বিষয়টা যে মুহূর্তে আপনি রিয়ালাইজ করবেন, ঠিক তারপরেই আপনার মধ্যে একটা অস্বস্তি তৈরি হবে। তখনই আপনি নানান অলৌকিক বিষয়কে হাজির করাতে শুরু করবেন আপনার মনে। যার সঙ্গে বাস্তবিক এসবের কোন সম্পর্কই হয়তো নেই। এমন অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি যদি আপনি হয়ে থাকেন, তাহলে ভয় পাবেন না। কারণ এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে পারেন যে কেউ। আর একেই বলা হয়- দেজা ভ্যু। স্বাগতম বিজনেস প্রাইম নিউজে। আজ আপনাদের সঙ্গে এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যার সঙ্গে আমি-আপনি কমবেশি কোথাও না কোথাও, কখনো না কখনো এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছেন। আসুন, আজকের প্রতিবেদনে বলব, হোয়াট ইজ দেজা ভ্যু।
দেজা ভ্যু, এটি একটি ফরাসি শব্দ। যার অর্থ, আপনি আগে যা দেখেছেন বা দেখে ফেলেছেন। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, দেজা ভ্যু আপনার মগজের ঠিক সেই ঘটনাকে তুলে ধরে যা দেখলে আপনার মনে হবে আপনি এই ঘটনার সঙ্গে পূর্ব পরিচিত। কিন্তু কোনভাবেই আপনার মেমোরি সেই ঘটনাটি কবে এবং কোথায় ঘটেছিল, সেই বিষয়ে কোনরকম খোঁজ করতে পারছে না। কিছু কিছু তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, দেজা ভ্যু কোন অলীক ঘটনা নয়। বরং ৭০% মানুষের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে থাকে। দেজা ভ্যু শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ফরাসি মনোবিদ এমিল বোয়ারেক। প্রথমেই বলে রাখি, দেজা ভ্যু কিন্তু কোন মনের অসুখ নয়। মনে করা হয়, সুস্থ, স্বাভাবিক যেকোন মানুষ দেজা ভ্যু-র মতন অভিজ্ঞতা মুখোমুখি হতে পারেন। যদিও কোন কোন মনোবিদ বলে থাকেন, যারা খুব ঘুরতে ভালোবাসেন বা যাদের খুব সিনেমা দেখার শখ, তাঁরা দেজা ভ্যু-র মতন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে পারেন বেশি। তবে এখানেই একটা প্রশ্ন। কেন দেজা ভ্যু হয়ে থাকে? সত্যি বলতে গেলে, দেজা ভ্যু নিয়ে বহু মনোবিদ নানান রকম তত্ত্ব, ধারণা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। কিন্তু কেউই দেজা ভ্যু নিয়ে সঠিক কোন সংজ্ঞা তুলে ধরতে পারেন নি। কিন্তু কি কি তত্ত্ব উঠে আসে দেজা ভ্যু নিয়ে?
পুনর্জন্মঃ
অনেকেই মনে করেন, দেজা ভ্যু পুনর্জন্মেরই ফলাফল। পুনর্জন্মের কোন ঘটনা। যা হঠাৎ করে এই জন্মে ফিরিয়ে আনে গেল জন্মের স্মৃতি। অর্থাৎ, অনেকে মনে করেন, মানুষ মৃত্যুর পর যখন ফের জন্মগ্রহণ করে, তখনই গেল জন্মের কিছু স্মৃতির আভাস থেকে যায় এই জন্মে। দেজা ভ্যু সেই কারণ, যা তুলে আনে এই স্মৃতিকে।
ড্রিম বেসড থিওরিঃ
পুনর্জন্ম ছাড়াও দেজা ভ্যু-র জন্য ড্রিম বেসড থিওরিকেও তুলে আনা হয়। অনেকে মনে করেন, দেজা ভ্যু হওয়ার আসল কারিগর হচ্ছে আমাদের স্বপ্ন। দেখুন, আমরা যা স্বপ্ন দেখি তার ৯০% মতন ভুলে যাই। এবার ধরুন আপনি একটা স্বপ্ন দেখলেন, যেখানে আপনি আপনার পরিবারের সঙ্গে কোথাও ঘুরতে গেছেন। ঘুম ভাঙার পর সেই স্বপ্নের কথা আপনার আর মাথায় রইল না। কিন্তু আপনি পরে যখন সত্যিই কোথাও ঘুরতে গেলেন, তখন সেই ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্ন কোনভাবে আপনার সামনে চলে এলো। আর আপনার মনে হল, আপনি হয়ত এই জায়গায় আগেও এসেছেন।
গ্লিচ থিওরিঃ
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, টাইম ইজ অ্যান ইলিউশন। গ্লিচ থিওরি বলছে, এই সময় আসলে একটি ভ্রম। কারণ একটি মানুষ সে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ- এই তিন সময়কেই একসঙ্গে করে বেঁচে থাকে। গ্লিচ থিওরি বলছে, দেজা ভ্যু আসলে স্বপ্নে দেখা কোন ঘটনার বিষয়ই নয়। যেহেতু একটি মানুষ অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে বেঁচে থাকেন, তাই দেজা ভ্যু হয়ে থাকে। এখন দেখা বা জানা কোন ঘটনাকে অকস্মাৎ আগের বলে মনে হয়। আর এটাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে কোন না কোনভাবে অ্যাফেক্ট করতে পারে।
এগুলো ছাড়াও সাইকোলজির তত্ত্ব বলছে, দেজা ভ্যু আসলে মেমোরি মিসম্যাচ ছাড়া আর কিছুই নয়। দেখুন আমাদের মধ্যে দু’ধরণের মেমোরি কাজ করে। শর্ট টার্ম মেমোরি এবং লং টার্ম মেমোরি। শর্ট টার্ম মেমোরির মধ্যে লিমিটেড কিছু ক্যাপাসিটি থাকে। ফলে এই মেমোরির মধ্যে যা আসে, সেটা আবার চটজলদি গায়েব হয়েও যেতে পারে। কিন্তু লং টার্ম মেমোরির সঙ্গে এমন কিছু হয় না। কারণ শর্ট টার্ম মেমোরিতে হারিয়ে যাওয়া ডেটা লং টার্ম মেমোরিতে পাকাপাকিভাবে থেকে যায়। খেয়াল রাখবেন, লং টার্ম মেমোরির মধ্যে আপনার জীবনের পুরো ডেটা স্টোর করে রাখা হয়। দেজা ভ্যু সেই ঘটনাই যখন কোন অভিজ্ঞতা হঠাৎ করেই শর্ট টার্ম মেমোরিতে না-গিয়ে লং টার্ম মেমোরিতে স্টোর হয়ে যায়। আর এটাই আমাদের মধ্যে ধারণা তৈরি করায় যে, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমি বা আপনি যা দেখছি, আসলে সেটা পূর্বে দেখা কোন ঘটনা।
তবে আবার দেজা ভ্যু-কে অনেকেই প্যারানরমাল ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন। অনেকেই মনে করেন, ভূত-প্রেত-আত্মা বা জীনের সঙ্গে এই বিষয়গুলির খুব গভীর কোন কম্বিনেশন রয়েছে। অনেকেই একে আবার সিক্সথ সেন্স বা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলতে পছন্দ করেন। আর অনেকেই আবার দেজা ভ্যু-র সঙ্গে খুঁজে পান প্যারালাল ইউনিভার্সের তত্ত্ব। বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী মিশিও কাকু অবশ্য দেজা ভ্যুর সঙ্গে প্যারালাল ইউনিভার্সের একটা সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন।
আসলে, মন এই বিষয়টাই খুব গভীর। আর মনের সঙ্গে মগজের সম্পর্ক আরও গভীর। যার অনেকটাই এখনো বিজ্ঞানীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেই মন আর মগজেরই এক অন্যরকম খেলা হল এই দেজা ভ্যু। দেজা ভ্যু-র যদি সংজ্ঞা জানতে চান, তাহলে সেভাবে কোন কিছুই নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। শুধু এইটুকু বলা যেতে পারে, দেজা ভ্যু আসলে মন এবং মগজের সঙ্গে যুক্ত এক দারুণ রহস্য, যা মনোবিদ থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন এবং কৌতূহলের মাত্রাকেই বাড়িয়ে তুলছে। আপনিও কি দেজা ভ্যু-র শিকার? কোনদিন এমন কোন ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন?
বিজনেস প্রাইম নিউজ।
জীবন হোক অর্থবহ